Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সামোসা থেকে সিগারেট, সঙ্কেতেই কারবার

বন-কর্তারা বলছেন, হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুকে এ সব সঙ্কেতের আ়ড়ালে বন্যপ্রাণীর দেহাবশেষ পাচারের কারবার চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে কয়েক জন চোরাকারবারিকে পাকড়াও করার পরে এ কথা জানা গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৬
Share: Save:

কেউ বলছে, ঝকঝকে ‘জ্যাকেট’ এসেছে। দাম একটু বেশি পড়বে। কেউ আবার এক বস্তা ‘সিক্কা’-র বরাত দিচ্ছে। কারও আবার চটজলদি দু’টো ‘সামোসা’ চাই।

আপাতভাবে এ সবের মধ্যে দোষের কিছু নেই। তবে বন-কর্তারা বলছেন, হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুকে এ সব সঙ্কেতের আ়ড়ালে বন্যপ্রাণীর দেহাবশেষ পাচারের কারবার চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে কয়েক জন চোরাকারবারিকে পাকড়াও করার পরে এ কথা জানা গিয়েছে।

বন দফতর সূত্রের খবর, ‘জ্যাকেট’ মানে বাঘ বা চিতাবাঘের চামড়া। ‘সিক্কা’ মানে প্যাঙ্গোলিনের আঁশ বা। ‘সামোসা’র অর্থ গন্ডারের খড়্গ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি চার জন চোরাকারবারিকে ধরার পরে এই তথ্য প্রথম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। হোয়্যাটসঅ্যাপে সেই সঙ্কেতের সূত্র ধরেই উত্তরবঙ্গে বন দফতরের রেঞ্জার সঞ্জয় দত্তের নেতৃত্বে একটি দল আরও চার জনকে ধরেছে। তাদের কাছ থেকে মেঘলা চিতাবাঘের চামড়াও মিলেছে।

বন দফতর সূত্রের খবর, ধৃতদের হোয়্যাটসঅ্যাপ ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, এই ব্যবসার জাল চিন, মায়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান এবং নেপালে ছড়িয়ে রয়েছে। রবিবার সকালে যে মেঘলা চিতাবাঘের চামড়াটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটিকে ভূটানে মারা হয়েছে। তার আগে যেটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি শিকার করা হয়েছিল সিকিমে । এই ব্যবসায় সমাজের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী এবং শিক্ষিত লোকের যোগসূত্র জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বন দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘বেশ কয়েকজন ডাক্তার, ব়ড় মাপের ব্যবসায়ী জড়িত। কারণ, এই ব্যবসায় প্রচুর লাভ। রবিবার উদ্ধার করা মেঘলা চিতাবাঘের চামড়াটি ১ লক্ষ টাকায় কিনেছিল ধৃতেরা। ৯ লক্ষ টাকায় সেটি বিক্রির রফা হয়েছিল ।’’

চোরাসঙ্কেত

সঙ্কেত কী

সামোসা গন্ডারের খড়্গ

সিগারেট হাতির দাঁত

মুলো হাতির দাঁত

জ্যাকেট বাঘ বা চিতাবাঘের চামড়া

সিক্কা প্যাঙ্গোলিনের আঁশ

তোলা ভালুকের পিত্ত

বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাঘের চামড়া এবং হাতির দাঁত মূলত আফ্রিকা, ইউরোপ এবং আরব দুনিয়ার কিছু দেশে শৌখিন জিনিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। গন্ডারের খড়্গ, প্যাঙ্গোলিনের আঁশের বরাতও বেশি চিন থেকেই আসে। বাঘ বা চিতাবাঘের নখ, হাড় ব্যবহার করা হয় চিনের প্রাচীন ওষুধ তৈরিতে। কিছু ক্ষেত্রে ভালুকের পিত্ত এবং চামড়া, নখের মতো দেহাবশেষেরও চাহিদা এই চোরাকারাবারে রয়েছে।

তবে অনেকেই বলছেন, কোটি-কোটি টাকার সাপের বিষ বারবার উদ্ধার হলেও সেই চক্রের চাঁইদের ধরতে পারেনি বন দফতর বা পুলিশ। এ ক্ষেত্রেও চুনোপুঁটি ধরেই তদন্ত শেষ হবে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE