Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলে এক দিনে অনুদান নগদ ২ কোটি

এক দিনে অনুদান মিলেছে দু’কোটি! তা-ও আবার নগদে! তৃণমূলের দাখিল করা হিসাবপত্রের নথি ঘেঁটে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিবিআই। বুধবার ‘এবিপি আনন্দে’ এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরেই একযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এই টাকার উৎস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

এক দিনে অনুদান মিলেছে দু’কোটি! তা-ও আবার নগদে!

তৃণমূলের দাখিল করা হিসাবপত্রের নথি ঘেঁটে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিবিআই। বুধবার ‘এবিপি আনন্দে’ এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরেই একযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এই টাকার উৎস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে তৃণমূলের কাছ থেকে তাদের আয়ব্যয়ের হিসেব তলব করেছিল সিবিআই। কারণ অভিযোগ উঠেছিল, সারদার টাকা ঘুরপথে তৃণমূলের তহবিলে গিয়েছে। সিবিআই প্রথমে নোটিস পাঠায় মুকুল রায়কে। কিন্তু তখন তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে মুকুল সিবিআই-কে জানিয়ে দেন, কোনও নথি দেওয়ার অবস্থায় তিনি নেই। এর পর সিবিআই নোটিস পাঠায় তৃণমূলের নতুন সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে। ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আয়ব্যয়ের সব হিসেব জমা দিতে বলা হয় তাঁকে।

সেই নোটিস পেয়ে মমতা হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘সব নোটিস দিস্তা করে দিল্লি পাঠিয়ে দেব।’ কিন্তু পরের দিনই সুর পাল্টে ফেলেন তিনি। ৯ এপ্রিল সিবিআই দফতরে গিয়ে নথিপত্র জমা দিয়ে আসেন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। সে দিনই নথিতে চোখ বুলিয়ে সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা বলেছিলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এই হিসেব ধোঁয়াশায় ভরা।’’ এর পর সারদার তদন্তকারী দলে থাকা চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নথিপত্র খতিয়ে দেখেন। তাতেই ধরা পড়ে এমন গোলযোগ।

আয়কর দফতরকে তৃণমূল যে হিসেব জমা দেয়, তা থেকেই জানা গিয়েছিল, চার বছরে অনুদান খাতে দলের আয় বেড়েছে একশো গুণ। ২০১০-’১১ সালে এ বাবদ তৃণমূল পেয়েছিল ১০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা। আর ২০১৩-’১৪ সালে তা বেড়ে হয়ে যায় সাড়ে নয় কোটি টাকা। এ বার সিবিআই-কে দেওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই বিপুল পরিমাণ অনুদানের অধিকাংশই এসেছে নগদে। এমনকী, ২০১৪-র ২৭ মার্চ সবর্ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অ্যাকাউন্টে দু’দফায় জমা পড়েছে এক কোটি করে মোট দু’কোটি টাকা। ২ থেকে ১০ লক্ষ টাকাও জমা পড়েছে একাধিক বার। সবই নগদে। যদিও আইন অনুসারে ২০ হাজারের বেশি টাকা নগদে আদানপ্রদান করা উচিত নয় বলেই আইনজীবী মহলের একাংশের বক্তব্য। তৃণমূলের তহবিলে এই টাকা সারদা-সহ বিভিন্ন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকেই এসেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘সারদা-সহ বিভিন্ন চিটফান্ডের টাকা ওরা সরিয়েছে। তৃণমূলের তহবিলে ওই টাকা গিয়েছে।’’ যাঁর দায়ের করা মামলার জেরে সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, সেই কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এবং সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও এই টাকা উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এক দিনে এত টাকা কোথা থেকে এল, আর কেনই বা তা নগদে জমা পড়ল? তৃণমূল অবিলম্বে বিষয়টি পরিষ্কার করুক।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সুব্রত বক্সীকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কারা কী দেখাচ্ছে তার জন্য আমি কি কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য বাজারে ঘুরছি!’’ কিন্তু একান্ত আলোচনায় তৃণমূল নেতারা বল ঠেলছেন মুকুল রায়ের কোর্টে। সিবিআই-কে নথি জমা দেওয়ার সময়ই কৌশলে মুকুলকে কাঠগড়ায় তুলেছিল দল। গোয়েন্দা সংস্থাকে তারা বলেছিল, এই সব নথি যে আসল, সে ব্যাপারে দল নিশ্চিত নয়। কোনও গরমিল থাকলে সিবিআই যেন মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘সব জানে মুকুল রায়।’’

আর মুকুলের বক্তব্য, দলের জেলা কমিটি থেকে টাকা আসার পরে তা ভেঙে ভেঙে ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়। বড় অঙ্কের টাকা চেকে জমা দেওয়া হয়েছে। আর ছোট অঙ্কের টাকা নগদে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের দেওয়া হিসেব তো বলছে ২ কোটি টাকাও জমা দেওয়া হয়েছে নগদে? এর ব্যাখ্যা দেননি মুকুল। তবে তৃণমূলের আর এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘এই হিসেব তো আমরা আয়কর, নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছি। তারা তো কোনও প্রশ্ন তোলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE