পাইপ ফাটিয়ে জল চুরি হচ্ছে। সেই জলে চাষের কাজ হচ্ছে। এ বার তাই ‘জলচোর’ ধরতে পাহারাদার নিয়োগ করবে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। তাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়াটার গার্ড’।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতপিছু এক জন করে পাহারাদার থাকবে। তাঁরা গ্রামের রাস্তায় সাইকেলে ঘুরে কোনও অনিয়ম দেখলেই সেই ছবি তুলে পাঠাবেন জনস্বাস্থ্য দফতরে। এর জন্য পাহাদারদের মোবাইল দেবে দফতর। সাইকেলও দেওয়া হবে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘খবর দেওয়া-নেওয়ার অ্যাপ তৈরি হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে কী ভাবে জল চুরির খুঁটিনাটি তথ্য পাঠাতে হবে, পাহারাদারদের সেই প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।’’
অফিসারদের একাংশ বলছেন, এক শ্রেণির ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজসে গ্রামের কিছু লোক পাইপ ফাটিয়ে জল চুরি করে চাষ করছে । মূলত শীতকালে যখন খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে যায়, তখন এই প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু গার্ড নিয়োগ করে জলচুরি আটকানো যাবে?
দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে এমন পদক্ষেপ নতুন নয়। কয়েক বছর আগে মালদহে আর্সেনিকমুক্ত জল সকলের পাওয়া নিশ্চিত করতে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে তাঁদের বিরুদ্ধেই অর্থের বিনিময়ে জল পাচারের অভিযোগ ওঠে। একই ভাবে, বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে পঞ্চায়েতগুলিকে দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি! এখন জলচুরি ঠেকাতে ওয়াটার গার্ডরা কতটা কাজে আসবেন, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে দফতরের কিছু কর্তা।
তবে এই সংশয় আর অতীত অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে গার্ডদের উপরে পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করেছে জনস্বাস্থ্য দফতর। ঠিক হয়েছে, পাহারাদারদের সঙ্গে অসাধু ঠিকাদারদের ‘সখ্য’ আটকাতে জল চুরির খবর স্থানীয় থানাকে জানাতে হবে গার্ডদের। এর অর্থ, থানার অধীনে থেকেই ওয়াটার গার্ডরা জলচুরির খোঁজ করবেন। কিন্তু যদি পুলিশের কাছে কেউ সেই তথ্য গোপন করেন? ‘‘করতেই পারে। কিন্তু ধরা পড়লে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মায় চাকরিও যেতে পারে।’’— বলছেন ওই কর্তা।
সূত্রের খবর, অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিলের (বিআরজিএফ) টাকায় বাঁকুড়া ১ এবং ২, বড়জোড়া, রানিবাঁধ, হীরবাঁধ ও খাতড়া ব্লকের ৪৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহের জন্য পাইপ পাতার কাজ শেষ হয়েছে। মাটির উপর দিয়ে ওই পাইপ গিয়েছে। সেই পাইপ ফাটিয়ে জল চুরি আটকাতেই প্রথম দফায় (পাইলট প্রজেক্ট) ১৫ জন পাহারাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘‘যে নিয়মে পুলিশে ‘সিভিক ভলান্টিয়ার’ নিয়োগ হয়েছে, ওয়াটার গার্ডদের নিয়োগও সে ভাবেই হবে। তাঁরা বেতনও পাবেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের মতোই’’— বলেন এক কর্তা।
বাঁকুড়ায় এই কাজ সফল হলে অন্য জেলাতেও পাহারাদার নিয়োগ করবে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। তাদের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন জেলায় ১৯৭৯টি পাইপলাইন পাতার কাজ শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার প্রায় ৫২% মানুষ জল পাচ্ছেন। আরও ৪৭৫টি পাইপলাইন পাতার কাজ চলছে। সেগুলি শেষ হলে আরও ১০ শতাংশ মানুষ উপকৃত হবেন। ‘‘এত বিপুল পরিমাণ পাইপলাইনে নজরদারি তো চালাতেই হবে’’— বলেন ওই কর্তা।
দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি সম্পত্তি (পাইপ ফাটানো) নষ্ট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু জলচুরি করলে সাজা দেওয়ার কোনও বিধান নেই! তাই জলচুরি ঠেকাতে আইন দরকার। সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy