Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাজার মন্দা, মুখ ভার জন্মাষ্টমীর হাটের

হাট বসেছে হরিরাম গোয়েন্কা স্ট্রিটে! উপলক্ষ জন্মদিন। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দীর্ঘ দিন ধরে বসছে এই বিশেষ হাট। রাস্তার দু’ধারে স্থায়ী-অস্থায়ী অসংখ্য দোকান।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:৫৪
Share: Save:

হাট বসেছে হরিরাম গোয়েন্কা স্ট্রিটে!

উপলক্ষ জন্মদিন।

স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দীর্ঘ দিন ধরে বসছে এই বিশেষ হাট। রাস্তার দু’ধারে স্থায়ী-অস্থায়ী অসংখ্য দোকান। আর সেখানেই থরে থরে সাজানো জার্মান সিলভারের বাসনপত্র, নানা রকমের দোলনা, সলমার চুমকির কাজ করা ঘাগরা, ওড়না, কিংবা তাক লাগানো গয়নাগাটি। শুধু ছবিটা এ বার কিছুটা আলাদা।

এ বার বাজার মন্দা। বাজারে তাই ক্রেতার সংখ্যা কম। এমনটাই দাবি এলাকার বেশির ভাগ দোকানির। অন্যান্য বারের তুলনায় ক্রেতা কম আসায় বেচাকেনা যেমন কম, তেমনই ভিড়ও কম চোখে পড়ছে এ বার।

প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর সাত দিন আগে থেকেই রবীন্দ্রসরণি সংলগ্ন হরিরাম গোয়েন্কা স্ট্রিটের এই বাজারি পাড়াটা যেন এক রঙিন পোস্টার হয়ে ওঠে। নানা রঙের, নানা বর্ণের সমাহারে জমে ওঠে বাজারটি। অন্যান্য বার বেচাকেনার বহর দেখলে চমকে যেতে হয়। এ বার কিন্তু সেই বাজার ক্রেতার অভাবে অনেকটাই ফাঁকা। বড় দোকানগুলিতে হাতে গোনা কিছু ক্রেতা। ছোট ছোট দোকানগুলিতে দু’-এক জন ক্রেতা যাও বা ঢুকছে‌ন তাঁরাও দরদাম করেই বিদায় নিচ্ছেন। তাই আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে এখানকার ব্যবসায়ীদের শিয়রে।

যেমন, কুলদীপ শৃঙ্গার ভাণ্ডারের কৃষ্ণা সোনি বলছিলেন, ‘‘অন্য বারের তুলনায় এ বার বেচাকেনা কম হচ্ছে। তার উপর বুধবারের কর্মনাশা বনধের জন্য বেচাকেনারও ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য বার জন্মাষ্টমীর দিন দশক আগে থেকে এখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। এ বার ছবিটা ভিন্ন। উৎসবের কয়েক দিন আগেও বাজার ফাঁকা।’’

তেমনই জার্মান সিলভারের ব্যবসায়ী আর চাওলা হতাশার সুরেই শোনাচ্ছিলেন এ বারের বেচাকেনার দুর্দশার কথা। গত বছর পর্যন্ত ভালই বিক্রি হত দোলনা, সিংহাসন, অথবা নানা ধরনের বাসনপত্র। এ বার তিন দিন আগেও বাজার ফাঁকা। আগের তুলনায় কম এসেছে মোগলসরাই-এর সেই বিখ্যাত কাঠের পুতুল। কাঠের সেপাই কিংবা দোলনা এলেও আসেনি ‘রামদরবার’ কিংবা ‘অনন্তশয়ান’। বিক্রেতারা জানালেন, ও সবের নাকি চাহিদা নেই বাজারে। এখানেই রাস্তার ধারে বিভিন্ন ধরনের দোলনার দোকান দিয়েছেন বিনোদ শোনকর। তাঁর কথায়: ‘‘এগুলি উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনাতে যা খরচ হয় বেচাকেনা ঠিকঠাক না হলে লাভের মুখ দেখা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এখনও পর্যন্ত বাজার জমেনি। ভরসা তাই উৎসবের আগের দিন।’’

বাড়তি উপার্জনের আশায় এখানে অনেকেই দোকান দেন, তবে কেনাবেচা আগের তুলনায় কমায় এ বার বেশির ভাগ দোকানির মুখ ভার।

তবে পুতুল বিক্রেতাদের মতে, বাজার এ বারেও ভাল। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলে প্রতি বছরই নতুনত্ব থাকে। আর তাই সময়ের সঙ্গে বাড়ছে কৃষ্ণনগরের পুতুলের দামও। পুতুলবিক্রেতা নিরাজ রাও জানালেন, ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা দামের পুতুল এখানে বিক্রি হয়। এই সময় কম করে ২০-২৫ হাজার টাকার বেচাকেনাও হয়।

অন্যান্য দোকানে থরে থরে সাজানো ‘কারাগারে কৃষ্ণের জন্ম’, ‘বাসুদেব-সহ কৃষ্ণ’, ‘মাখনচুরি’, ‘পুতনাবধ’, ‘কালীয়দমন’ থেকে ‘রথের মধ্যে কৃষ্ণ-অর্জুন’। তবে কিছু কিছু মাটির পুতুলে পরিবর্তন দেখা গেল। হঠাৎ দেখলে মনে হবে জয়পুরের মার্বেলের মূর্তির অনুকরণে এগুলি তৈরি হয়েছে। ইদানীং কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের কিছু কাজে কি প্রাদেশিকতার ছোঁয়া লেগেছে? পুতুল ব্যবসায়ী মহেশ কুমার জানালেন, মূলত অবাঙালি সম্পদায়ের ক্রেতারা এখানে কেনাকাটা করেন বলেই আলাদা বায়না দিয়ে এগুলি তৈরি করা হয়। এই সব মাটির পুতুলের দাম পড়তে পারে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।

কী বলছেন ক্রেতারা?

জয়পুরী চুমকির কাজ করা দামী ঘাগরা দেখতে দেখতে অনুরাধা জয়সবাল বলছিলেন, ‘‘এখানকার দোকানগুলিতে প্রতি বছর ঠাকুরের সাজেও থাকে নতুনত্ব। তবে দাম কিছুটা বেড়েছে।’’ তেমনই গৃহদেবতার সাজপোশাক কিনতে এসে প্রীতম বেরিওয়ালা জানালেন, ‘‘সাজে বাহারি নতুনত্ব এলেও দাম বেড়েছে। আর তাই হয়তো ক্রেতাদের সংখ্যা কমছে।’’ গৃহদেবতা গোপালের জন্য আমেরিকান ডায়মন্ডের বিশেষ গয়নার সেট কিনতে এসে মধু কানোরিয়া বলছিলেন, ‘‘এক সেট গয়নার দাম পড়ে কম করে ১৫০০-২০০০ টাকা। সেটা অনেকের কাছেই ব্যয়বহুল।’’

তবে বাজার যে খারাপ তা মানতে নারাজ পোশাক ও সাজ ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের মতে, জন্মাষ্টমীর দু’দিন আগে থেকে সবচেয়ে ভাল বেচাকেনা শুরু হয় যা শেষ হয় জন্মাষ্টমীর সন্ধ্যায়। সাজ ব্যবসায়ী কৃষ্ণা সোনির কথায়, প্রতি বছরই নতুনত্ব থাকে ঠাকুরের সাজে ও গয়নায়। যেমন এ বার চলছে ছাতা ও টুপির আকৃতির মুকুট, কুন্দন জড়াউ, বেলবুটি ইত্যাদি। এর পাশাপাশি চলছে আমেরিকান ডায়মন্ড কিংবা ঐতিহ্যশালী জরির গয়নাও। অন্য এক ব্যবসায়ী মনোজ দামানি জানালেন, এ বার বাজারে ভাল চলছে ফুল, ময়ূর কিংবা কলস আকৃতির পোশাক ও ঘাগরা।

অন্য দিকে, জন্মাষ্টমী কাছেপিঠে এলেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে সত্যনারায়ণ পার্কের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে। সারা বছর যা-ই চলুক জন্মাষ্টমী কিংবা দীপাবলিতে আসল ঘিয়ের মিষ্টি চাই কলকাতা নিবাসী অবাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের। মোতিপাক, বাদামবরফি, কাজুর বরফি, কিংবা লাড্ডুর বিক্রি দেখে তাই তাক লেগে যেতেই পারে ভোজনরসিক বাঙালির।

তাই জন্মাষ্টমীর এই বাজারে শেষবেলার বেচাকেনা ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে কি না এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE