—প্রতীকী চিত্র।
কয়েক দিন ধরে হাত-পায়ে যন্ত্রণা। স্কুলে যাওয়ারও ইচ্ছে নেই বছর সাতেকের মেয়ের। পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে কি শিশুটি? যন্ত্রণা বাড়ায় চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানালেন, অন্য কোনও গোলমাল আছে। পরে মেলে শারীরিক নিগ্রহের প্রমাণও।
বছর দশের ছেলেটি পাড়ার কম্পিউটার ক্লাসে যেতে খুবই পছন্দ করত। হঠাৎ আর যেতে চায় না। ক্লাসে যাওয়ার কথা উঠলেই গুটিয়ে যায় সে। বারবার জিজ্ঞাসা করলে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশুটি। মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে অবশেষে সে জানায়, ক্লাসে গেলেই এক যুবক তাকে অশ্লীল ভিডিয়ো দেখিয়ে নানা রকম হুমকি দেয়।
গোপনাঙ্গে ক্ষত চিহ্নই শুধুমাত্র শিশু নিগ্রহের প্রমাণের একমাত্র মাপকাঠি নয়। আরও নানা ভাবে বোঝা যেতে পারে শিশু নিগ্রহ হয়েছে কি না। রবিবার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এমনই নানা দিক উঠে এল। পাশাপাশি, উঠে এল শিশু নির্যাতনে অভিযুক্তের মানসিক অবস্থা নিয়েও নানা কথা।
বিশেজ্ঞদের মতে, একটা কাটা দাগ কিংবা ভাঙা হাড়ও হতে পারে নিগ্রহের চিহ্ন। তবে শিশুরোগ চিকিৎসক শান্তনু বাগ জানান, সেটা শুধুমাত্র শিশুরোগ চিকিৎসকের পক্ষে তা অনেক সময়ে বোঝা কঠিন। এ দেশে শিশু হেনস্থা কী ভাবে বোঝা যাবে, তা নিয়ে অধিকাংশ চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণই নেই। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। চোট দেখে, শিশুর সঙ্গে কথা বলার পরে অন্য বিভাগের চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার জন্য চাই চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে কিছু বদল।
জন্মের পর থেকেই শারীরিক নিগ্রহের ঝুঁকি থাকলেও মানসিক নির্যাতনের শিকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের বেশি বয়সি শিশুরাই হয়, জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট। শারীরিক যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখা কঠিন। ফলে পরিবারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিশু কোনও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু শিশুর মানসিক নির্যাতনের দিকে অভিভাবকেরাও অনেক সময়ে গুরুত্ব দেন না। যার জেরে সমস্যা আরও বাড়ে। ভয় দেখানো কিংবা অশ্লীল ভিডিয়ো দেখানোও যে শিশু নিগ্রহ, তা-ই খেয়াল রাখেন না অনেকে বলে মনে করেন মনোরোগ চিকিৎসক সৌমিত্রশঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই মনে করেন, ছোটদের নির্যাতন করলে সেই ভয় থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারবে না। কিন্তু সে ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। কাউন্সেলিং চালিয়ে গেলে তারাও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।’’ অনেক সময়ে শিশুরা এক দিন নয়, বারবার নির্যাতিত হয়। সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত নানা বিষয়ে কথা বললে, তার আচরণের দিকে নজর রাখলে, তেমন বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy