Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইচ্ছে মতো স্কুলে যেতেন তপু মাহাতো

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত মাস চারেক ধরে একাধিকবার মোবাইলের সিম কার্ড বদলে ফেলেছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। ডেরায় বদলে ফেলছিলেন ঘন ঘন। তবে শেষমেশ মোবাইল ফোন ট্যাপ করে তাঁর অবস্থান জানতে পেরে অভিযান চালায় পুলিশ।

সামসুল হুদা
বাসন্তী শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ১৭:৫৯
Share: Save:

মর্জি হলে সপ্তাহে এক-আধ দিন স্কুলে আসতেন। ক্লাস নিতেন না। বেশির ভাগ দিন স্কুলে দেখাই মিলত না তাঁর।

প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে অবশ্য টুঁ শব্দটি করার সাহস ছিল না কারও। প্রধান শিক্ষক তপু মাহাতোর হম্বিতম্বিকে বরং সমঝে চলতেন সকলে।

১৮ জানুয়ারি বাসন্তীর হেতালখালিতে এক বালক-সহ দু’জনের খুনের ঘটনায় পুলিশ বুধবার বীরভূমের সিউড়ে থেকে গ্রেফতার করেছে মূল অভিযুক্ত তপুকে। এর আগে ওই ঘটনায় ১১ জন ধরা পড়েছে। তপুকে গ্রেফতার করার পরে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তৃণমূলেরই কিছু কর্মী-সমর্থক। ক্রমশ সামনে আসছে দোর্দণ্ডপ্রতাপ তপুর নানা কীর্তি-কাহিনি।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত মাস চারেক ধরে একাধিকবার মোবাইলের সিম কার্ড বদলে ফেলেছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। ডেরায় বদলে ফেলছিলেন ঘন ঘন। তবে শেষমেশ মোবাইল ফোন ট্যাপ করে তাঁর অবস্থান জানতে পেরে অভিযান চালায় পুলিশ।

তপু চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েতের প্রধান সুচিত্রা মাহাতোর ছেলে। হেতালখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও তিনি। এ বারও ভোটে লড়ছেন সুচিত্রা। তপুর স্ত্রী কাকলি পঞ্চয়েত ভোটে লড়ছেন তৃণমূলের টিকিটে। সুচিত্রা বলেন, ‘‘ছেলে কোনও গণ্ডগোলের মধ্যে ছিল না। ওকে অন্যায় ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তাঁর পরিবারের আরও কাউকে কাউকে জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ সুচিত্রার।

তপুকে নিয়ে দলের নেতারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে।’’

তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ১৮ জানুয়ারির ঘটনার পরে তপু বাসন্তীর চুনাখালিতে তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড চলে যান। মাঝে কয়েক দিন কলকাতার সরসুনায় আসেন। সেখানে বাসন্তীর দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে।

সেখান থেকে তপু আসানসোলে চলে যান বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সেখানে কিছু দিন থাকার পরে গন্তব্য ছিল বর্ধমানের পূর্বস্থলী। দিন কয়েক আগে গিয়েছিলেন সিউড়িতে। আত্মীয় এবং পরিচিতদের বাড়িতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকছিলেন।

পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, মাঝে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনের সিম কার্ড বদলে ফেলেছিলেন তপু। তাতে নজরদারিতে সমস্যা হচ্ছিল। শেষে ফোন ট্যাপ করে তপুর হদিস পায় পুলিশ।

স্থানীয় মানুষের একাংশ জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েতের কাজকর্ম মায়ের হয়ে দেখাশোনা করতেন ছেলেই। তপুর বিরুদ্ধে এর আগে টাকা নয়ছয়, দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে সে কথা জানিয়েছিলেন এলাকার মানুষজন। ফল মেলেনি। বেআইনি মেছোভেড়ি দখলেও নাম জড়িয়েছিল তপুর।এই নিয়েই তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের মধ্যে বিবাদ আছে এলাকায়। টুসু মেলায় মদ্যপান করা নিয়ে দু’পক্ষের গণ্ডগোল বাধে। স্থানীয় মানুষের একাংশের দাবি, লড়াইয়ের পিছনে মূল কারণ এলাকার উপরে দখল রাখা। ১৮ জানুয়ারি বোমা-গুলির লড়াইয়ের মাঝে পড়ে প্রাণ যায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রিয়াজুল মোল্লা ও যুব তৃণমূল কর্মী হাসান লস্করের।

রিয়াজুলের বাবা রফিকুল বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও মূল অভিযুক্ত ধরা পড়েছে। ওর কঠিন সাজা হলে তবেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’’

স্কুল থেকে ছ’মাসের ছুটি নিয়েছেন তপু। বেতনও পাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। বাসন্তী দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক গৌরহরি প্রামাণিক জানান, সাধারণত লম্বা ছুটিতে থাকলে তিন মাসের বেতন পাওয়া যায়। কিন্তু নিয়মিত স্কুলেই তো যেতেন না তপু। গৌরহরি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আগে নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE