Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘স্বেচ্ছাচার’ মেনেই নিয়োগ অ্যানাস্থেটিস্ট

হাসপাতালের দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট চুক্তিভিত্তিক ‘ফুলটাইমার’ হিসেবে নিযুক্ত। সাপ্তাহিক একটি ছুটির দিন বাদে বাকি দিন তাঁদের হাসপাতালেই কাজ করার কথা। কিন্তু অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা ডিউটি করছেন ইচ্ছেমতো, নিজেদের সময়ানুযায়ী! তাঁরা আসেন সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

হাসপাতালের দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট চুক্তিভিত্তিক ‘ফুলটাইমার’ হিসেবে নিযুক্ত। সাপ্তাহিক একটি ছুটির দিন বাদে বাকি দিন তাঁদের হাসপাতালেই কাজ করার কথা। কিন্তু অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা ডিউটি করছেন ইচ্ছেমতো, নিজেদের সময়ানুযায়ী! তাঁরা আসেন সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন। মেরেকেটে সপ্তাহে ছ’-সাত ঘণ্টা ডিউটি করেন! অথচ, বেতন নেন ‘ফুলটাইমার’-এর। অ্যানাস্থেটিস্ট পাওয়া মুশকিল, এই যুক্তিতেই এমন গা-জোয়ারি মেনে নেওয়া হচ্ছে বলে যুক্তি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অ্যানাস্থেটিস্ট না-থাকলে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। সাধারণ প্রসবের সময়েও এক জন অ্যানাস্থেটিস্টকে থাকতে হয়, যাতে প্রসূতির কোনও শারীরিক জটিলতা তৈরি হলে প্রয়োজনে সিজার করা যায়। অ্যানাস্থেটিস্ট না থাকলে স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকিও কেউ নিতে চান না। সেটাই হচ্ছে উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেলা দুটোর পরে এবং কার্যত শনি-রবিবার একটিও অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। অন্যান্য কাজের দিনেও অ্যানাস্থেটিস্টরা যে দু’-তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দিচ্ছেন, তার ভিতরেই অস্ত্রোপচার শেষ করতে হচ্ছে। ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। এমনকী, আচমকা কোনও প্রসূতি ইমার্জেন্সিতে এসে গেলে তাঁকে অনেক সময়েই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, আউটডোরে যে আসন্নপ্রসবারা দেখাতে আসছেন, তাঁদের হাতে একটা নির্দিষ্ট দিন ও নির্দিষ্ট সময় লেখা স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই সময়ে অ্যানাস্থেটিস্টরা থাকবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরপর সকলের সিজার করে দিয়ে বেরিয়ে যাবেন! অর্থাৎ, যাঁদের হয়তো স্বাভাবিক প্রসব হত, অ্যানাস্থেটিস্টের সময়ানুযায়ী চলতে গিয়ে তাঁদেরও সিজার হচ্ছে। প্রসব স্বাভাবিক হবে, না কি সিজার, তা ঠিক করার সময়টুকুও অ্যানাস্থেটিস্টরা দিচ্ছেন না।

রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর যেখানে স্বাভাবিক প্রসবে জোর দিচ্ছে, সেখানে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই হাসপাতালে ২১১ জনের সিজার হয়েছে। স্বাভাবিক প্রসব মাত্র ২৯ জনের। হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অ্যানাস্থেটিস্টরা স্বাভাবিক প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা না করে
গণহারে সিজার করতে বাধ্য করছেন!’’

যে দু’জন অ্যানাস্থেটিস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা হলেন দেবজিৎ দাস ও গৌতম সরকার। দেবজিৎবাবুকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, ‘‘সুপার আমাদের কথা দিয়েছিলেন, ইচ্ছেমতো ডিউটি করতে পারব। একমাত্র সেই শর্তেই রাজি হয়েছি। বাইরে আমাদের কাজের অভাব নেই।’’ গৌতমবাবু অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি।

সুপার সমীরকুমার মাইতির বক্তব্য, ‘‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশেষ করে অ্যানাস্থেটিস্টের খুব আকাল। যাঁরা আছেন, তাঁরাও অনেক বেশি টাকায় বেসরকারি জায়গায় যুক্ত। সরকারের ৫৫-৫৬ হাজার টাকা বেতনে এঁরা থাকবেন কেন? তাই বাধ্য হয়ে ওঁদের শর্তে রাজি হয়েছি।’’ একই বক্তব্য রাজ্য ইএসআই-এর অধিকর্তা মৃগাঙ্কশেখর রায়ে। ‘‘বিজ্ঞাপন দিয়েও অ্যানাস্থেটিস্ট মিলছে না। যে ক’জন এসেছেন, শর্ত না মানলে তাঁরাও চলে যাবেন। তখন তো যতটুকু কাজ হচ্ছে, তা-ও হবে না।’’— বলেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সরকার যেখানে কঠোর ভাবে রোগী প্রত্যাখানের বিরুদ্ধে, সেখানে ২০১৬ সালের ৩০ অগস্ট উলুবেড়িয়া ইএসআই-এর সুপার একটি নির্দেশিকায় জানান, স্ত্রীরোগ বিভাগে চিকিৎসক কম আছে বলে দুপুর দুটোর পরে এবং ছুটির দিনে আসন্নপ্রসবাদের ভর্তি নিয়ন্ত্রিত হবে। দুটোর আগে কেউ এলে আগে স্ত্রীরোগ বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানাতে হবে। তার পরে ভর্তি করা হবে কি না, সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্ত্রীরোগ বিভাগে এখন চিকিৎসক বেড়ে চার জন হলেও এই নিয়ম বদলায়নি। এখন অ্যানাস্থেটিস্টের অভাব দেখানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মানিকতলা, শিয়ালদহ, বালিটিকুরি, গৌরহাটির মতো রাজ্যের অন্য ইএসআই হাসপাতালগুলিতে কী ভাবে চুক্তিভিত্তিক ‘হোলটাইমার’ চিকিৎসকেরা বিনা শর্তে ডিউটি করছেন? অন্য ইএসআই-কর্তাদের মতে, হাসপাতাল প্রশাসন কৌশলের সঙ্গে সব নিয়ন্ত্রণ করলেই পরিষেবা পাওয়া যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anesthesia Anesthesist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE