প্রতিবাদ: জমায়েতে সামিল খুদেরাও। বুধবার শহরে। ছবি: সুমন বল্লভ
তীক্ষ্ণ খোঁচার এক লাইন লেখা-সহ ছবিটা ছড়াচ্ছিল গত কাল থেকেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জড়িয়ে ধরে নরেন্দ্র মোদী। নীচে লেখা— ‘গোমাংস খাওয়া একটি লোককে যদি মোদী জড়িয়ে ধরতে পারেন, আপনি কেন নয়?’
রবিবার দিনভর সেই খোঁচাই টের পেলেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লি থেকে তিরুঅনন্তপুরম, কলকাতা থেকে মুম্বই, এমনকী লন্ডন, কেমব্রিজ হয়ে আমেরিকার বস্টন পর্যন্ত আমজনতা রাস্তায় নেমে কোথাও স্লোগান তুলে, কোথাও প্ল্যাকার্ড ধরে নীরবে একটি কথাই বলল— ‘ভাই, আমি তোমার দলে নেই।’ এই যে ইদানীং নিয়মিত একদল লোকের হাতে নিরীহ মানুষ গণপিটুনি খেয়ে মরছে— কোথাও গরু পাচারের ‘অপরাধ’ নিয়ে, কোথাও গরু খাওয়ার বদনাম নিয়ে, ট্রেনের কামরায় ১৬ বছরের কিশোরকেও যারা পিটিয়ে-কুপিয়ে মারছে, তারা আমার দলে নেই। আর আমিও তাদের দলে নেই। সংখ্যাগুরুর দলে টেনে এই অন্যায়ে আমাকে জড়িও না— ‘নট ইন মাই নেম!’
মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই দেশে অসহিষ্ণুতা আর হিন্দুত্ববাদীদের দাপট কী ভাবে বেড়েছে, দাদরির মহম্মদ আখলাখ থেকে আলওয়ারের পেহলু খানের গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এর পরে ট্রেনে হরিয়ানার বল্লভগড়ের কিশোর জুনেইদের মৃত্যু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে উস্কে দিয়েছিল স্লোগানটা— ‘নট ইন মাই নেম’। তথ্যচিত্র পরিচালক সাবা দেওয়ান তাঁর ফেসবুক ওয়ালেই প্রথম ডাকটা দিয়েছিলেন। দিল্লির যন্তর-মন্তরে আজ সন্ধে ৬টায় জমায়েত হয়ে নীরব প্রতিবাদে সামিল হতে বলেছিলেন বন্ধুদের। সেই প্রতিবাদই ছড়িয়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে। কলকাতা, ইলাহাবাদ, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, জয়পুর, হায়দরাবাদ, কোচি, লখনউ, পটনা, পুণে, চেন্নাই— নির্ভয়ার মৃত্যুর পরে দেশ জুড়ে সাধারণ নাগরিকের এমন অরাজনৈতিক প্রতিবাদ হয়। তার পরে সম্ভবত এই প্রথম।
প্রতিবাদ। যন্তর মন্তরের সামনে পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
বৃষ্টির কলকাতায় মধুসূদন মঞ্চ-দক্ষিণাপণ চত্বরে অজস্র সাধারণ মানুষের ভিড়ে প্রতিবাদের সুর তুললেন অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অনীক দত্তেরা। দিল্লির যন্তর-মন্তরেও বৃষ্টিভেজা জমায়েতে গিটার হাতে গান গাইলেন রাব্বি শেরগিল। মুম্বইয়ের বান্দ্রা কার্টার রোডে হাজির শাবানা আজমি, গিরিশ কারনাড, কঙ্কনা সেনশর্মা, কল্কি কেঁকলা, তিস্তা শেতলবাদেরা। বেঙ্গালুরুতে দেখা গেল ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে।
আরও পড়ুন: বেতন বন্ধ পাহাড়ে, কড়া রাজ্য
অনেকে বলছিলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ব্যস্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আর জিএসটি নিয়ে। জনতা দেখিয়ে দিল, আমরা তো আছি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy