Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেতন চাই না, শুধু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাটা চলুক

বহু লড়াইয়ের পরে গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল হয়েছে। কিন্তু স্কুল চালাতে যাঁদের সবচেয়ে প্রয়োজন সেই শিক্ষকদেরই নিয়োগ হয়নি। পথ না পেয়ে স্কুল টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় জান লড়িয়েছেন গ্রামের পাঁচ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও এক গৃহবধূ। কেউ স্কুল শুরুর দিন থেকে কেউ আবার তার কিছুদিন পর থেকে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন ওই স্কুলে।

যত্নে: বাকতার স্কুলে চলছে লেখাপড়া। নিজস্ব চিত্র

যত্নে: বাকতার স্কুলে চলছে লেখাপড়া। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গলসি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বহু লড়াইয়ের পরে গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুল হয়েছে। কিন্তু স্কুল চালাতে যাঁদের সবচেয়ে প্রয়োজন সেই শিক্ষকদেরই নিয়োগ হয়নি। পথ না পেয়ে স্কুল টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় জান লড়িয়েছেন গ্রামের পাঁচ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও এক গৃহবধূ। কেউ স্কুল শুরুর দিন থেকে কেউ আবার তার কিছুদিন পর থেকে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন ওই স্কুলে।

গলসি বাজার থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম বাকতা। ১৯৮৩ সালে গ্রামেরই কিছু যুবকের উদ্যোগে একটি বেসরকারি স্কুল গড়ে ওঠে সেখানে। ২০০৪ সালে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। যাঁরা ওই স্কুলে পড়াতেন তাঁরা অন্য পেশায় চলে যান। এরপরেই লড়াই শুরু করেন গ্রামের অন্যেরা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ রায়, জগন্নাথ চৌধুরীরা একের পর এক আবেদন করতে থাকেন। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত রাজ্য সরকারের অনুমোদন পায় স্কুলটি। তখন থেকেই সেখানে পড়ান রবীন্দ্রনাথবাবু, জগন্নাথবাবু, কমলাকান্ত সেন, জগবন্ধু চেল, ও শান্তিকুমার মিশ্র। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন গ্রামের বধূ মিঠু মৌলিক বন্দ্যেপাধ্যায়ও। গ্রামবাসীদের সাহায্যে একটি নতুন ঘরও তৈরি হয়। সেটা আর পুরনো ঘর মিলিয়েই চলে ৬৮ পড়ুয়ার পঠনপাঠন।

ওই স্কুলের একমাত্র সরকারি ভাবে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম। তিনিও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি জানান, স্কুলে মিড-ডে মিল চালু হয়েছে, কিন্তু খাওয়ার জায়গা নেই। শৌচালয় নেই, বেঞ্চ নেই, প্রয়োজনীয় ক্লাসঘরও নেই। তবে এর মধ্যেও হাল ছাড়েননি তাঁরা। গ্রামবাসীদেরও আশা, এ সব সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু এই অবসর নেওয়ার পরেও এই শিক্ষকেরা এগিয়ে না এলে ছেলেমেয়েরা খুবই মুশকিলে পড়ত।

মিঠুদেবী ও রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘স্কুলের সঙ্গে গ্রামের মানুষের অনেকদিনের লড়াই জড়িয়ে। শিক্ষকের অভাবে স্কুল যাতে বন্ধ না হয়ে যায় তাই এগিয়ে এসেছি আমরা।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘বেতন চাই না। শুধু সব সমস্যা মিটিয়ে পড়াশোনার মান বাড়াতে চাই।’’ আর এক শিক্ষক কমলাকান্ত সেন বলেন, “বাকতাকে ঘিরে রয়েছে গোহগ্রাম, গড়ম্বা, মল্লিকপুর, মহড়া ও ভাসাপুর। এখান থেকে কোথাও ৪ কিলোমিটার কোথাও আবার ৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে হাইস্কুল। যাতাযাতের ভাল ব্যবস্থাও নেই। তাই আমাদের আশপাশের গ্রামে ছেলেমেয়েদের কথা ভেবেই জুনিয়ার হাইস্কুলের জন্যে লড়াই শুরু করেছিলাম। এখন তা বন্ধ হতে দেব কেন?’’

ক্লাসঘর ঝাঁট দেওয়া, ঘন্টা বাজানো সবই করেন ওই শিক্ষকেরা। চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ওঁদের সাহায্যেই স্কুলটি বেঁচে আছে।’’

কিন্তু শিক্ষক মিলবে কবে? জেলা স্কুল পরিদর্শক খগেন্দ্রনাথ রায় জানান, ওই স্কুল যবে থেকে অনুমোদন পেয়েছে তবে থেকে আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তাই শিক্ষক দেওয়া যায়নি। নিয়োগ হলেই শিক্ষক দেওয়া হবে। ততদিন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়েই স্কুল চালানোর কথা বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Teacher Salary School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE