দু’সপ্তাহ আগে তাঁর বিরুদ্ধে ভাঙড়ের জমি রক্ষা কমিটির এক মহিলা প্রার্থীর দুই ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে শাসক দলের এক শীর্ষ নেতা তাঁকে সতর্ক করেন, ‘‘আর গন্ডগোল করলে তোর জায়গা হবে গারদে।’’
শুক্রবার ওই প্রার্থীদের প্রচার মিছিলে আসা হাফিজুল মোল্লার মৃত্যুর পরে ফের তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল। তার কিছুক্ষণের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন ওই এলাকার ‘বেতাজ বাদশা’, তাঁর দলেরই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে।
ভাঙড়ে দলীয় নেতৃত্বের একাংশ দীর্ঘদিন ধরেই আরাবুল-বিরোধী। তবু তাঁরা মুখ খুলতেন না, এতটাই প্রতাপ ছিল আরাবুলের। কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে আরাবুল-বিরোধীরাই বলছেন, গোলমাল পাকিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলেন তিনি।
এলাকার বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার ছেলে, তৃণমূল প্রার্থী মোস্তাক আলির প্রচার-মিছিলে কিছু দিন আগেই হামলার অভিযোগ উঠেছিল আরাবুলপন্থীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রেজ্জাকের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছিল আরাবুলের। রেজ্জাক বলেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশে একজোট হয়ে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলাম। এ দিন যে কী হল, বুঝতে পারলাম না!’’ এলাকার তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদের সঙ্গে আরাবুলের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। তিনি এ দিন মন্তব্য করতে চাননি।
পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে জমি রক্ষা কমিটির সঙ্গে আরাবুলের লড়াই চলছে আড়াই বছর ধরে। ২০১৭-এর ১৭ জানুয়ারি গ্রিড-সংলগ্ন পোলেরহাটে গুলি চলে। মারা যান মফিজুল এবং আলমগির নামে দু’জন। মফিজুলের ভাই এন্তাজুল ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এ দিন আরাবুল-বাহিনী তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। এলাকার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘জমি রক্ষা কমিটির মতো ছোট একটি সংগঠন তাঁকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করছে, এটাই মানতে পারছিলেন না আরাবুল। চাপ বাড়িয়েছিল রেজ্জাক-কাইজারদের ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা। তাই মরিয়া হয়ে পড়েন আরাবুল।’’
আরাবুলের তালুক পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েতের দক্ষিণ গাজিপুরে আরাবুলের বাড়ি। জমি রক্ষা কমিটির অভিযোগ, আরাবুল-বাহিনীর সন্ত্রাসে ১৬ আসনের ওই পঞ্চায়েতে এক জন বিরোধী প্রার্থীও মনোনয়ন দিতে পারেননি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য মনোনয়ন দেন জমি রক্ষা কমিটির ৮ জন। পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনেও এক জন দাঁড়ান। ফলে, ওই ৯টি আসনে ভোট হবে। সেখানে হারার আশঙ্কা ঘনিষ্ঠ মহলে প্রকাশ করেছিলেন আরাবুল। তাই এ দিনই ডিভিশন বেঞ্চে ওই মনোনয়নগুলি বাতিলের আবেদন জানান। তা খারিজ হয়। তার পরেই গুলিতে খুন হাফিজুল মোল্লা।
আগেও বারবার আরাবুলের বিরুদ্ধে দুষ্কর্মের অভিযোগ উঠেছে। কখনও পুলিশকে মারধর, কখনও ‘বেদিক ভিলেজ’-এর জন্য কৃষিজমি দখল, কখনও ভাঙড় কলেজের শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারা, ২০১২-য় তৎকালীন সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লাকে মারধর...। কিন্তু কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেনি দল। রেজ্জাক-কাণ্ডে তখনও আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ছ’বছরের জন্য দল তাঁকে সাসপেন্ডও করে। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যে ফের তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy