Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যৌনপেশায় নামতে চাপ স্বামীর,পালিয়ে গেলেন তরুণী

রবিবার তালাবন্ধ শ্বশুরবাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে তাজমিরা কাঁদছেন, ‘‘আনন্দেই আছি! স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির কথা মতো যৌনপেশায় নামতে রাজি না হওয়ায় বেধড়ক মেরে বাইরে বের করে দিল।

তালাবন্ধ বাড়ির বাইরে বসে তাজমিরা। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

তালাবন্ধ বাড়ির বাইরে বসে তাজমিরা। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

আলাপ ফোনে। সেই সূত্রেই পরিণয়। বাবা-মা দু’জনেই প্রয়াত। বছর ছাব্বিশের তাজমিরা বিবি ভেবেছিলেন, শ্বশুর-শাশুড়িও তো বাবা-মায়ের মতোই। তাদের সবাইকে নিয়ে তিনি আনন্দে থাকবেন।

রবিবার তালাবন্ধ শ্বশুরবাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে তাজমিরা কাঁদছেন, ‘‘আনন্দেই আছি! স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির কথা মতো যৌনপেশায় নামতে রাজি না হওয়ায় বেধড়ক মেরে বাইরে বের করে দিল। দরজায় তালা দিয়ে সবাই চলেও গেল। স্বামী কেরলে থাকে। বহু বার তাকে ফোন করেছি। ধরেনি।’’

আরও পড়ুন: পুলিশকে ধোঁকা দিতে গুরুঙ্গদের অস্ত্র এখন মোবাইল

মুর্শিদাবাদের বিলাসপুরে তাজমিরার পড়শিরা বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েটাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ঝড়-জলের রাতে বাইরেই পড়ে ছিল। সকালে উঠে আমরা জানতে পারি।’’ তার পর থেকে তাঁরাই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আশ্রয় দিতে চাইলে তাজমিরা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মরতে হলে এখানেই মরব। কিন্তু এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

খবর পেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকে ছুটে এসেছেন ওই তরুণীর দাদা চাঁদ মণ্ডল। শনিবার রাতে দাদাকে সঙ্গে নিয়ে ডোমকল থানায় স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন তাজমিরা। তাঁর অভিযোগ, স্বামী রবিউলের কেরলে হোটেলের ব্যবসা আছে। সেখানে বহু তরুণীকে নিয়ে গিয়ে জোর করে যৌনপেশায় নামানো হয়। ওই একই কারণে তাঁকেও কেরলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল রবিউল। শ্বশুর-শাশুড়ি ও দেওরও তাঁকে জোর করছিল। কিন্তু তাজমিরা যেতে না চাওয়ায় শুরু হয় অত্যাচার।

তাজমিরা বলছেন, ‘‘যাঁকে বিশ্বাস করে বিয়ে করলাম, সেই লোকটাই সর্বনাশ করতে চাইছে! এখান থেকে তাড়িয়ে দিলে কোথাও যাওয়ার নেই। তবু এ অন্যায় সহ্য করা যায় না।’’

রবিউলের এক আত্মীয় আজিজ মণ্ডলেরও অভিযোগ, রবিউলরা কেরলে হোটেল খুলেছে। সেখানে বেআইনি নানা কাজকর্মও চলে। তাজমিরাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেন। তাই বলে রবিউল ও তার পরিবার যে এমন কাণ্ড করবে তা ভাবতে পারছেন না আজিজ। তিনি জানান, তাজমিরাকে তাঁদের বাড়িতে থাকার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু ওই তরুণীর সেই এক গোঁ—‘শ্বশুরবাড়িতেই থাকব’।

পুলিশের উপরেও ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, ক’দিন ধরেই মেয়েটা বাড়ির বাইরে। পুলিশ জেনেও কোনও পদক্ষেপ করেনি। কিছু একটা হয়ে গেলে তার দায় পুলিশ নেবে তো? রবিউল ও তার পরিবারের লোকজনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও।

ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘ওই তরুণীর অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেই মতো তদন্তও শুরু হয়েছে। যোগাযোগ করা হচ্ছে কেরলের পুলিশের সঙ্গেও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE