Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

আমার কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই

তবুও এত গুজব কেন? ছবি মুক্তির দিন অকপট তনুশ্রী চক্রবর্তী। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ততবুও এত গুজব কেন? ছবি মুক্তির দিন অকপট তনুশ্রী চক্রবর্তী। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

ভ্যালেনটাইন্স ডে যে কিছু দিন আগেই পালিত হয়েছে তা তনুশ্রী চক্রবর্তীকে দেখেই বোঝা যায়। পরনে গোলাপি জ্যাকেট। ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। এমনকী চোখের মেক আপেও গোলাপি আভা।

নিউ আলিপুরের এক কফিশপে তাঁকে দেখে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হল— ভালবাসার রং কি গোলাপি? ঠোঁটের কোণে তনুশ্রীর লজ্জা মিশ্রিত হাসি। বললেন, ‘‘আনন্দের রং গোলাপি...’’

ভালবাসা তো আনন্দই!

‘‘প্রেম মানুষকে ইন্সপায়ার করে ভাল থাকতে। অন্যকে ভালবাসতে। আমার ড্রাইভার, মেক আপ আর্টিস্ট, অ্যাটেনডেন্ট — এদের মুড খারাপ থাকলে আমার ভাল লাগে না।’’

সেই কাছের মানুষেরা নিশ্চয়ই ভালই আছেন। কিন্তু আজ যে তাঁর নিজের ভাল লাগা নিয়ে কথা বলার দিন। যিনি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভাল থাকার জন্য সেই মানুষটাকে নিয়ে কথা বলার দিন... আবার সেই পরিচিত হাসি। ‘‘আমাকে তো বহু মানুষ ইন্সপায়ার করেন।’’ কিন্তু আজ তো আমরা তনুশ্রীর জেঠতুতো দিদির পিসতুতো জামাইবাবুর ইন্সপিরেশনের কথা জানতে চাইছি না। বরং জানতে চাইছি তনুশ্রীকে যিনি ভাল রাখছেন তাঁর কথা। শুরু হল আড্ডা।

মুখে এই গ্লো-টা কার জন্য?

ভাল থাকতে জানতে হয়।

একজনের নাম শুনছি আজকাল...

হা হা হা হা। আমি প্রেম করছি না। তবে আমি প্রেমে বিশ্বাস করি।

জানতাম এটা বলবেন। তাই লাই ডিটেক্টর রয়েছে। দেখুন কেমন শব্দ করছে। উত্তরটা আবার দিন।

হা হা হা হা। আমি প্রেম করছি না।

যাঁকে নিয়ে গুজব উনি কি আপনার বয়ফ্রেন্ড, না স্রেফ ভাল বন্ধু?

হি ইজ নট মাই বয়ফ্রেন্ড।

কিন্তু এটা তো ইন্ডাস্ট্রির ওপেন সিক্রেট এখন...

আমাকে নিয়ে অনেকের নাম জড়িয়ে কথা হয়েছে।

সেগুলো যে সম্পর্ক ছিল না সেটা তো আপনি বলতে পারেন না। বিয়ে করেছেন কি করেননি সেটা অন্য বিষয়। আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন যে রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে আপনার কোনও সম্পর্ক ছিল...

আগেই বলেছি রুদ্র আর আমি ভাল বন্ধু। আজও তাই বলছি। মানুষ যখন দেখে যে একসঙ্গে কাজ করছি তখন অনেক কিছু রটানো হয়।

এই সব রটনার পর কেউ কেউ নিজেদের গুটিয়ে নেন, আবার কেউ কেউ ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড নিয়ে চলেন। আপনি কী করছেন?

আমার কানে অনেক কিছুই আসছে...

ছবি: কৌশিক সরকার।

এখন শোনা যায় ‘তনুশ্রীর বয়ফ্রেন্ড ওকে প্রমোট করে!’

একটা ছবি দেখান তো যেখানে এটা হয়েছে? ‘বুনো হাঁস’ পড়ে যাঁরা ফিল্মটা দেখেছেন তাঁরা এই কথা বলবেন না।
‘ইচ্ছেমতীর গপ্পো’তে ও আমাকে প্রমোট করেনি। বাঙালিরা মুড়ি খেতে ভালবাসে। তার সঙ্গে মশলাটাও ভাল মাখায়। সেটাই হচ্ছে।

উনি আপনাকে প্রমোট করেন না বলছেন?

আমি এই সবে কান দিই না। তবে ‘আই কেয়ার আ ড্যাম’ও বলি না।

এমনটাও শুনেছি যে আপনার ধনী বয়ফ্রেন্ড নাকি প্রেমে এতটাই হাবুডুব খাচ্ছেন যে ছবি প্রযোজনা করতে গেলেও আপনার মত না নিয়ে এগোন না। আপনি নাকি পরিচালক বাদ দিয়ে দেন। চিত্রনাট্য পাল্টে ফেলেন, অভিনেতা ঠিক করেন!

হিরোইন হলেও আমি মনে করি যখন একটা ছবি করছি তখন তার সমস্ত দায়িত্ব আমার। কিন্তু সিনেমা নিয়ে আমার এখনও অনেক শেখা বাকি। এটুকু বুঝি টাকা থাকলেই ভাল সিনেমা হয় না। তা ছাড়া আপনি বলুন তো যাঁর প্রচুর টাকা আছে সে কি এতই বোকা যে এমন একজনের হাতে সব কিছু ছেড়ে দেবে যে বলছে সিনেমা নিয়ে তার অনেক শেখা বাকি?

আপনার সহকর্মীরা তো আড়ালে বলেন ছবি প্রমোশনে আপনার ‘তাঁর’ এতই কনট্রিবিউশন যে তাতে আপনি কেরিয়ারে অ্যাডভানটেজ পাচ্ছেন!

একজন নায়িকা যদি ভাল অভিনয় করে, তখন তাঁর সৌন্দর্যের প্রশংসাই করা হয়। অভিনয় বা তাঁর খাটনির ক্রেডিট দেওয়া হয় না। আর সে ছবি যদি ভাল করে প্রোমোটেড হয় তা হলে তো সব ক্রেডিট ওই প্রমোশনের। ব্যাপারটা এমন যে আমার প্রশংসাটা পাওয়া উচিতই নয়, কিন্তু আমি প্রোমোশনের জন্য এটা পাচ্ছি!

মনে হয়েছে যে তাঁকে বলবেন আপনার ছবির থেকে দূরে থাকতে?

কেন বলব? ‘ইচ্ছেমতীর গপ্পো’তে আমি কতটা খেটেছি সেটা নিয়ে কেউ কেন কথা বলছে না? শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে আমি। ছবিতে এক জায়গায় ‘রক্তকরবী’র নন্দিনীর ভূমিকায় আমাকে অভিনয় করতে হয়েছে। খুব কঠিন কাজ। এই ছবিতে তো কোনও কোম্পানির ব্র্যান্ডিং নেই। আর আমার বছরে চারটে ছবি মুক্তি পেলে তার মধ্যে যদি দুটো ছবির ব্র্যান্ডিং ভাল না হয় তাতে তো ছবির ক্ষতি হবে। দু’টো লোক কথা বলছে বলে আমি নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ওকে বলব না, ‘প্লিজ, এখান থেকে সরে যাও’? আমি সেই জায়গায় নেই যেখানে দাঁড়িয়ে এই ঝুঁকিটা নিতে পারি।

মানে, হাতের লক্ষ্মী পায়ে কেন ঠেলবেন?

হুঁ, চোরের ওপর রাগ করে আমি মাটিতে ভাত খাব নাকি? আমাদের মধ্যে পেশাদার সম্পর্ক। আর কিছু নেই। কাজের ব্যাপারেই কথা হয়। কমন বন্ধুর পার্টিতে গেলে হাই-হ্যালো করি। এটুকুই। আমার রিচ বয়ফ্রেন্ড থাকলেও আমি তাকে বলতাম না আমার জন্য এটা করে দাও।

সম্প্রতি সোহিনী সরকার একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন মিথ্যেবাদী হতে। আপনি কি সেটা অনুসরণ করা শুরু করে দিয়েছেন?

(হাসি) উফ্, কী মুশকিল বলুন তো?

আপনার কাছে একটা আয়না আছে?

না, কেন ?

ওই মানুষটার প্রসঙ্গ এলেই কতটা ব্লাশ করছেন, সেটা দেখাতাম আপনাকে!

(হাসি) ব্লাশ করা তো ভাল। আমাকে দেখতে ভাল লাগছে কি না?

নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনার চোখ আর ঠোঁট আলাদা আলাদা কথা বলছে যে! আচ্ছা, অন্য প্রসঙ্গে আসি। পেশাদারি উন্নতির জন্য আপনি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ব্যবহার করায় বিশ্বাসী?

না। ব্যবহার করতে পারলে আমি অনেক কিছু করতে পারতাম। সে সুযোগ এসেছিল। কিন্তু করিনি।

অভিনেত্রী হিসেবে কোন জায়গায় উন্নতি করা দরকার আপনার?

স্পিচ ইমপ্রুভ করতে হবে। অনেক সিনেমা দেখতে হবে। তা নিয়ে পড়াশুনো করতে হবে। কোনও পরিচালককে অ্যাসিস্ট করতে পারলে ভাল হত।

কখনও মনে হয়েছে এই যে পরপর ছবি করছেন, সেখানে অমুকের গার্লফ্রেন্ড ট্যাগটা সরে গেলে তনুশ্রীকে অভিনেত্রী হিসেবে দর্শক আরও সিরিয়াসলি নেবে?

আমি নিশ্চিত দর্শক এ সব বলে না। কেউ যদি মনে করেন কোনও ছবিকে প্রোমোট করবেন, আমি তাতে আপত্তি করব না। আমি মনে করি আমার ছবি ফ্লপ করলে সে দায়িত্ব আমার। নায়িকা বলে আমার কোনও দায় নেই— সেটা আমি মনে করি না। আমার চোখে মাধুরী দীক্ষিত খুব ভাল অভিনেত্রী। কিন্তু সবাই তো ওঁকে গ্ল্যাম ডিভা-ই বলে চলে। একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর গ্ল্যামার কেন সব সময় তাঁর কাজ, পরিশ্রমকে ছাপিয়ে যায় বলুন তো? আমি তো সারা দিন স্পা করে আরামে কাটাতে পারতাম। কিন্তু তা না করে কেন জান কয়লা করে খেটে চলেছি? এই নিয়ে কেন কেউ কথা বলে না বলুন তো? শুধু প্রেম করছি কি করছি না— এটাই সবার কৌতূহল!

এমনটা কি হতে পারে যে যদিও তিনি স্পেশ্যাল, আপনি তাঁর সম্পর্কে পার্টনার বা বয়ফ্রেন্ড কথাটা ব্যবহার করতে চান না? হয়তো সম্পর্ককে নাম দেওয়ার সময় আসেনি বলে?

যে মুহূর্তে কাউকে বিয়ে করব বলে সিদ্ধান্ত নেব, সেই মুহূর্তে প্রথমে আপনারা জানবেন। আমি সেটা ফোন করে জানাব। এই মুহূর্তে কিছুই নেই।

আওয়াজটা শুনতে পেলেন?

কোন আওয়াজ?

আরে লাই ডিটেক্টর বলছে পর্দায় অভিনয় করলেও তনুশ্রী চক্রবর্তী বাস্তবে ভাল অভিনয় করছেন না। শট এনজি হচ্ছে। রিটেক দরকার।

হা হা হা হা...

কেন বলছেন না বেশ করছি, প্রেম করছি, আর তার সঙ্গে খেটে কাজটাও করছি? সব মিটে যায় যদি বলেন প্রেম আর পেশাকে গোলাবেন না!

লাই ডিটেক্টর তো আসলে বাঙালির প্রতীক। গসিপ শুনতে ভালবাসে। এর বেশি কিছু বলব না (হাসি)।

জাম্পিং ঝপাক: জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

priyanka dasgupta tanusree chakrabarty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE