ধৃত মধুমিতা মিস্ত্রি। ইনসেটে নিহত সমীর মিস্ত্রি।
সোনারপুরে শ্রমিক নেতা খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মধুমিতা মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত ৯ এপ্রিল সোনারপুর থানার নোয়াপাড়ায় রাতে খাবার খাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন স্থানীয় ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের আইএনটিটিইউসি নেতা সমীর মিস্ত্রি। ওই দিন ঝ়়ড়-বৃষ্টির রাতে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে সমীরকে খুন করা হয়েছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই রাতে বাড়ির সদর দরজা খোলা রাখা হয়েছিল। ওই দরজা খোলার রাখার বিষয়টিই তদন্তের মূল সুত্র। সমীরবাবুর পরিবারের কোনও ব্যক্তিই ওই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে মনে হচ্ছিল। ওই দিন রাতে সমীরবাবুর মেয়ে, ছেলে মা ও স্ত্রী বাড়িতেই ছিলেন। তা সত্ত্বেও সদর দরজা খোলা রাখার বিষয়টিই মূল সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়েছে। ঘটনার পর দফায় দফায় সমীরবাবুর পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এক তদন্তকারীর কথায়, মূলত সমীরবাবুর স্ত্রী-র উপর নজদারি রাখা হচ্ছিল। ওই তদন্তকারীর ব্যাখা, সমীরবাবুর সঙ্গে স্ত্রী মধুমিতা কোনও রকম বনিবনা হচ্ছিল ছিল না বলেই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছিল। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মধুমিতার বিবাহ বর্হিভূত সর্ম্পক রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন কয়েক জন প্রতিবেশী। তার পরই মধুমিতার মোবাইল ফোনের নম্বর পরীক্ষা করা হয়। ঘটনার কয়েক দিন পরই একাধিক বার চন্দন মণ্ডল নামে সোনারপুর স্টেশন চত্বরের কাগজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে মধুমিতা দেখা করছিলেন। তার পর চন্দনের উপরও নজরদারি শুরু হয়। সমীরবাবুর মেয়েকে দফায় দফায় জেরা করার পর মধুমিতার সঙ্গে চন্দনের একটা সম্পর্ক রয়েছে তা স্পষ্ট হয়।
আরও পড়ুন
“সম্পত্তি পাচার করতে পারেন রত্না”, থানায় ডায়েরি শোভনের
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পর মুধুমিতাকে দফায় দফায় জেরা করেন তদন্তকারীরা। চন্দন সোনারপুর থানার বাগুইপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থানার বাসিন্দা সে। সোনারপুর স্টেশন এলাকায় কাগজের ব্যবসা ছাড়াও কামালগাজি এলাকায় চন্দনের একটি অফিস রয়েছে। তদন্তকারীদের কথায়, মধুমিতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যান্টিনে রান্নার কাজ করেন। সকাল সাতটায় সোনারপুর স্টেশন থেকে ট্রেন উঠত। বছর দুয়েক আগেই চন্দনের সঙ্গে মধুমিতার পরিচয় হয়। চন্দনও মাঝে মধ্যে সাইকেল নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মধুমিতাকে সোনারপুর নিয়ে আসত। চন্দনও মধুমিতার সর্ম্পক জেনে গিয়েছিলেন সমীর। মাস ছয়েক আগে চন্দনের সঙ্গে সর্ম্পক নিয়ে মধুমিতার ও সমীরের চরম অশান্তি হয়।
আরও পড়ুন
কাউন্টডাউন শুরু, পঞ্চায়েত নিয়ে চূড়ান্ত রায় কাল বিকেল সাড়ে ৪টেয়
ওই সময় দিন তিনেক বাড়ি ছেড়ে চন্দনের কামালগাজির অফিসে গিয়ে ছিলেন মধুমিতা। সম্প্রতি ফের চন্দকে নিয়ে সমীরে সঙ্গে মধুমিতার চরম অশান্তি শুরু হয়। তার পরই চন্দনও মধুমিতা সমীরকে খুনের চক্রান্ত করে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। ওই দিন রাতে মধুমিতাই দরজা খুলে রেখেছিল বলে জেরায় কবুল করেছে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী রাতে খাবার সময় চন্দন হানা দেয়। এবং সমীরকে গুলি করে চন্দন। বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘চন্দন ও মধুমিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে। খুনের ঘটনা স্পষ্ট হয়েছে।’’ ধৃতদের বৃহস্পতিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে মধুমিতা ও চন্দনকে হাজির করা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy