Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বর্ধমানকেই কেন বাছল জঙ্গিরা, প্রশ্ন ডোভালের

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এত জেলা থাকা সত্ত্বেও জঙ্গিরা বর্ধমানে ডেরা বেঁধেছিল কেন, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে গেলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ডোভালের মতে, বর্ধমানে বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতদের পুরনো ‘লিঙ্ক’ বা ঘাঁটি রয়েছে। সেই সূত্রেই জঙ্গিদের পক্ষে বর্ধমানে কিছু পরিকাঠামোগত সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে, যা অন্যত্র পাওয়া যেত না।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এত জেলা থাকা সত্ত্বেও জঙ্গিরা বর্ধমানে ডেরা বেঁধেছিল কেন, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে গেলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ডোভালের মতে, বর্ধমানে বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতদের পুরনো ‘লিঙ্ক’ বা ঘাঁটি রয়েছে। সেই সূত্রেই জঙ্গিদের পক্ষে বর্ধমানে কিছু পরিকাঠামোগত সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে, যা অন্যত্র পাওয়া যেত না। তাই বর্ধমান শহরে খাগড়াগড়ের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় বসে জঙ্গিরা বিস্ফোরক বানানোর ‘সাহস’ দেখাতে পেরেছে বলে মনে করছেন ডোভাল।

সোমবার বর্ধমানে দেড় ঘণ্টা কাটিয়ে, কলকাতায় অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে ডোভাল তদন্তের ক্ষেত্রে কয়েকটি দিক নির্দেশ করে গিয়েছেন। তার মধ্যে যেমন পুরনো ঘাঁটি খোঁজার দিক রয়েছে, তেমনই আবার খাগড়াগড়, বাবুরবাগ, বাদশাহি রোড, শিমুলিয়ায় জমি-বাড়ির মালিকদের আরও বিস্তারিত জেরার নির্দেশ রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সারা দিন এই রাজ্যে কাটিয়ে দিল্লি ফেরার সময়ে ডোভাল প্রশ্ন তোলেন, কেন বর্ধমান? সূত্রের খবর, তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলা আছে পশ্চিমবঙ্গে। তার মধ্যে যেমন উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া রয়েছে তেমনই রয়েছে মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলাও। অথচ বর্ধমানের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই। তা হলে বাংলাদেশে বিস্ফোরক পাচারের জন্য কেন বর্ধমানকে বেছে নেওয়া হল? তাঁর যুক্তি, নদিয়া-সহ সীমান্তবর্তী যে কোনও জেলাতে বসেই বিস্ফোরক বানাতে পারত জঙ্গিরা। সেই সব জেলা থেকে তা বাংলাদেশে চালান করতে অনেক বেশি সুবিধা হতো। তা হলে বনগাঁর মতো জায়গা থাকতেও কেন তারা বেছে নিল বর্ধমানকে? তা-ও আবার শহরের কেন্দ্রস্থলকেই?

তদন্তকারীরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ‘কেন বর্ধমান’ তা বোঝানোর চেষ্টা করেন ডোভালকে। কিন্তু ডোভালের পাল্টা প্রশ্ন, বর্ধমান থেকে নদিয়া হয়ে বাংলাদেশে বিস্ফোরক পাচারের ঝুঁকি কেন নেওয়া হল? তাঁর মতে, এই ধরনের বিস্ফোরক বহনের সময়ে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। তাই জঙ্গিরা চেষ্টা করে বিস্ফোরক নিয়ে যতটা সম্ভব কম দূরত্ব যাতায়াত করতে। সেটা নদিয়া, মুর্শিদাবাদে বসে করাটা সহজ ছিল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বর্ধমান শহরে বা শিমুলিয়ায় যে সব জমি-বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই জঙ্গি কার্যকলাপ চালানো হচ্ছিল, তাদের মালিক সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করার উপরেও জোর দেন ডোভাল। শিমুলিয়ায় যার জমিতে মাদ্রাসা তৈরি হল তাকেও আলাদা করে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। রাজ্য পুলিশ এবং এনআইএ অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিনি এ কথা জানান। তাঁর মতে, কাদের সুপারিশে এদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হল তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। যারা সুপারিশ করেছিল, তারা জঙ্গিদের কী ভাবে চিনল তা-ও জানা দরকার। তাঁর যুক্তি, এ ভাবে এক জনের সঙ্গে অন্যজনের যোগের সূত্র ধরে বর্ধমানে জঙ্গিদের ডেরা বাঁধার কারণের মূলে পৌঁছনো সম্ভব। রাজ্য পুলিশ এই সব জমি-বাড়ির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে জানতে পেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ডোভাল।

বাংলাদেশেও কি এনআইএ

সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র একটি দল বাংলাদেশ যেতে পারে। কেন্দ্রের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এই খবর জানিয়েছে সংবাদসংস্থা পিটিআই। সূত্রটির বক্তব্য, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে বাংলাদেশ-যোগের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। এমনকী চার দফায় ১২০টি আইইডি বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, এমন মারাত্মক তথ্যও জানা গিয়েছে। খাগড়াগড়-কাণ্ডে পলাতক দুই পাণ্ডা কওসর ও ইউসুফ আদতে বাংলাদেশি। উপরন্তু, ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে সম্প্রতি ধরা পড়েছে জামাতুল মুজাহিদিনের দুই জঙ্গি আসফ আদনান ও ফাজি ইলাহি তানজিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের রিপোর্ট হাতে পেতে চাইছে দিল্লি। সূত্রটির বক্তব্য, “এই সব কথা মাথায় রেখেই যত দ্রুত সম্ভব গোয়েন্দাদের বাংলাদেশ যাওয়া দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE