আপাতত পুরভোটে না-যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সরকার ভরা বর্ষার কথা বললেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন আগেই তা খণ্ডন করেছে। এ বার তারা আদালতের মাধ্যমে সরকারকে প্রস্তাব দিল, রাজ্যের ১৭টি পুরসভার নির্বাচন ৩১ অগস্ট করা যেতে পারে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পালের আদালতে বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি। যদিও রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। কমিশনের আইনজীবী তখন জানান, প্রস্তাব গ্রহণ করা বা না-করা সরকারের সদিচ্ছার বিষয়।
ঠিক সময়ে ওই ১৭টি পুরসভার নির্বাচন না-হওয়ায় কমিশন হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছে। এ দিন সেই মামলার শুনানি ছিল। কেন ওই সব পুরসভার নির্বাচন এখন করা যাচ্ছে না, তার বিভিন্ন কারণ জানিয়ে সরকারের তরফে পুর দফতরের এক যুগ্মসচিব চিঠি দিয়েছেন কমিশনকে। তাতে অন্যান্য কারণের সঙ্গে বর্ষায় ভোট করার অসুবিধার কথাও বলা হয়। কমিশনের কৌঁসুলি আগের দিনের শুনানিতেই জানিয়ে দেন, বর্ষায় এ রাজ্যে আগেও পুরভোট হয়েছে। এখন পুরভোট করার ক্ষেত্রে ওই সচিব অন্য যে-সব অসুবিধার কথা লিখেছেন, তা-ও খণ্ডন করেন কমিশনের কৌঁসুলি। পরে সরকারের তরফে এই ব্যাপারে হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করা হয়েছে।
কমিশনের আইনজীবী এ দিন আদালতে জানান, হলফনামায় সরকার জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি পুরসভার পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে। তার উপরে এখন বর্ষাকাল। সব মিলিয়ে ওই পুরসভাগুলির নির্বাচন করাতে রাজ্য সরকারকে আরও কয়েক মাস সময় দেওয়া হোক। আইনজীবী আদালতে জানান, সরকার আগামী বছরের মে-জুনে একসঙ্গে ৮১টি পুরসভার নির্বাচন করতে চাইছে। কিন্তু এখন ভোট করতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তার পরেই কমিশনের তরফে পুরভোটের সম্ভাব্য নির্ঘণ্ট পেশ করেন বিয়ানি।
কমিশনের প্রস্তাব হিসেবে আইনজীবী জানান, রাজ্য সরকার ৩১ জুলাই পুর নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করুক। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ধার্য হোক ৬ অগস্ট। ৭ অগস্ট তা পরীক্ষা করা হোক এবং ৯ অগস্ট মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ নির্দিষ্ট করা হোক। আর পুর নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হোক আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
জিপি অশোকবাবু কমিশনের ভোট-নির্ঘণ্ট সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। বিয়ানি বলেন, এই প্রস্তাব মানা বা না-মানা সরকারের অভিরুচি। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, যথাসময়ে ১৭টি পুরসভার নির্বাচন করার কথা রাজ্য সরকারকে একাধিক বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন করা তো দূরের কথা, সরকার এই বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করছে না। অথচ পুরভোটের ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করার কথা বলা আছে পুর আইনে। সংবিধানে বলা আছে, কোনও পুর বোর্ডের মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি হবে না। পরিস্থিতি যেমনই হোক, তার মধ্যে পুর নির্বাচন করতে হবে। এটাই সংবিধানসম্মত। কমিশন চায়, সেই নির্দেশ মেনেই সময়মতো ভোট করা হোক। নির্বাচন না-হওয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন কমিশনের আইনজীবী।
নির্দিষ্ট সময়ে ওই সব পুরসভার নির্বাচন চেয়ে বিজেপি-র পক্ষ থেকে এ দিনই বিচারপতি পালের আদালতে পৃথক একটি আবেদন জানানো হয়েছে। বিজেপি-র আইনজীবী কৌশিক চন্দ্র জানান, আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy