Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Jhargram

‘কী ভাবে দেহ পেতে হয়, তা জানতেই তিন দিন লাগল’

দেহ নিয়ে যাবেন কী ভাবে? টাকা নেই তো! তাই হাসপাতাল চত্বরেই পড়েছিল দেহ।

অপেক্ষায়: মার্গের সামনে বসে আছেন কানাই শবর। —নিজস্ব চিত্র।

অপেক্ষায়: মার্গের সামনে বসে আছেন কানাই শবর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ১৯:৫০
Share: Save:

সৎকার দূর, হাসপাতাল থেকে বাড়িতে দেহ নিয়ে আসার সামর্থ্যটুকুও স্বামীর নেই। তাই চার দিন মর্গেই পড়েছিল এক শবর মহিলার দেহ। শেষে এক স্কুল শিক্ষকের উদ্যোগে দেহ গেল বেলপাহাড়ির ধবাকাচা গ্রামে।

বেলপাহাড়ির শিমূলপাল পঞ্চায়েতের ধবাকাচার তরুণী সুজিতা শবর (১৯) রান্না করার সময় গত ২৫ এপ্রিল অগ্নিদগ্ধ হন। খাটিয়ায় চাপিয়ে কাঁধে করেই সুজিতাকে ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই অ্যাম্বুল্যান্সে সুজিতাকে আনা হয় ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। তাঁর স্বামী কানাই দিনমজুর। যৎসামান্য রোজগার। দু’বেলা খাবারের সংস্থান করতেই টাকা ফুরিয়ে যায় তাঁর।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ২ মে সকালে সুজিতার মৃত্যু হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পরে দেহ ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ মর্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। স্ত্রীর মৃতদেহ পেতে এর পর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ঘুরতে থাকেন কানাই। তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল, মর্গের বিষয়টি প্রশাসন দেখে। শবর সংগঠনের নেতাদের দ্বারস্থ হন কানাই। কিন্তু আগুনে পোড়া ঘটনায় জড়াতে চাননি কেউই। পুলিশ জানিয়ে দেয়, বেলপাহাড়ির কদলবনি গ্রাম থেকে সুজিতার বাপের বাড়ির তরফে কেউ এলে মৃতদেহ ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো টাকাও ছিল না কানাইয়ের কাছে। শেষে খবর পেয়ে শুক্রবার সুজাতার দাদা বাবুলাল শবর লিখিত আবেদন করায় কানাই দেহ পেয়ে যান।

সুজিতা শবর।

কিন্তু দেহ নিয়ে যাবেন কী ভাবে? টাকা নেই তো! তাই হাসপাতাল চত্বরেই পড়েছিল দেহ। অবশেষে বেলপাহাড়ির লালজল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীকান্ত মুর্মু বিষয়টি জানতে পেরে রবিবার এগিয়ে আসেন। আরও কয়েক জন সহৃদয় ঝাড়গ্রাম শহরবাসীর উদ্যোগে গাড়ি ভাড়া করে দেওয়া হয়। স্ত্রীর দেহ নিয়ে ফিরে যান কানাই। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। কী ভাবে দেহ পেতে হয়, সেটা জানতেই তিন দিন লাগল।’’

শবরদের জন্য সরকারি স্তরে নানা ধরনের সহযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ‘সমব্যথী’ প্রকল্প। তা হলে? ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “কেউ ওই ঘটনার কথা আমাকে জানাননি। পরিবারটিকে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।” বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদারের বক্তব্য, “ওই মহিলার পারলৌকিক কাজের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।”

লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি খগেন্দ্রনাথ মান্ডির অবশ্য দাবি, “আমি সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। সংগঠনের সদস্যরা এই ঘটনায় কেউ জড়াতে চাননি। কানাই যাতে স্ত্রীর দেহ নিয়ে বাড়ি যেতে পারেন সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে বলেছিলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE