ভরসা: সুদীপ্তা দে। —নিজস্ব চিত্র।
রক্তে ভেসে যাচ্ছিল সারা শরীর। রেললাইনের মাঝে পড়ে থাকা বছর চল্লিশের যুবককে ঘিরে তখন শ’খানেক মানুষের ভিড়। কিন্তু সেখানে ছিল না কোনও ‘মানবিক’ মুখ! কেউ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হননি ‘পুলিশি ঝামেলা’র ভয়ে। সেই ‘মানবিকতা’ দেখালেন হঠাৎ এসে পড়া এক ছাপোষা মহিলা। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারলেন না। হাসপাতালে মৃত্যু হল ওই যুবকের।
বৃহস্পতিবার হাবরার ঘটনা। বছর ছাব্বিশের সুদীপ্তা দে নামে ওই মহিলা অশোকনগরের কল্যাণগড়ের বাসিন্দা। হাবরা-২ নম্বর রেলগেটের কাছে পড়ে থাকা অচেনা ওই যুবককে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে বাড়ি ফিরেও তিনি শান্তি পাননি। ফিরে গিয়েছেন হাসপাতালে। তখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন যুবক। বাড়ি ফিরে অবশ্য সুদীপ্তা তাঁর মৃত্যুসংবাদ পান। সুদীপ্তার ক্ষোভ, ‘‘চোখের সামনে একজন মানুষকে ও ভাবে মরতে দেখা যায়! শেষ চেষ্টা করব না! আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো উনি বেঁচে যেতেন।’’
রাত পর্যন্ত মৃতের পরিচয় জানা যায়নি। রেল পুলিশ জানিয়েছে, সকাল ৯টা নাগাদ ট্রেনের ধাক্কায় জখম হন তিনি। যে সময় ওই দুর্ঘটনা, সেই সময় দুই ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে টোটোতে বাড়ি ফিরছিলেন সুদীপ্তা। টোটোচালকের সাহায্যে যুবককে ওই টোটোতেই তোলেন। সেই সময়ে অবশ্য ঘটনাস্থলে আসা এক যুবক এবং এক আরপিএফ কর্মী এগিয়ে আসেন। সুদীপ্তা বলেন, ‘‘সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম সাহায্যের জন্য। এক যুবক এবং আরপিএফ কর্মী ছাড়া কেউ এলেন না। কীসের যে এত ভয়! পুলিশ হয়তো কিছু প্রশ্ন করবে। তাতে কী!’’ ভিড়ে মিশে থাকা লোকজন অবশ্য মনে করছেন, এ সব ক্ষেত্রেও পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা! নানা জেরা, ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, এ সব ক্ষেত্রে যিনি আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করাবেন, তাঁকে যেন হয়রান না করা হয়। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে উদ্ধারকারীকে হেনস্থা করা হয় না। তদন্তের স্বার্থে কিছু প্রশ্ন করা হয় মাত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy