Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শীতের গায়ে উঠল বর্ষাতি

উলিকোটের হাইনেক কিংবা রঙিন ফুলস্লিভে দিব্যি রোদ পোহাতে শুরু করেছিল নবীন ডিসেম্বর। কিন্তু সেই সাধের শীতে বাদ সাধল বৃষ্টি। অসময়ে আবার সে এসেছে ফিরিয়া।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০৩
Share: Save:

সোয়েটার বনাম রেনকোট: সবে ক্রিজে থিতু হচ্ছিল শীত। জিরেন রসের জন্য গাছ বাছাই শুরু করছিলেন শিউলিরা। আলমারি থেকে সদ্য বের করা সোয়েটার-জ্যাকেট-টুপির গা থেকে ন্যাপথলিনের গন্ধ এখনও যায়নি। উলিকোটের হাইনেক কিংবা রঙিন ফুলস্লিভে দিব্যি রোদ পোহাতে শুরু করেছিল নবীন ডিসেম্বর। কিন্তু সেই সাধের শীতে বাদ সাধল বৃষ্টি। অসময়ে আবার সে এসেছে ফিরিয়া। শীতঘুমের প্রস্তুতি শিকেয় তুলে ফের ছাতা-বর্ষাতি-রেনকোটকে নামতে হল মাঠে। শুক্রবার থেকে নাছোড় বৃষ্টিতে নাজেহাল নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ। কখনও ঝেঁপে, কখনও ইলশেগুড়ির দাপটে বিরক্ত দুই জেলার প্রশ্ন, ‘মাসে দু’বার করে এমন নিম্নচাপের গুঁতো আর কত দিন সহ্য করতে হবে?’

বেজার চাষি: শুরুটা দুর্গাপুজো থেকে। একের পর এক নিম্নচাপ চলছেই। যার জেরে চাষের ক্যালেন্ডার কেবল পিছিয়ে যাচ্ছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি নিম্নচাপের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া শীতকালীন আনাজ ফের জমিতে বুনেছিলেন চাষিরা। সে ফসল তৈরি হওয়ার মুখে ফের বৃষ্টিতে কপি, মুলো, পালং শাকের মতো আনাজের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা চাষিদের। গম চাষ করতে না পেরে অনেকেই সর্ষে চাষে ঝুঁকেছিলেন। মুর্শিদাবাদের এক চাষি আমজাদ শেখ বলেন, “এখন সর্ষের ফুল আসার সময়। এই বৃষ্টিতে সব ফুল ঝরে যাবে।” বহু জায়গায় ধান কেটে জমিতে রাখা আছে। ক্ষতি হবে তারও। বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “এই আবহাওয়ায় ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি পাবে। ছত্রাকজনিত নানা রোগ দেখা দেবে। রোদ উঠলেই গাছে গোড়াপচা রোগ বাড়বে। নষ্ট হওয়া আনাজ তৈরি হতে সময় নেবে।” তবে পার্থবাবুর দাবি, এই বৃষ্টি দু’এক দিনের মধ্যে কমে গেলে ডালের পক্ষে ভাল হবে।

ছুটি ভেসে গেল: একে ডিসেম্বর। তা-এ শনি-রবি! ২৫ ডিসেম্বর থেকে নতুন বছর ১ তারিখ পর্যন্ত ভিড় এড়াতে এই সপ্তাহেই বেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল অনেকের। নিম্নচাপের সৌজন্যে সেই ছুটি ভিজে চুপসে গিয়েছে। বাড়িতে বসেই বৃষ্টিকে শাপশাপান্ত করছেন পর্যটকেরা। নবদ্বীপ, মায়াপুর বেথুয়াডহরি কিংবা মুর্শিদাবাদের মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে প্রত্যাশিত ভিড় ছিল না এই মরসুমে। শনি-রবিবারে পর্যটকদের ভিড়ে মায়াপুর ইস্কনে পা রাখা যায় না। কিন্তু রবিবার ছিল ঠিক উল্টো চিত্র। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ দেবনাথের আক্ষেপ, “ডিসেম্বরের মূল্যবান শনি-রবি বৃষ্টিতে ভেসে গেল।”

সাত পাকে বাধা: এই অঘ্রানেই নেই নেই করে বিয়ের দিন রয়েছে বেশ কয়েকটি। শনি-রবিবারও বিয়ে আর প্রীতিভোজের দিন ছিল। নিম্নচাপের দৌরাত্ম্যে পদে পদেই বাধার মুখে পড়তে হয় বিয়েবাড়ির লোকজনকে। সঙ্গে হিমশিম খাচ্ছেন কেটারিংয়ের লোকজনও। রবিবার নবদ্বীপে এক কাউন্সিলর গোষ্ঠ ভট্টাচার্যের ছেলের বিয়ে। গোষ্ঠবাবু বলেন, “কী অবস্থা বলুন তো! মঙ্গলবার বৌভাত। সে দিনও কি রোদ উঠবে না?’’

সহ প্রতিবেদন: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়, সুজাউদ্দিন, কৌশিক সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter Rain Weather বৃষ্টি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE