Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হামলার আশঙ্কা মাথায় নিয়েই ছন্দে ফেরার চেষ্টায় দার্জিলিং

দার্জিলিং সরকারি কলেজের ৩০ জন শিক্ষককে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সকালবেলায় পাকদণ্ডী বেয়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখা গেল স্কুলপড়ুয়াদেরও। পরনে ইউনিফর্ম নয়, অন্য রঙিন পোশাক। এক অভিভাবকের মন্তব্য, ‘‘রাস্তায় কেউ যদি কিছু বলে, তাই ইউনিফর্ম পরতে বারণ করেছি।’’

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রতিভা গিরি
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৮
Share: Save:

লালকুঠিতে জিটিএ-র সদর দফতর। সেখানে এত দিন গ্রুপ-সি এবং ডি মিলিয়ে ন’জন করে কর্মী কাজে আসতেন। এ দিন এলেন আরও তেরো জন। মোর্চা প্রভাবিত জিটিএ-র অস্থায়ী কর্মীদের সংগঠনের সদস্যরা জিটিএ সচিব সি মুরুগনের সঙ্গে দেখা করে এ দিন জানিয়ে গেলেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকে কাজে যোগ দেবেন তাঁরা।

দার্জিলিং সরকারি কলেজের ৩০ জন শিক্ষককে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সকালবেলায় পাকদণ্ডী বেয়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখা গেল স্কুলপড়ুয়াদেরও। পরনে ইউনিফর্ম নয়, অন্য রঙিন পোশাক। এক অভিভাবকের মন্তব্য, ‘‘রাস্তায় কেউ যদি কিছু বলে, তাই ইউনিফর্ম পরতে বারণ করেছি।’’

আরও পড়ুন: কাশীপুরের চিলতে ঘরে পুরোদস্তুর বাঙালি ভোজ অমিত শাহদের জন্য

উত্তরকন্যায় বৈঠকের পরে এ ভাবেই ছন্দে ফিরতে দেখা গেল পাহাড়কে।

এই ছন্দ যাতে বজায় থাকে এবং পুজোর আগেই স্বাভাবিক হয় পাহাড়, সে জন্য এর মধ্যেই কয়েকটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। যেমন, ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে কাজে যোগ দিলে অগ্রিম বেতন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চা বাগান নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক, পাহাড়ে রেশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা— এই সবই রয়েছে তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায়। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও এ দিন জানান, চলতি সপ্তাহেই পাহাড়ে রেশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। কার্শিয়াং, কালিম্পঙের মতো এ দিন দার্জিলিঙেও কয়েকটি ব্যাঙ্ক খুলেছে। তবে ইন্টারনেট অচল হওয়ায় এটিএমে টাকা নেই।

সরকারি সূত্রে এ দিন জানা গিয়েছে, আরও কয়েকটি দফতরকেও পুজোর আগে বেতন দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারের যুক্তি, এত দিন ধরে বন্‌ধ চলায় এবং বেতন বন্ধ থাকায় মানুষের হাত খালি। এখন বেতন হাতে পেলে টাকার
অভাব কিছুটা মিটবে। তখন দোকানপাটও খুলবে।

এ দিন জিটিএ-র বিভিন্ন দফতরের তালা খোলা হলেও এবং বিমল গুরুঙ্গের খাসতালুক সিংমারিতে চাল-ডাল, শিঙাড়া-মোমোর দোকান বসলেও বড় বড় দোকানের ঝাঁপ কিন্তু এখনও বন্ধ। ফুটপাথে আনাজ নিয়ে অবশ্য কেউ কেউ বসতে শুরু করেছেন। দার্জিলিং স্টেশনের কাছে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আজ ফুটপাথে আনাজ নিয়ে বসলাম। একটু ভয় তো লাগছেই। কিন্তু দোকান না খুললে সংসার চলবে না।’’ যদিও অনেকেরই বক্তব্য, দু’এক দিন ভাল করে পরিস্থিতি বুঝে তার পরেই দোকান খোলা হবে।

এ দিন দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিক— চার জায়গাতেই বাস ও গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। কুড়িটি করে গাড়ির কনভয় যাতায়াত করেছে পাহাড়ে। সঙ্গে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী।

বিমল গুরুঙ্গের অনুগামীদের হামলার আশঙ্কা মাথায় নিয়েও এ ভাবে স্বাভাবিক হতে চাইছে পাহাড়। সরকারও সাহায্য করছে। এই অবস্থায় ঘরে বসে নেই বিনয় তামাঙ্গরাও। ব্লুমফিল্ড ডালিতে নিজের বাড়িতে বসে বিনয় জানান, মোর্চা নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এখন পাহাড়ে রয়েছেন। তাই দলের দায়িত্ব তাঁরই হাতে। বিনয় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে কয়েকটি চা বাগান খুলে যাবে। পাহাড়কে পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে কয়েক দিনের মধ্যেই রাস্তায় নামব।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘পাহাড় স্বাভাবিক ছন্দে থাকবে, সঙ্গে আন্দোলনও চলবে। পাহাড় স্বাভাবিক হলেই আমি গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে দিল্লি যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE