পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারও কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ। এই নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানান, খসড়া বিধির কোনও সত্যতা নেই। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই আচরণবিধি ঠিক করা হবে।
একটি খসড়া যে তৈরি হয়েছে, তা স্বীকার করে নেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘‘আমি আপত্তি করেছিলাম। বলেছি, আচরণবিধি যেন গ্রহণযোগ্য হয়। গায়ের জোরে বিধি জারি করা যাবে না।’’ এই নিয়ে মিথ্যে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে বলে এ দিন উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) একটা খবর বেরিয়েছে। পার্থদাকে জিজ্ঞেস করলাম। এটা কি ঠিক? পার্থদা জানাল, এটা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। আমরা জানিই না।’’
আচরণবিধি যে চালু করা হচ্ছেই, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যেই সেটা পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, বিধির প্রয়োগ কী ভাবে হবে, তা ঠিক করা হবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই।’’ তাঁর প্রশ্ন, শিক্ষকদের জন্য বিধি থাকবে না কেন? সিবিসিএস চালু করা হচ্ছে। অথচ শিক্ষকদের উপস্থিতির নিয়ম থাকবে না? তা হয় না।
বিরোধীদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের আগে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আচরণবিধি নিয়ে নতুন করে আর কোনও বিতর্কে যেতে চাইছে না বলেই শিক্ষামন্ত্রী এমন কথা বলছেন। শিক্ষাজগতের একাংশের অভিযোগ, ২৮ পাতার খসড়া আচরণবিধিতে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার রাস্তা বন্ধ করে শিক্ষকদের চূড়ান্ত অপমানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
গত বছর ১ এপ্রিল কাগজেকলমে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন চালু হয়। কিন্তু আইন বলবৎ করতে গেলে ‘রুল’ বা বিধি চাই। সেই উদ্দেশ্যেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দু’টি আলাদা কমিটি গড়া হয় ২০১৭-র এপ্রিলে। পরে দু’টি কমিটিই বাতিল করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতরই খসড়া বিধি তৈরি করে সাত সদস্যের এক কমিটিকে দেখতে দেয়। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুভশঙ্কর সরকারের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি চলতি মাসের গোড়ায় চূড়ান্ত সিলমোহর-সহ সেই বিধি জমা দেয় উচ্চশিক্ষা দফতরে। বিকাশ ভবনের খবর, ওই কমিটির সদস্য এক উপাচার্য খসড়া বিধির বেশ কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর কোনও আপত্তিই ধোপে টেকেনি।
আগে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, দুই ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পর্ব ছিল এক বছরের। সেটা কলেজে দুই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর করার কথা বলা হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিজ অ্যান্ড কলেজেস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড রেগুলেশন) রুলস, ২০১৭’ শীর্ষক খসড়া বিধিতে। এবং শিক্ষকদের পুলিশি রেকর্ড যাচাই করা হবে ওই প্রশিক্ষণ পর্বেই। এত দিন শিক্ষকদের কোনও পুলিশি রেকর্ড খতিয়ে দেখার বন্দোবস্ত ছিল না। শাসকের হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতেই এ বার প্রশিক্ষণ পর্বেই ওই রেকর্ড যাচাইয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে শিক্ষকদের আশঙ্কা।
শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র সভাপতি তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘‘এই খসড়া আসলে শিক্ষা ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারির সমতুল্য। এর বিরুদ্ধে গোটা শিক্ষকসমাজকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানাচ্ছি।’’ খসড়া বিধির বিরোধিতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা) ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
উচ্চশিক্ষা দফতরের উপসচিব হরিসাধন দাস অবশ্য জানাচ্ছেন, এই বিধি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার সাত সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছে। সেই কমিটি আলোচনা করছে। তারা এখনও সরকারকে কোনও রিপোর্ট দেয়নি। এই অবস্থায় সরকারের তরফে এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্ন ওঠে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy