Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাচার হননি তো, তদন্ত চান জুরিখের সোনা

রাজ্য জুড়ে শিশু পাচারের রমরমার খবর জানার পর থেকেই প্রশ্নটা বিঁধছে সুদূর সুইৎজারল্যান্ডে জুরিখের বাসিন্দা সোনাকে। ‘আমিও কি তা হলে কোনও শিশু-পাচার চক্রের শিকার হয়েছিলাম?’

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৩৪
Share: Save:

রাজ্য জুড়ে শিশু পাচারের রমরমার খবর জানার পর থেকেই প্রশ্নটা বিঁধছে সুদূর সুইৎজারল্যান্ডে জুরিখের বাসিন্দা সোনাকে। ‘আমিও কি তা হলে কোনও শিশু-পাচার চক্রের শিকার হয়েছিলাম?’

এ রাজ্যের শিশু পাচারের খবর পড়ে সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরে বসে সোনার এমন উদ্বেগের কারণ কী? আদতে সুইৎজারল্যান্ডের নাগরিক হলেও সোনার শিকড় পশ্চিমবঙ্গে। ১৯৮১ সালে কলকাতার এক হোম থেকে মাস কয়েকের সোনাকে দত্তক নিয়ে যান নিঃসন্তান এক সুইস দম্পতি। এখন তিনি পঁয়ত্রিশ, তিন সন্তানের মা। সে দেশের রীতি, বড় হয়ে দত্তক সন্তান নিজের জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। মায়ের খোঁজ শুরু হয় সোনার। ২০০০-এ শ্রীলঙ্কার এক যুবককে বিয়ে করেন তিনি। রক্তের মায়ের সন্ধানে পরের বছরই স্বামীকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। তবে মায়ের খোঁজ মেলেনি। তাতে খোঁজ থামেনি।

এ বার রাজ্যের সিআইডি-কে ই-মেল করে তাঁকে দত্তক নেওয়ার পিছনেও কোনও শিশু পাচার চক্রের হাত ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন তিনি। আনন্দবাজার পত্রিকায় সোনার কাহিনি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের অগস্টে। সোনার অভিযোগ, তাঁর জন্ম-পরিচয় সংক্রান্ত সঠিক কাগজপত্র কেউ দেখাতে পারেনি। যে হোম থেকে তাঁকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল, সে’টিও তত দিনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ওই বছরের অগস্টেই হরিণঘাটার এক বৃদ্ধা নিজেকে সোনার মা হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ডিএনএ মেলেনি সোনার। ফের মায়ের খোঁজ শুরু করেন। শুক্রবার সুইৎজারল্যান্ড থেকে ফোনে সোনা বলেন, ‘‘শুনলাম, আপনাদের ওখানে শিশু-পাচার চক্র ফাঁস হয়েছে। জন্মদাত্রী মা জানতেও পারছেন না, কখন কী ভাবে তাঁর সন্তানকে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। আমার ক্ষেত্রেও কি তা হলে সে রকম কিছু হয়েছিল?’’ কেন এমন মনে হচ্ছে আপনার? সোনা বলেন, ‘‘খবরে তো দেখছি, শিশু-পাচার চক্রের জাল কী ভাবে ছড়িয়েছে। যে শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের নাম এই পাচার চক্রের তদন্তে উঠে এসেছে, হয়তো তেমনই কোথাও আমার জন্ম হয়! পরে পাচার করে দেওয়া হয় আমাকে। অপহরণ করাও হতে পারে!’’

সিআইডিকে পাঠানো ই-মেলে সোনার আর্জি, ওই নার্সিংহোমের পুরনো নথি ঘেঁটে দেখুন। ১৯৮২ সালেও এমন একটা পাচার চক্রের কথা জানা গিয়েছিল বলে ই-মেলে জানিয়েছেন সোনা। তাঁর দাবি, ‘‘শিশু পাচারের এই সব চক্র তো বহু কাল ধরে সক্রিয়। দয়া করে দেখুন, যে হোম থেকে আমাকে দত্তক নেওয়া হয়, তার ব্যাপারে কিছু জানতে পারেন কি না।’’

সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক পুরনো ঘটনা। তবে আমরা এখন তদন্ত করে অনেক তথ্য পাচ্ছি। আমরা খুঁজে দেখছি, ওই সময়ের কোনও নথি পাওয়া যায় কি না। যদি সোনার জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়, তা হলে তো ভালই।’’ আল্পসের কোলে সেই আশাই ভরসা বিদেশিনীর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

investigation Zurich
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE