নিজস্ব চিত্র
এটাও ছিল এক অসম্ভব যুদ্ধ। অবশ্য এই যুদ্ধে রক্তপাত নেই। গুলি-বোমা-বন্দুকের গর্জন নেই।
কিন্তু, জনাকীর্ণ শিলিগুড়ির ব্যস্ত পথে, অলিগলিতে মেয়েদের টোটো চালানো কী মুখের কথা! হেনস্থা, কটূক্তি, তাচ্ছিল্য, কুদৃষ্টির সঙ্গে লড়াইটা তাই ছিল যুদ্ধই। কখনও লোহার রড, কখনও লঙ্কার গুঁড়ো আর কখনও দল বেঁধে সে সব রুখে এখন ওঁরা বিজয়িনীর হাসি হাসতে পারেন। আজ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনে সেই বিজয়িনীদের অভিবাদন জানাবে শিলিগুড়ি।
শিলিগুড়ির প্রথম মহিলা টোটোচালক মুনমুন সরকার ও তাঁর সহযোগীরা আরও দূরের স্বপ্ন দেখছেন। বলছেন, ‘‘একদিন এমন হবে, শিলিগুড়িতে ৭৫ ভাগ টোটো চালাবেন মহিলারা। দেশ-বিদেশের মানুষ জানবেন শিলিগুড়ি শহরে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য সেরা বাহন হল মহিলা চালিত টোটো।’’
২০১২ সালে সংসারের হাল ধরতে মুনমুন যখন টোটো নিয়ে বেরোন, তখন অনেকেই চমকে যান। এক পুলিশ অফিসার কটূক্তি করায় রুখে দাঁড়িয়ে ‘মুখ সামলে কথা বলবেন’ বলে হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। সে জন্য লক আপেও যেতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু, এসিপি, সিপি জানতে পারায় ১৫ মিনিটের মধ্যেই মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। সেই লড়াকু মুনমুনের সৌজন্যে এখন বর্ষা বর্মন, মাধবী ঘোষ, পূজা দত্ত, রিম্পা দাস ও জয়দীপা বিশ্বাসের মতো ৭৮ জন মহিলা শিলিগুড়ির রাস্তায় দাপিয়ে টোটো চালাচ্ছেন।
এখন মুনমুনকে পুরুষ টোটো চালক থেকে ট্রাফিকের অফিসার-কর্মীরাও সমীহ করেন। কিন্তু, বিপদের আশঙ্কা যায়নি। তাই সকলেই সঙ্গে রাখেন লোহার রড, লঙ্কার গুঁড়ো। কেউ পরেন বিশেষ ধরনের আংটি।
মুনমুনের ছেলে ব্যাঙ্কের চাকুরে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। রিম্পা বিএ পাসের পরে টোটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। মুম্বইয়ের অর্কেস্ট্রার গায়িকা পূজা এখন শিলিগুড়িতে টোটো চালিয়ে ঢের ভাল আছেন। গৃহবধু জয়দীপার স্বামী অসুস্থ। তিনি টোটো চালিয়ে স্বামীর চিকিৎসাও করাচ্ছেন। বিবাহিত মাধবী বাপের বাড়িতে থাকেন। তিনিও টোটো নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শহরে।
সম্প্রতি মহিলাদের পরিচালিত একটি সংস্থা ফুলেশ্বরী নন্দিনীর কর্ণধার কণিকা দাস ও বনানী বর্মন মহিলা টোটো চালকদের ব্যাপারে খোঁজখবরে নামেন। এর পরেই ওঁরা মুনমুন সহ ৬ জনকে প্রথম দফায় নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy