Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
State News

এক মাসের শিশুর গলায় বঁটির কোপ! মেয়ে হওয়ার কারণেই খুন?

মা বলছেন, দোলনা থেকে নীচে বঁটির উপর পড়ে মেয়ের গলা কেটে গিয়েছে। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীদের একটা অংশের অভিযোগ, মেয়ে হওয়ার কারণেই তার গলা কেটে খুন করেছে বাবা-মা।

কেতুগ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটির দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

কেতুগ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটির দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ১৪:৪৯
Share: Save:

গলার কাছ থেকে মাথাটা প্রায় আলাদা হয়ে গিয়েছে। নিথর দেহে আলগা ভাবে লেগে থাকা ছোট্ট মাথাটা হেলে রয়েছে ডান দিকে।

মা বলছেন, দোলনা থেকে নীচে বঁটির উপর পড়ে মেয়ের গলা কেটে গিয়েছে। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীদের একটা অংশের অভিযোগ, মেয়ে হওয়ার কারণেই তার গলা কেটে খুন করেছে বাবা-মা। বর্ধমানের কেতুগ্রামের আরনায় মাসখানেকের একটি শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গোটাটাই তদন্ত করে দেখছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার সকাল পাঁচটা নাগাদ মেয়েকে দুধ খাইয়ে শৌচাগারে গিয়েছিলেন মা রিজিয়া বিবি। ২৯ দিনের শিশুটি তখন দোলনায় শুয়ে ছিল। কিন্তু, তিনি ফিরে এসে দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে চার পাশ। মেয়ের গলা কাটা। এর পরেই পাড়াপ্রতিবেশীদের ডেকে ঘটনার কথা জানান। কিন্তু সেই প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মেয়েকে খুন করেছে বাবা-মা। মেয়ে হওয়ার কারণেই ওই শিশুটিকে খুন হতে হয়েছে বলে তাদের দাবি। খুন নাকি অস্বাভাবিক মৃত্যু, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আরও পড়ুন
দলের দ্বন্দ্বে খুন ছেলে, অভিযোগ তৃণমূল কর্মীর

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এই বঁটিটি। —নিজস্ব চিত্র।

কেতুগ্রামের আরনায় মা, স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন আফাজ শেখ। স্ত্রী রিজিয়ার বয়স প্রায় ২৩। ছেলের বয়স নয়। মাসখানেক আগে তাঁদের একটি মেয়ে হয়। আগে কাজের সূত্রে আফাজ মহারাষ্ট্রে থাকতেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে ফিরে আসেন। প্রতিবেশীদের একটা অংশের দাবি, প্রথম থেকেই তিনি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন। তা নিয়ে মাঝে মাঝেই দু’জনের মধ্যে অশান্তি হত। মেয়ে হওয়ার পর থেকে সেই অশান্তি আরও বেড়ে যায়। তাঁদের আশঙ্কা, মেয়ে হওয়ার জন্য অশান্তির জেরেই শিশুটিকে খুন করা হয়েছে।

তবে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এ দিন আফাজ বাড়িতে ছিলেন না। খেতমজুরির কাজে তিনি ছিলেন বীরভূমের লাভপুরে। কেতুগ্রাম থানার আইসি বাসুদেব সরকার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার ঘাড়ের পিছনে গভীর ক্ষত ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি বঁটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এটি নিছকই দুর্ঘটনা না কোনও আক্রোশের বশেই শিশুটিকে খুন করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এই ঘটনায় মা-বাবার দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও, তা এখনও প্রমাণসাপেক্ষ। যদিও প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, এর পিছনে মা-বাবাই দায়ী। তবে এই ঘটনায় ফের এক বার সামনে চলে এসেছে এ দেশে মেয়েদের বিশেষত শিশুকন্যাদের অবস্থান। বিশিষ্ট সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, “কেতুগ্রামের ঘটনা কোনও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সদ্যোজাত কন্যাসন্তানদের অহরহ ভ্যাটে বা জঞ্জালের স্তূপে পরিত্যক্ত অবস্থায় মেলে। এতেই এ দেশে মেয়েদের অবস্থানটা স্পষ্ট হয়ে যায়। চারপাশে ‘বেটি বচাও বেটি পঢাও’-এর রব উঠলেও, সে প্রচারের অর্থ হয় না। কারণ, বেটিরা যদি না-ই বাঁচে, তারা পড়বে কখন?” ফলে ‘বেটি বচাও বেটি পঢাও’-এর অর্থটা আসলে কী, সেই প্রশ্নই তুলেছেন রত্নাবলী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Ketugram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE