Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লোক আদালতে বিচার করলেন দুই রূপান্তরকামী

আদালতের বাইরে ছোটখাটো মামলার নিষ্পত্তি করতে রবিবার দেশ জুড়ে লোক আদালত বসানো হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ‘প্রিসাইডিং জাজ’ হন আদালতের বিচারক।

অরুণাভ নাথ ও সুমি মণ্ডল (ডান দিকে) ছবি: গৌতম প্রামাণিক এবং হিমাংশুরঞ্জন দেব

অরুণাভ নাথ ও সুমি মণ্ডল (ডান দিকে) ছবি: গৌতম প্রামাণিক এবং হিমাংশুরঞ্জন দেব

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩৩
Share: Save:

এত দিন তাঁরা প্রতি পদে টিটকিরি সয়েছেন। রূপান্তরকামী হিসেবে সমাজে নিজের জায়গা করে নিতে লড়তে হয়েছে ঘরে-বাইরে। কাজের জায়গায় প্রমাণ করতে হয়েছে যোগ্যতা। রবিবার এমনই দু’জনকে দেখা গেল লোক আদালতের বিচারক হিসেবে।

আদালতের বাইরে ছোটখাটো মামলার নিষ্পত্তি করতে রবিবার দেশ জুড়ে লোক আদালত বসানো হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ‘প্রিসাইডিং জাজ’ হন আদালতের বিচারক। আমন্ত্রিত হিসেবে থাকেন আইনজীবী, শিক্ষক, সমাজকর্মীরা। সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত দুই রূপান্তরকামী— কোচবিহারের সুমি মণ্ডল এবং বহরমপুরের অরুণাভ নাথ ছিলেন সেই আমন্ত্রিতের তালিকায়। তাঁরা দু’জনই আপাতত নারীতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।

এই প্রথম নয়। গত বছরই উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে লোক আদালতের বিচারক হন রূপান্তরকামী জয়িতা মণ্ডল। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা রূপান্তরকামীদের কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজে মর্যাদা দিতেই ইদানীং তাঁদের সরকারি উদ্যোগে সামিল করা হচ্ছে।

বহরমপুরের অরুণাভ শরীরে পুরুষ হলেও মনে নারী। ছোট থেকে পাড়ায়, স্কুলে, পথেঘাটে টিটকিরি শুনে এসেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে এমএ করেছেন সে সব সহ্য করেই। ২০০৬ সালে কলকাতার কিছু সতীর্থের সান্নিধ্যে এসে রূপান্তরকামী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন তিনি। মুর্শিদাবাদে তাঁর মতো মানুষদের নিয়ে সংস্থা গড়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও রূপান্তরকামীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য শুরু করেন কাজ। এ দিন অরুণাভ বলেন, “আমায় লোক আদালতের বিচারক করা হবে, ভাবতে পারিনি। খুব ভাল লাগছে।” কোচবিহারের সুমি তো প্রায় কেঁদেই ফেলেন। আদতে দিনহাটার বাসিন্দা তিনি, এখন থাকেন কোচবিহারের ঘুঘুমারিতে। একটি সংস্থার মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নানা ধরনের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁদের নিয়ে তৈরি করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীও। সুমি বলেন, ‘‘কত লড়াই করতে হয়েছে। এত দিনে সবাই অন্য চোখে দেখছে।”

দেশের প্রথম রূপান্তরকামী অধ্যক্ষ, কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি খুব খুশি। তবে রূপান্তরকামী হিসেবে কেউ যেন বাড়তি সুবিধা না পান, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন, তা-ও মাথায় রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE