প্রতীকী ছবি।
প্রায় অর্ধযুগ আগে, ২০১২ সালে দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনার পর থেকে প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার নির্দেশ দিয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। ছাত্রীদের আত্মরক্ষায় কী ধরনের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে, আদৌ নেওয়া হয়েছে কি না, এ বার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছে তা জানতে চাইল ইউজিসি।
মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অঙ্গ হিসেবেই সুরক্ষার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশে। সেই নির্দেশ আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা জানতে চাইছে ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ছবিটা ঝাপসা, হতাশাব্যঞ্জক। ছাত্রীদের আত্মরক্ষামূলক কোনও কার্যক্রম তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও চালু হয়নি বলে স্বীকার করছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজগোপাল ধরচক্রবর্তী। তবে তিনি আশাবাদী, ইউজিসি-র তরফে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হলে তাঁরাও ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মসূচি হাতে নিতে পারবেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী সোমবার বলেন, ‘‘ছাত্রীদের জন্য এই ধরনের প্রশিক্ষণ খুবই প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তা চালু হয়নি।’’
আরও পড়ুন: গৌরব যেন দু’টি বছর ক্যাম্পাসে না-ঢোকে, চান শিক্ষক
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টস অরুণ মাইতি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিমে (এনএসএস) আত্মরক্ষামূলক ক্লাস হয়। কিন্তু ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম দোলই জানাচ্ছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আত্মরক্ষার কোনও কর্মসূচি নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পার্থ লাহিড়ী জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ক্যারাটে শেখার ব্যবস্থা আছে। পড়ুয়াদের প্রথম বর্ষে ‘ইনডাকশন প্রোগ্রাম’-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, তা বোঝানো হয় সেখানেই। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরী জানান, ছাত্রীদের আত্মরক্ষার তালিম দেওয়ার ব্যবস্থা ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগে।
ছাত্রীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত প্রশ্ন ছাড়াও ইউজিসি-র নির্দেশিকায় জানতে চাওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতি ও মূল্যবোধের শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে কি না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নীতি-মূল্যবোধ শিক্ষারও আলাদা কোনও ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।
শিক্ষাজগতের একাংশের প্রশ্ন, শিক্ষার মূল কথাই তো নীতি-দুর্নীতির বোধ, মূল্যবোধ জাগ্রত করা। যাঁরা স্কুলের বিভিন্ন স্তরে সেই শিক্ষার নানান ধাপ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার প্রাঙ্গণে পৌঁছেছেন, তাঁদের মূল্যবোধ শেখানোর পৃথক ব্যবস্থা বাহুল্য নয় কি? শিক্ষা শিবিরের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, শিক্ষার তত্ত্বগত সংজ্ঞা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। উচ্চশিক্ষার্থীছেলেমেয়েদের মূল্যবোধের পাঠ নেওয়া আছে, এটাই সাধারণ ধারণা। কিন্তু বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের গালেও পড়ছে উচ্চশিক্ষার্থীর চড়থাপ্পড়! সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের এক ছাত্রনেতার হাতে এক শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনাকে ঘিরে নিন্দা-সমালোচনা-বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে। উচ্চশিক্ষার্থীদেরও পৃথক ভাবে নীতি-মূল্যবোধের শিক্ষার প্রয়োজন কতটা, এই ধরনের ঘটনাই সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের ওই অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy