প্রতীকী ছবি।
আগের চেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হচ্ছে অনেক বেশি। বেড়েছে চার্জশিট জমা পড়ার সংখ্যাও। অভিযুক্তেরা যে গ্রেফতার হচ্ছে না, তা-ও নয়। কিন্তু সেই তুলনায় শাস্তি হচ্ছে খুব কম ক্ষেত্রে। এবং সেখানে পশ্চিমবঙ্গের স্থান অনেকটাই নীচে!
রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জমা দেওয়া তথ্যে ধরা পড়েছে এই ছবি। রাজ্যসভা সূত্রের খবর, গত ২৮ মার্চ প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহিরের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০১৫ এবং ২০১৬, পরপর দু’বছর নারী নির্যাতনের সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থানে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র রিপোর্টের ভিত্তিতে হংসরাজ জানান, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে সামগ্রিক ভাবে নারী নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৩৩,৩১৮টি এবং ২০১৬ সালে ৩২,৫১৩টি। এই দু’বছরে প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু অভিযোগ দায়ের, চার্জশিট পেশ, অভিযুক্তকে গ্রেফতার এবং চার্জশিট দেওয়ার সংখ্যা বেশি হলেও শাস্তির হার নগণ্য। আর এতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সমাজকর্মীদের কপালে। তাঁদের প্রশ্ন, অভিযোগ জমা পড়ছে, পুলিশ গ্রেফতার করে চার্জশিট পেশ করছে। তা সত্ত্বেও এমন অপরাধের মামলায় শাস্তি হচ্ছে না কেন?
পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের মামলায় শাস্তির পরিসংখ্যান ঠাঁই পেয়েছে এনসিআরবি-র ওই রিপোর্টেই। দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে রাজ্য জুড়ে ধর্ষণের ৩৩ হাজার মামলা দায়ের হলেও শাস্তি হয়েছে মাত্র ৪২০টিতে! ২০১৬ সালে কিছুটা কমে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২,৫১৩। ওই বছর শাস্তি হয় মাত্র ৩১৯টি মামলায়! উত্তরপ্রদেশ ওই দু’বছরে ধর্ষণের ঘটনায় দেশের মধ্যে এক নম্বরে। সেখানে শাস্তির হার একটু বেশি ঠিকই। তবে সেটাও খুব আশাব্যঞ্জক নয় বলে মনে করছেন সমাজকর্মীরা।
এই হাল কেন?
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির দাবি, ধর্ষণের মামলায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন। পুলিশি তদন্তের পদ্ধতি থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থা পর্যন্ত। অভিযোগ, এই ধরনের মামলায় পুলিশ ধর্ষিতার বয়ানের উপরে জোর দেয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধর্ষিতা ভয় পেয়ে বা চাপে পড়ে আদালতের সামনে বয়ান বদলাচ্ছেন। ফলে অভিযুক্ত রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ঋষিকান্তের দাবি, ‘‘প্রতিটি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘিরে রেখে সেখানকার ফরেন্সিক পরীক্ষা করা এবং হাতের ছাপ নেওয়া দরকার। পরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বড় প্রমাণ হিসেবে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পেশ করলেই শাস্তি হবে বলে আমার বিশ্বাস।’’ বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের উপরেও জোর দিচ্ছেন ঋষিকান্ত। তাঁর দাবি, ‘‘সব রাজ্যের সব আদালতের সরকারি কৌঁসুলিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশেষ করে ধর্ষণের মামলায় যাঁরা সওয়াল করেন, এটা বেশি দরকার তাঁদের।’’
রাজ্যের সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ অবশ্য মনে করেন, শাস্তি যে কম হচ্ছে, তার কারণ আদালতে সাক্ষী ও ধর্ষিতার বয়ান না-দেওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বদলানো। ‘‘তাঁদের এমনই হুমকির মুখে পড়তে হয় যে, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিযোগ তুলে নিতে কিংবা বয়ান পরিবর্তন করতে অভিযুক্তেরা চাপ সৃষ্টি করেন,’’ বলেন শাশ্বতীদেবী।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৫ এবং ২০১৬ দু’বছরে ধর্ষণের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থানে, এবং ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৩৩,৩১৮টি, ২০১৬ সালে ৩২,৫১৩টি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি সামগ্রিক ভাবে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান, শুধুমাত্র ধর্ষণের নয়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy