Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চাপের মুখে টাকা ফেরত তৃণমূলের

অস্বস্তিতে পড়ে রীতিমতো বৈঠক ডেকে ক্যানসার আক্রান্ত বধূ পিঙ্কি বিবির পরিবারকে টাকা ফিরিয়ে দিল তৃণমূল। গীতা়ঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ওই ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার পিঙ্কির বাবা বদিরুদ্দিন সাহাকে পুরো টাকাটাই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পিঙ্কি বিবি। — নিজস্ব চিত্র।

পিঙ্কি বিবি। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

অস্বস্তিতে পড়ে রীতিমতো বৈঠক ডেকে ক্যানসার আক্রান্ত বধূ পিঙ্কি বিবির পরিবারকে টাকা ফিরিয়ে দিল তৃণমূল। গীতা়ঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ওই ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার পিঙ্কির বাবা বদিরুদ্দিন সাহাকে পুরো টাকাটাই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মেয়ের চিকিত্‌সার জন্য টাকা ফেরত চেয়ে গত ২৩ জুন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছিলেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের রাজারবাগান এলাকার বাসিন্দা বদিরুদ্দিন। কিন্তু সুরাহা হয়নি। মঙ্গলবার আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হতেই টনক নড়ে তৃণমূলের জেলা নেতাদের। এ দিন সকালে তড়িঘড়ি দলের সদর ব্লক নেতৃত্বকে মেদিনীপুরে বৈঠকে ডেকে পাঠান তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। যে দুই বুথ সভাপতি টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই নবি খান এবং নজরুল গুড়াকেও ডেকে পাঠানো হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ ও আশিস চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে বৈঠকে তীব্র ভর্ত্‌সনা করা হয় তোলাবাজিতে অভিযুক্ত দুই নেতাকে। বৈঠকে ডাকা হয় পিঙ্কির বাবা বদিরুদ্দিনকেও। সেখানেই তাঁকে ২৫ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বদিরুদ্দিন বলেন, “মেয়ের চিকিৎসায় অনেক খরচ। টাকা ফেরত পাওয়ায় সুবিধা হল।”

সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নামে টাকা আদায়ের কথা অবশ্য গোড়া থেকেই অস্বীকার করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিনও তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবু বলেন, “টাকাপয়সা সংক্রান্ত স্থানীয় সমস্যা ছিল। তা মিটে গিয়েছে।” দলের কেউ এতে জড়িত বলে মানতে চাননি দীনেনবাবু। আর অভিযুক্ত দুই বুথ সভাপতির বক্তব্য, ‘‘মেদিনীপুরে দলীয় বৈঠকে গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু বলার নেই।’’

বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, টাকা ফেরত দিয়ে কার্যত দলের তোলাবাজির কথাই স্বীকার করে নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের মন্তব্য, ‘‘সরকারি প্রকল্পগুলো এখন তৃণমূল নেতাদের রোজগারের জায়গা। এ ক্ষেত্রে ফাঁপড়ে পড়ে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে ওরা।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, ‘‘তোলাবাজিতে বামেদের যোগ্য উত্তরসূরি তৃণমূল। খবরের কাগজে এই বিষয়টা সামনে আসায় মুখরক্ষা করতে তৃণমূল টাকা ফিরিয়েছে।’’

মেদিনীপুর সদর ব্লকের রাজারবাগানেই পিঙ্কির বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি। বাবা বদিরুদ্দিন এবং স্বামী সাহারাফুল মণ্ডল দু’জনেই বিড়ি শ্রমিক। বছর বত্রিশের পিঙ্কি দেড় বছর ধরে জরায়ুর ক্যানসারে ভুগছেন। এখন তিনি বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে ভর্তি। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে পিঙ্কির নামে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নাম করে এলাকার দুই তৃণমূল বুথ সভাপতি নবি ও নজরুল ক্যানসার আক্রান্ত ওই যুবতীর পরিবারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা আদায় করে বলে অভিযোগ। পিঙ্কির বাবা বদিরুদ্দিন তৃণমূলের পাঁচখুরি-২ অঞ্চল সভাপতি সেলিম মল্লিকের কাছে গেলেও তিনি কিছু ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ। তারপর বদিরুদ্দিন তৃণমূল ব্লক নেতৃত্বের কাছে যান। ব্লক নেতৃত্ব মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি গনি ইসমাইল মল্লিককে দায়িত্ব দেন যাতে ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেও টাকা ফেরত না পাওয়া তৃণমূলের জেলা সভাপতি, জেলা কার্যকরী সভাপতিদের চিঠি দেন পিঙ্কির বাবা।

দলের এক সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, সকলের উপরেই নজর রাখা হচ্ছে। কারও কাজকর্মে মানুষের কাছে ভুল বার্তা গেলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE