Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে বই পাঠাতে দেরি, তাতেও অন্তর্ঘাতের ভূত

এটাই রাজনৈতিক দস্তুর। কিন্তু অনেক স্কুলে যে যথাসময়ে বই পৌঁছচ্ছে না, তার কারণ হিসেবেও এখন অন্তর্ঘাতের কথা বলছে স্কুলশিক্ষা দফতরের একাংশ!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৪৭
Share: Save:

কোনও প্রকল্প ঠিক সময়ে শুরু না-হলে কিংবা বিভিন্ন প্রকল্পে কাজকর্ম বিলম্বিত হলে বিরোধী শিবির যেমন সরকারের সমালোচনা করে, অনেক সময়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে সরকারও। এটাই রাজনৈতিক দস্তুর। কিন্তু অনেক স্কুলে যে যথাসময়ে বই পৌঁছচ্ছে না, তার কারণ হিসেবেও এখন অন্তর্ঘাতের কথা বলছে স্কুলশিক্ষা দফতরের একাংশ! এবং তাদের আঙুল উঠছে বিরোধী শিবিরের দিকেই।

স্কুলপড়ুয়াদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়ার জন্য ২ জানুয়ারি ‘বুক ডে’ বা বই দিবস ঘোষণা করেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। রাজ্যের প্রায় এক কোটি পড়ুয়াকে সে-দিনই বই দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেক স্কুলের অভিযোগ, প্রতি বছরই বই পেতে সমস্যা হয়। এ বছরেও সেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথম ইউনিট পরীক্ষার সময় হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অনেক স্কুলে বই পৌঁছয়নি। কোথাও কোথাও অনেক বই গিয়েছে মার্চের শেষে।

স্কুলপাঠ্য বই বিতরণের এই পুরো প্রক্রিয়াতেই অন্তর্ঘাত দেখছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের এক শ্রেণির কর্তা। ওই দফতরের দাবি, পাঠ্যক্রম এবং পাঠদিবস ঠিক করা হয় বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই। কিন্তু পাঠ্যবই না-থাকাতেই যে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন অনেক শিক্ষাকর্তা। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে ১০ হাজার বই নিয়ে। এক কোটি বই দিতে পারলে ১০ হাজার বইও দেওয়া যায়। কিন্তু কেউ বা কারা ইচ্ছে করে সরকারের মুখ পোড়াতে চাইছে। অন্তর্ঘাত তো স্পষ্ট।’’ বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরকেই কাঠগড়ায় তুলছেন তিনি। এই ব্যাপারে বক্তব্য জানতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হয়েছে, মেসেজ পাঠানো হয়েছে। কোনওটারই জবাব মেলেনি।

শিক্ষা শিবিরের একটি অংশের প্রশ্ন, স্কুলে তো বিরোধী পক্ষের লোকজনের বাড়ির ছেলেমেয়েরাও পড়ে। সেখানে অন্তর্ঘাত করবে কে? স্কুলশিক্ষা দফতরের যে-সব কর্তা অন্তর্ঘাত নিয়ে মুখর হয়েছেন, তাঁদের কাছে এর জবাব মিলছে না।

অন্তর্ঘাত-বিতর্কে না-ঢুকে ওই দফতরের এক কর্তা জানান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার প্রকল্প চালু হয় ২০১৩ সালে। প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় এক কোটি পড়ুয়াকে বই দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও বছরেই ঠিক সময়ে বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী কোন স্কুলের কত বই প্রয়োজন, সেই তালিকা দফতরে পাঠান প্রতিটি জেলার প্রকল্প আধিকারিক। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও স্কুলশিক্ষা দফতর ঘুরে সেই তালিকা পৌঁছয় ছাপাখানায়। ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপানো শেষ করে সব সার্কেলে বই পৌঁছে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে স্কুল-কর্তৃপক্ষ তা সংগ্রহ করেন।

এই প্রক্রিয়াতেই গোলমাল হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, এপ্রিল শুরু হয়ে গেলেও সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির অঙ্কের বই পৌঁছয়নি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে এই সমস্যার কথা জানানো হলেও বিষয়টিকে আমল দেওয়া হচ্ছে না বলে শিক্ষক-নেতা স্বপন মণ্ডলের অভিযোগ। সপ্তম শ্রেণির ভূগোল, ষষ্ঠ শ্রেণির একাধিক বইও মিলছে না। পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের একাধিক স্কুলে বই গিয়েছে ২৮ মার্চ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অনেক স্কুলেই ক্লাস বন্ধ। এপ্রিলের মাঝামাঝি ক্লাস চালু হলে কী ভাবে ইউনিট পরীক্ষা নেওয়া হবে, বুঝে উঠতে পারছেন না প্রধান শিক্ষকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE