Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

স্টেশনে হারানো মেয়ের বর জুটল থানায়

আশার উপরে মায়া পড়ে গিয়েছিল মুকুন্দের। দুর্দশা থেকে মুক্তি খুঁজতে গিয়ে মেয়েটা যে আটকে পড়েছে হোমের ঘেরাটোপে! তাই তাঁর থানারই এক সিভিক ভলান্টিয়ার যে দিন এসে বলল, আশাকে সে বিয়ে করতে চায়, তিনি খুশিই হয়েছিলেন।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০৫:৪৯
Share: Save:

কাজের খোঁজে শিলিগুড়ি থেকে এসে শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিল মা-মরা মেয়েটা।

তখন সবে শীতের শুরু। বসন্তে সে নতুন ঘর পেল।

শান্তিপুরে কালীমন্দিরে মালাবদল হল। বর সিভিক ভলান্টিয়ার, বরকর্তা পুলিশের ওসি। সরকারি হোম ছেড়ে মেয়েটা চলল শ্বশুরবাড়ি।

মেয়ের নাম আশা। শিলিগুড়ির বাঘা যতীন কলোনির ছেড়ে গত নভেম্বরে সে বেরিয়েছিল অনেক দুঃখেই। মা মারা যান, সে তখন ছোট্ট। বাবা অধীর বিশ্বাস গাড়ি চালান। তিনি ফের বিয়ে করেছেন। কিন্তু নতুন মা তাকে নিজের করে নেননি। সংসারে নিত্য অশান্তি।

আশা বুঝেছিল, নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া পথ নেই। দাঁতে-দাঁত চেপে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে বাঘা যতীন বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। এক বছরের নার্সিং ট্রেনিংও নিয়েছে। সেখানেই পরিচয় হয় দুই মহিলার সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গেই সে চড়ে বসেছিল কলকাতার ট্রেনে। কত হাসপাতাল-নার্সিংহোম সেখানে, একটা আয়ার কাজও কি জুটবে না?

শিয়ালদহ স্টেশনের ভিড়েই সঙ্গীদের থেকে ছিটকে গেল মেয়েটা। খোঁজাখুঁজির পরে কোথায় যাবে না বুঝে উঠে বসেছিল গেদে লোকালে। ট্রেনেই আলাপ কৃষ্ণগঞ্জের জয়ঘাটা পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক ব্রততী নন্দী ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি ছিলেন মুকুন্দ চক্রবর্তী নামে এক ভদ্রলোক। শিলিগুড়িতে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু বাড়ি তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়নি। ঘূর্ণির সরকারি হোমে তার ঠাঁই হয়।

আশার উপরে মায়া পড়ে গিয়েছিল মুকুন্দের। দুর্দশা থেকে মুক্তি খুঁজতে গিয়ে মেয়েটা যে আটকে পড়েছে হোমের ঘেরাটোপে! তাই তাঁর থানারই এক সিভিক ভলান্টিয়ার যে দিন এসে বলল, আশাকে সে বিয়ে করতে চায়, তিনি খুশিই হয়েছিলেন।

‘‘তবু ছোকরাকে বললাম, ‘ভেবে দেখো বাপু, এ মেয়েকে বিয়ে করে তুমি কী পাবে? পরে পস্তাবে না তো?’ সে বলল, মেয়েটার কষ্ট দেখে ওর নাকি মনখারাপ হয়,’’ বুধবার বিয়ের আসরেই মুচকি হেসে বলেন মুকুন্দ, ‘‘ওতেই যা বোঝার বুঝে যাই!’’ ‘ছোকরা’র নাম বুদ্ধদেব বিশ্বাস। বাড়ি মাজদিয়ার হালদারপাড়ায়। সে হোমে গিয়ে আশার মত নিয়ে আসে। শিলিগুড়ির বাড়িতেও খবর পাঠানো হয়। কেউ অমত করেননি। কৃষ্ণনগরের মহকুমাশাসক ইউনুস রিসিন ইসমাইলের কাছে দরবার করে বিয়ের অনুমতি আদায় করেন মুকুন্দ। এরই মধ্যেই বদলির অর্ডার। মুকুন্দ চলে যান নদিয়ারই ধুবুলিয়া থানায়। তাতে আয়োজন আটকায়নি। অষ্টমঙ্গলায় মেয়ে-জামাই গিয়ে উঠবে ধুবুলিয়ায় ওসি-র আবাসনেই।

বরকে খুঁটে বেঁধে রওনা দেওয়ার আগে আশার হাতে রাধা-কৃষ্ণের যুগলমূর্তি ধরিয়ে দিয়েছেন মুকুন্দ।

আজ যে দোল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE