ব্যাঁটরা থানায় আনা হচ্ছে অভিযুক্ত শর্মিষ্ঠাকে। নিজস্ব চিত্র
মনুয়া-কাণ্ডের ছায়া এ বার হাওড়ায়! প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুন করানোর অভিযোগ উঠল ব্যাঁটরা এলাকার এক মহিলার বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে ব্যাঁটরার নটবর পাল রোডের ঘটনা। মৃতের নাম রতন নাথ (৪২)। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী, বছর ছত্রিশের শর্মিষ্ঠা নাথ ও তাঁর প্রেমিক, তিরিশ বছরের রাজীব মণ্ডল ওরফে রাজুকে। বাড়ির পোষা কুকুরের দেখাশোনার কাজ করতেন রাজু।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজুর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে প্রায়ই শর্মিষ্ঠা আর রতনের মধ্যে গোলমাল হতো। শনিবার সন্ধ্যায় তা চরমে পৌঁছয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, নটবর পাল রোডের ধারে পাঁচ কাঠা জমির উপরে একটি গ্যারাজ রয়েছে রতনের। গ্যারাজ লাগোয়া বাড়িতেই থাকতেন তাঁরা। শনিবার তুমুল গন্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশ। গোলমাল থেমেও যায়। তদন্তকারীদের দাবি, তার পরেই স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করতে শুরু করেন শর্মিষ্ঠা। তাই পুলিশ চলে যাওয়ার পরে, রাজুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে পাঠান শর্মিষ্ঠা। তখনই রতনকে খুনের পরিকল্পনা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান।
কী ভাবে ঘটল খুনের ঘটনা?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার গ্যারাজে বিশ্বকর্মা পুজোর তোড়জোড় চলছিল। সন্ধেয় ঝামেলা থেমে যাওয়ার পরে সেখানে গ্যারাজের কর্মীদের সঙ্গে মদের আসর বসান রতন। সেখানে যোগ দেন রাজু এবং শর্মিষ্ঠাও। রাতে সব কর্মী একে একে চলে যান। রতন, রাজু ও শর্মিষ্ঠা অবশ্য ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, রাত বারোটা নাগাদ বাড়ির পিছনে একটি ফাঁকা জায়গায় রতনকে নিয়ে যান রাজু। প্রথমে মদের বোতল দিয়ে রতনের মাথায় মারেন রাজীব। বেলচা দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধরও করেন। অনুমান, তখনই মৃত্যু হয় রতনের।
এর পরে প্রায় তিন ঘণ্টা বাড়িতেই ছিলেন শর্মিষ্ঠা ও রাজু। শর্মিষ্ঠার ১৪ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ঘটনার সময়ে সে বাড়িতে ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর পরে রাত তিনটে নাগাদ ব্যাঁটরা থানায় গিয়ে শর্মিষ্ঠা জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রতনকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকায় আটক করা হয় রাজীবকে। জেরা করার পরে গ্রেফতার হন তিনি। পরে রবিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় শর্মিষ্ঠাকে।
তবে এলাকায় যে এমন কিছু যে কোনও সময় ঘটতে পারে, স্থানীয়দের মধ্যে তা নিয়ে আশঙ্কা ছিলই । তাঁদের অভিযোগ, টিকিয়াপাড়া ও নোনাপাড়া এলাকার দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছিল ওই গ্যারাজ। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রায়ই রতনের গ্যারাজে দুষ্কৃতীদের মদের আসর বসত। আসরের মধ্যমণি থাকতেন শর্মিষ্ঠাই। গন্ডগোলও হতো প্রায়।’’ ওই এলাকায় প্রোমোটারি চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে দাবি স্থানীয়দের। সম্পর্কের টানাপড়েন পাশাপাশি ঘটনায় প্রোমোটারি চক্রের যোগও থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy