Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Heavy Rainfall in West Bengal

গঙ্গার জলস্তর ১৮ ফুট বাড়ার শঙ্কা, ভারী বৃষ্টি আরও ৪৮ ঘণ্টা

টানা বৃষ্টিতে কলকাতার হাল ইতিমধ্যেই খারাপ হতে শুরু করেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্দর এলাকার ভূকৈলাশ রোড থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার মহাত্মা গাঁধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কোনও কোনও অংশ রীতিমতো নদীর চেহারা

চন্দ্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

চন্দ্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

একে বর্ষাকাল, তায় নিম্নচাপ দোসর। আর দুয়ের প্রভাবে জনজীবন বেসামাল!

গত শনিবার মাঝরাত থেকেই বৃষ্টি নেমেছিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। তখন তা ছিল শক্তিশালী এক ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব। সোমবার সকালে আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিল, প্রত্যাশা মতোই সেই ঘূর্ণাবর্ত এ বার নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছে। যার প্রভাবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা টানা ভারী বৃষ্টি হবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়।

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপটি এই মুহূর্তে অবস্থান করছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের উপর। খুব দ্রুত যে সে শক্তি হারিয়ে ফেলবে তারও কোনও আশা নেই। কেন না, পশ্চিম ভারতে একটি নিন্মচাপ ইতিমধ্যেই রয়েছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপটি তাই স্বাভাবিক গতিতে সরে যেতে পারবে না। আর ঢিমেতালে সরবে বলে, এ রাজ্যে বৃষ্টির দাপট আসলে বাড়তেই থাকবে। সোমবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা তাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নদী, খাল-বিলগুলি উপচে পড়ছে। বাড়ছে বড় নদীগুলির জলস্তরও। জোয়ারের সময় গঙ্গার জলস্তর প্রায় ১৮ ফুট বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: অতিবর্ষণে ঘোর বিপদের আশঙ্কা

টানা বৃষ্টিতে কলকাতার হাল ইতিমধ্যেই খারাপ হতে শুরু করেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্দর এলাকার ভূকৈলাশ রোড থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার মহাত্মা গাঁধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কোনও কোনও অংশ রীতিমতো নদীর চেহারা নিয়েছে। দমদম, পাতিপুকুর, শিয়ালদহ, বেহালা— উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই জলে জলাকার। পৌরসভার তরফে পাম্প চালিয়ে জল সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। গঙ্গার জল এ দিন সকাল থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। জোয়ারের সময় সেই জল উপচে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঢুকে পড়তে পারে। এমনিতেই আদিগঙ্গা তীরবর্তী এলাকাগুলির নিকাশি ব্যবস্থা বেশ খারাপ। তার মধ্যে এই জল ঢুকে পড়লে এলাকাগুলির বানভাসী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

জল জমেছে মহাত্মা গাঁধী রোডের বেশ কিছু জায়গায়।—নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টির কারণে দেরি করে ছাড়লেও ট্রেন চলাচল মোটের উপর স্বাভাবিক রয়েছে বলে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, হাওড়া এবং শিয়ালদহ কারশেডে জল জমেছে। পাম্পের সাহায্যে সেই জল সরানোর কাজ চলছে। তবে বৃষ্টি যদি এ ভাবে বাড়তে থাকে, তা হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।

দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একে তো টানা বৃষ্টি, তার মধ্যে এ দিন সকালে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৩৩ হাজার ৩০০ কিউসেক জল ছাড়ে ডিভিসি। বৃষ্টি যদি আরও বাড়ে, সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জল ছাড়া হতে পারে বলে ডিভিসি সূত্রে জানানো হয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় বর্ধমানের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। বিরামহীন বৃষ্টিতে বর্ধমানে দামোদর, ভাগীরথী এবং অজয় নদে জল বেড়েছে। তবে এখনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রানিগঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ডও জলমগ্ন।

ইতিমধ্যেই রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে শুখা জেলা হিসাবে পরিচিত বাঁকুড়ায়। টানা বৃষ্টিতে তার অবস্থাও ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী-সহ বেশ কিছু নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। গন্ধেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বরের জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। বাঁকুড়া সদরের ভাদুল সেতু ও মিনা সেতু প্লাবিত।

নিম্নচাপটি অবস্থান করছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের উপর। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি।

হুগলি জেলার কয়েকটি এলাকা বৃষ্টিতে একেবারে জল থইথই। বৈদ্যবাটির বিভিন্ন ওয়ার্ড জলমগ্ন। জল জমেছে চুঁচুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। ভদ্রেশ্বরে জলের তোড়ে ভেসে যায় হুগলি নদীর জেটি। তবে, বীরভূমের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। খয়রাশোলে জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। লাভপুরের লাঘাটা সেতু থেকে জল নেমেছে। তিলপাড়া জলাধার থেকে জল কম ছাড়ায় জেলায় নতুন করে কোনও এলাকা আর ডোবেনি। মুর্শিদাবাদের কয়েকটি নদীতে জল বেড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, বাসন্তী এবং গোসাবা ব্লকের কয়েকটি এলাকা জলের তলায়।পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘাটাল থেকে চন্দ্রকোণার মূল সড়কে জল জমে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বিভিন্ন রাস্তায় জলে যাওয়ায়, এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE