Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ওজন কমাতে বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেবেন না

ওয়ার্কআউট, ব্যায়াম চালিয়ে যান। ওজন কমবেই। পরামর্শ ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়-এর।আপনার রেজলিউশন ছিল ছ’মাসে ছ’কেজি ওজন কমানোর। হতেই পারে পাঁচ মাসের চেষ্টায় পাঁচ কেজির টার্গেট ছাপিয়ে ৭-৮ কেজি কমিয়ে ফেলেছেন। জানেন তো ওজন কমানোর টার্গেট ছোট রাখলে প্রাপ্তিযোগটাও বেশি হয়?

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:১৫
Share: Save:

আপনার রেজলিউশন ছিল ছ’মাসে ছ’কেজি ওজন কমানোর। হতেই পারে পাঁচ মাসের চেষ্টায় পাঁচ কেজির টার্গেট ছাপিয়ে ৭-৮ কেজি কমিয়ে ফেলেছেন। জানেন তো ওজন কমানোর টার্গেট ছোট রাখলে প্রাপ্তিযোগটাও বেশি হয়?

ফিটনেস নিয়ে দারুণ প্যাশনেট হিন্দি ফিল্মের অক্ষয়কুমার। রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়েন। মনে করেন ওয়ার্কআউট কোনও ইউজ অ্যান্ড থ্রো জিনিস নয়। ওজন কমাতে হবে, তাই লেগে পড়লাম আর ওজন কমে গেলে ছেড়ে দিলাম— এটা জাস্ট সময় নষ্ট করা। অক্ষয়ের মতে ওয়ার্কআউট রোজ দাঁত মাজার মতো একটা অভ্যেস। অনেকে আবার বলেন না না, জিম যাব না। ছেড়ে দিলেই তো মোটা হয়ে যাব! এটা কিন্তু স্রেফ অজুহাত। জিমে ওয়ার্কআউট করে ধরুন আপনার ৩০০ ক্যালোরি ঝরল। জিম ছেড়ে দিলে সেই ৩০০ ক্যালোরি খাবার থেকে সরিয়ে নিন। দেখবেন ওজন বাড়ছে না মোটেই। তবে মাসল টোন এত ভাল থাকবে না।

এবার চলে আসি আসল কথায়। মানে ওয়ার্কআউট। সত্যিটা তো জেনেই গেছেন যে, জোর বাড়ানোর ব্যায়াম মেদের বড় শত্রু। সুতরাং ছ’মাসে এসেও জোর কদমে চালিয়ে যান জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। তবে ব্যায়ামগুলোকে আরেকটু খেলাতে হবে। এবার আবার পুরনো ছকে ফিরে যান। মানে সপ্তাহে দু’দিন শরীরের ওপরের অংশের আর দু’দিন নীচের অংশের ব্যায়াম করুন। বোলাররা যেমন ব্যাটসম্যানকে নানা ধরনের বল করে চ্যালেঞ্জে ফেলে, আমাদেরও শরীরকে প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছুড়তে হবে। তবেই কড়াধাতের ফ্যাট জব্দ হবে।

ওজন বাড়ানোর ব্যায়ামের আগে গত মাসের মতো কোর এক্সারসাইজগুলো শেষ করুন। এবার ওপরের অংশের জন্য আগে করা ডাম্বেল চেস্ট প্রেস-এর পরিবর্তে করুন পুশ আপ অ্যান্ড রোটেশন। পুশ আপ দিয়ে শরীরটা ওপরে তোলার সময় একটা হাত মাটি থেকে তুলে পাশাপাশি ঘুরিয়ে সিলিংয়ের দিকে নেওয়া হল রোটেশন। করুন একটা করে পুশ আপ আর একেক দিকে একটা করে রোটেশন। বুকের পেশির সঙ্গে পেটের কোর পেশির পুষ্টিও হয়ে যাবে। মেয়েরা প্রথাগত পুশ আপ না পারলে হাঁটুর ওপর ভর রেখে পুশ আপ দিন। উপুড় হয়ে রোয়িং করার বদলে করুন কোর রো। এবার পুশ আপ পজিশনে আসুন। দু’হাতে দু’টো ডাম্বেলের ওপর ভর রেখে একটা হাত ডাম্বেল সহ মাটি থেকে তুলে বগলের পাশ বরাবর পিঠের দিকে টানুন। ওই হাত মাটিতে নামিয়ে অন্য হাতটা টানুন এর পর। পিঠের আর পেটের সামনের গভীরের পেশির জন্য এটা একটা অসাধারণ ব্যায়াম।

আরেকটা নতুন ব্যায়ামও জুড়তে পারেন সঙ্গে। ডাম্বেল কার্ল অ্যান্ড প্রেস। দু’হাতে দু’টো ডাম্বেল নিয়ে কনুই ভেঙে হাত কাঁধের দিকে তোলা হল কার্ল। সঙ্গে দু’টো হাত কাঁধ থেকে মাথার ওপর তোলা হল প্রেস। অর্থাৎ একই সঙ্গে বাইসেপ আর কাঁধের পেশির জোর বাড়ছে।

নীচের অংশের তিনটে ব্যায়ামও বদলে নিতে পারেন। পিস্টন স্কোয়াট করছিলেন। এবার করুন এক পায়ে স্কোয়াট। এক হাতে গ্রিল বা কিছু ধরে এক পায়ে হাঁটু ভেঙে নিচুতে বসুন। হাঁটুর পেশিকে চাপে ফেলুন। আগে লাঞ্জ শিখেছিলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে। এবার লাঞ্জ করে এগিয়ে যেতে হবে। মানে ওয়াকিং লাঞ্জ করতে হবে। লাঞ্জ করার পর পিছনের পা-টা সামনে এগিয়ে আনতে হবে। এ ভাবে একটা করে লাঞ্জ আর হাঁটার মতো এগিয়ে যান।

স্টেপ আপ তো নিশ্চয়ই এত দিনে জলভাত হয়ে গিয়েছে। একটা টুল বা স্টেপ বক্সের ওপর ওঠা বা নামা হল স্টেপ আপ। এখন দু’হাতে একটা ডাম্বেল হাত সোজা রেখে মাথার ওপর তুলে ওঠানামা করুন। এই ব্যায়ামটার পোশাকি নাম ওভারহেড স্টেপ আপ। এখানেও পায়ের সঙ্গে কাঁধ আর কোর পেশির পুষ্টি হচ্ছে। বাকি ব্যায়ামগুলো আগের মতো রাখুন। হাঁটুতে ব্যথা থাকলে স্টেপ আপ, লাঞ্জ এড়িয়ে যান।

জোর বাড়ানোর ব্যায়ামের সময় একটা ঘড়ি রাখবেন সময় দেখতে। শরীরের ওপর বা নীচের অংশের পর পর বিনা বিশ্রামে ১০-টা রিপিটিশন আর ৬-টা ব্যায়াম করতে হবে। করতে হবে সার্কিট সিস্টেমে। একেকটা সার্কিট ৪ মিনিটে শেষ করুন। ২ মিনিট বিশ্রাম নিন। ৪-টে সার্কিটের জন্য সময় লাগবে ২৪ মিনিট। তবে একটা করে ব্যায়াম শেষে ঘুরে বেড়ালে চলবে না। বিশ্রাম বেশি পেলে হার্টরেট নেমে যাবে। সার্কিট সিস্টেমের সুফল পাবেন না। তাই নিজেকে সময়ের চাপে ফেলুন। জোর বাড়ানোর ব্যায়ামের পর ৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে কিক বক্সিং বা স্পট রানিং –এর ছোট কার্ডিও আগের পদ্ধতিতে চালিয়ে যান।

বর্ষাকাল। বৃষ্টির চোটে সাধের দৌড় বা জগিংয়ের দফারফা হতে পারে। কী করবেন? একটা ৬ ফুট লম্বা শক্ত দড়ি নিন। পার্কের ল্যাম্প পোস্ট বা বাড়ির গ্রিলে দড়িটা গোল করে বেঁধে তার ভেতর ঢুকে পড়ুন। এবার দড়ির বাঁধার বিপরীতে দৌড়ন। এর নাম রেজিস্টেড স্পট রানিং। জোরে হাঁটু চালান। মানে দ্রুত নি ড্রাইভ।

এক ফুট উঁচু সিঁড়ি বা পার্কের ফুটপাথের সামনে দাঁড়ান। এবার অনবরত ওই একটা সিঁড়িতে উঠুন আর নামুন। যত দ্রুত সম্ভব। ঠিক ১-২ মিনিট। হাঁটুর ব্যথা থাকলে কিন্তু করবেন না এই ব্যায়ামটা।

এই দু’টো ড্রিল ১-২ মিনিট করুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে ৩-৪ বার রিপিট করুন।

৬ ফুটের দড়িটা মাটিতে লম্বালম্বি পাতুন। দাঁড়ান দড়ির শেষ এক প্রান্তে দড়ির দিকে মুখ করে। এবার দ্রুত দড়ি টপকে দড়ির ওপারে যান। আবার আগের জায়গায় ফেরত আসুন। টপকে এদিক ওদিক করতে করতে দড়ির শেষ প্রান্তে পৌঁছন আর দৌড়ে বা জগ করে শুরুর প্রান্তে ফিরুন। মোট ১০ বার যাওয়া-আসা করবেন এ ভাবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে ৩-৪ বার রিপিট করুন।

একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে শেষ করি। ওজন কমানোর ভূরি ভূরি বিজ্ঞাপনের ফাঁদে দয়া করে পা দেবেন না। ওয়ার্কআউট, ব্যায়ামে ভরসা রাখুন।

ওজন কমবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE