শরীর ঠিক আছে তো?
(অবাক হয়ে) হ্যাঁ, কেন?
টানা তিন দিন দিনে চল্লিশটা করে ফুচকা খেয়ে এখন লুচি আলুর দম খাচ্ছেন?
(হেসে) সুরুচি সঙ্ঘে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ফুচকার কম্পিটিশন ছিল। সবটাই অরূপদার (বিশ্বাস) প্ল্যানিং। আমরা যখন দেখি অন্য কেউ জিতে যাচ্ছে, তখন দুষ্টুমি করে অরূপদা ফুচকায় ঝালের পরিমাণটা চার গুণ বাড়িয়ে দেয়। যাতে আর কেউ খেতে না পারে। আমাদের জন্য আলাদা করে সরিয়ে রাখা হয়। বলতে পারেন এক রকম মজা করে, চিটিং করে জেতা। ছোটবেলার খেলার মতো।
এত যে অরূপদা, অরূপদা করছেন! জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সেলিব্রিটি দুর্গাপুজোর পাবলিক শো ছেড়ে পুজোর তিন দিনই সুরুচি সঙ্ঘর প্যান্ডেলে আড্ডা দিলেন। লোকে বলে আপনি বড্ড তৃণমূল-ঘেঁষা...
হ্যাঁ জানি। আজ থেকে ছ’বছর আগে সুরুচি সঙ্ঘে যখন শো করতে আসি, তখন ক্লাবের পরিবেশ, সদস্যরা, আমায় এমন টেনেছিল যে ওঁদের অনুরোধে ক্লাবের সদস্য হয়ে যাই। তখন থেকেই ওটা আমার ক্লাব। তখন তৃণমূল সরকার ছিল না। সুরুচি সঙ্ঘে এলে আমি আমার ছোটবেলাকে পাই।
ছোটবেলা বলতে?
মুম্বইতে ভেলপুরি পাওয়া গেলেও কলকাতায় হলদে গাড়িতে লাল সসের ভেলপুরিটার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে। পুজোতে ওটা খাবই। প্রচুর আড্ডা হবে, এ বার যেমন শুভশ্রীর সঙ্গে দারুণ আড্ডা মারলাম। দেব আর জিতকে মিস করলাম। ঢাক বাজালাম। ধুতি পরলাম, সেটা অবশ্য চন্দ্রাণী (বৌ) আর অরূপদার জন্য। সেই ছোটবেলার মতো। সেজন্যই সুরুচি সঙ্ঘের পুজোয় থাকি। তখন আমি আর সেলিব্রিটি নই। মায়ের ইচ্ছের জোরেই সব হয়।
আচ্ছা এই যে কপালে লাল তিলক পরেন, এটাও কি মায়ের আশীর্বাদ?
এটা সরস্বতী মায়ের আশীর্বাদ। আমাদের বংশে আঠারো পুরুষ ধরে গানের চর্চা হচ্ছে। আমার বাবা অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতেন। আমি গিটার। সকলকেই দেখেছি তিলক পরে সাধনা করতে। সেই বিশ্বাসটা আমার মধ্যেও আছে।
ওজন কতটা বাড়ল? এ বার কি তা হলে সব ফেলে জিম করতে হবে?
(খুব হেসে) দুর্গাপুজো হোক কি দিওয়ালি, খাওয়া নিয়ে কিন্তু কোনও কমপ্রোমাইজ নয়।
এ বারেও তো সুরুচি সঙ্ঘের থিম সং করলেন?
থিম সংয়ের শুরুটা পাঁচ বছর আগে আমার হাত ধরে হয়েছিল। এ বার যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় শ্রেয়া গাইল ‘মাগো তুমি সর্বজনীন’। এই গানটাও তো সুপারহিট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে এক জন শিল্পী। তা ছাড়া রাজনীতি থেকে আমি পঞ্চাশ হাত দূরে।
ইউটিউবে ‘ইশক্-এ-দরিয়া’ একটাই গান। দু’দিনে তার দেড় লক্ষ লাইক। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি তা হলে এটাই?
এখন একটা গানের যুগ। সোনুকে দিয়েও তো ও ভাবেই গাওয়াচ্ছি। কারও কাছেই সিডির ছ’সাতটা গান শোনার সময় নেই। অ্যালবামের দিন শেষ। সে কথা মাথায় রেখেই ‘ইশক্-এ-দরিয়া’ ইউটিউবে লঞ্চ করলাম। যে কোম্পানি এটা লঞ্চ করেছে, তাদের চ্যানেলে গানটা দেখা যাবে।
গানের শিল্পীরা প্রত্যেকেই বিকল্প রুজি হিসেবে কেউ রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করছেন, কেউ বুটিক খুলছেন, কেউ মিউজিক কোম্পানি। শান আনন্দplus-কে বলেছিলেন রেকর্ডিং স্টুডিয়ো শব্দটা তাঁর অচেনা মনে হচ্ছে। সিনিয়র হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য কী করা উচিত?
আইপড এসে গানের বাজারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ধরুন ছ’টা গানের অ্যালবাম করলাম। আইপডে সেখান থেকে লোকে একটা গানই শুনল। বাকি গানগুলো শুনলই না। কী করে গানের বাজার থাকবে? অ-সুরকে পিচ কারেকশনে সুর দিয়ে গান গাওয়ানো হচ্ছে। তাই টিকছে না।
আজও কিন্তু সকলে মেলোডির জন্য পুরনো দিনের গান শোনে।
আমি তো বলছি ভাল গান শোনালে লোকে আজও শুনবে। আমার বিশ্বাস আজ আমরা যারা গান তৈরি করছি, তাদের গানগুলো ১৫-২০ বছর বাদে বাজবে। একটু সময় দিন আমাদের সকলকে।
আর শান?
ওঠানামা সব শিল্পীর জীবনেই এসেছে, আসবে। শান এত কাল গান করে এসেছে। তার পর অবশ্যই ফ্রেশ ভয়েস আসবে।
অরিজিৎ সিংহ? লোকে বলে জিৎ বা প্রীতমের জন্য অরিজিৎ সিংহের এত নাম..
দেখুন ট্যালেন্ট থাকলে বেরিয়ে আসবেই। অরিজিৎ অসম্ভব ট্যালেন্টেড। আর বিনয়ী।
আপনাকে বিজয়ার শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন অরিজিৎ?
এটা ও মিস করে না। তবে এ বার বিদেশে শো-তে এত ব্যস্ত, যোগাযোগ হয়নি।
একজন সিনিয়র হিসেবে আপনি ওঁকে কী টিপস দেবেন?
অরিজিৎ খুব ম্যাচিওর্ড। ও তো এবার বাংলা ছবি করার কথা ভাবছে। এটা আমার কাছে সত্যিই একটা দারুণ খবর। ওকে আমার কিছু টিপস দেওয়ার নেই।
অনুপম রায় মুম্বই চলে গেলেন...
দাঁড়ান, আপনার সঙ্গে শর্তই ছিল অনুপম রায় নিয়ে কোনও মন্তব্যই করব না।
আচ্ছা এই মুহূর্তে যদি পাঁচটা জনপ্রিয় গানের নাম করতে বলা হয়... ‘খামোসিয়াঁ’, ‘হমারি অধুরি কহানি’, ‘মুস্কুরানে কী ওয়াজা’, ‘মন মাঝি রে’....
একী! আপনি তো শুধু নিজের গান বলে চলেছেন।
কী করব বলুন? আপনি তো জনপ্রিয় গানের কথা জিজ্ঞেস করলেন! বিশাল ভাইয়ের (ভরদ্বাজ) ‘ওমকারা’র গানগুলো ফাটাফাটি। তবে এটা ভেবে খুব খারাপ লাগে প্রাইভেট অ্যালবামের আজ আর কোনও জায়গা নেই। ভাবুন তো লাকি আলির গান, পলাশের ‘ধুম পিচক ধুম’, মোহিত চৌহানের ‘সিল্ক রুট’ এক সময় কত জনপ্রিয় হয়েছিল। তখনও তো ফিল্মের গান ছিল। ছিল না কি?
তা হলে সমস্যাটা কোথায়?
মিউজিক কোম্পানিগুলোকে স্ট্র্যাটেজি বদলাতে হবে। আর রেডিয়ো, চ্যানেলে প্রাইভেট অ্যালবামের জন্য আলাদা স্লট রাখতে হবে। এক সময় রেডিয়োতে যশ চোপড়ার ডিডিএলজে-র থিম সংটা বাজলেই বুকের ভেতরটা আনচান করে উঠত। ( বলেই থিম সংটা গাইতে শুরু করলেন)। ওই টিউনটা শুনলেই মনে হত কখন ছবিটা দেখব! আমি চাই এই সময়টা আবার ফিরে আসুক। চাই লোকে শুধুই গান শুনুক। সে দিনটার জন্য অপেক্ষা করে আছি।
সে না-হয় বুঝলাম। কিন্তু ইচ্ছে করে না কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করতে?
দেখুন আমার কাছে পরিচালকের নাম নয়, কাজটা আসল। ২০০৪ থেকে বাংলা ছবিতে কাজ করছি। তখন বাংলা ছবিতে বিট-এর অভাব ছিল। আজ দুর্গাপুজোয় ‘ঢাকের তালে কোমর দোলে’ না বাজলে দুর্গাপুজোই হবে না। সাউন্ড নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে বাংলা গানকে আমিই ডান্স ফ্লোরে নিয়ে আসি। ‘ভজ গৌরাঙ্গ’-এর মতো বাংলা গান ডিস্কে বাজতে শুরু করে। আবার ‘রংবাজ’-এর ‘দিশাহীন’-এর মতো রোম্যান্টিক গানও কিন্তু আমারই করা। মুম্বইতে মেলোডির যথেষ্ট অভাব ছিল। ‘হমারি অধুরি কহানি’ বা ‘সিটিলাইট’-এর গানে মেলোডি নিয়ে আসি আমিই।
আচ্ছা, একজন সঙ্গীত পরিচালক হয়ে আপনি অধিকাংশ গান গেয়ে দিচ্ছেন। তা হলে গায়কদের কী হবে বলুন তো?
এটা একদম ভুল কথা। ‘হমারি অধুরি কহানি’তেও কিন্তু আমি যে গানটা গেয়েছি, তার একটা ভার্সান অরিজিৎ (সিংহ)-কে দিয়েও গাইয়েছি। যে গানের জন্য যখন যাকে দরকার, আমি তারই গলা ব্যবহার করেছি। যখন মনে হয়েছে নচিদাকে (চক্রবর্তী) দিয়ে গাওয়াব, গাইয়েছি। রাশিদ খানকে দিয়ে ‘সাজনা’র মতো গান গাইয়েছি। মনোময়কে দিয়ে গাইয়েছি।
মনোময় কিন্তু বলেন ‘দিশাহীন’ গানটা অত হিট হওয়ার পরেও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে আর ডাকলেন না।
সময় হলে আবার ডাকব। আমি কিন্তু ভাল গলা শুনলে তাদের সুযোগ দিই। এখন যেমন ইরফান, বেণী, পলক, শাল্মলী— এদের গান খুব ভাল লাগছে।
আপনি নাকি মহিলা ফ্যানদের নিয়ে খুব আড়ষ্ট?
(প্রচণ্ড অবাক হয়ে) হচ্ছিল গানের কথা। আপনি আবার মহিলা ফ্যানদের নিয়ে চলে এলেন কেন? ওরে বাবা রে! ও সব থেকে আমি শত হাত দূরে।
প্রীতমের সঙ্গে কি কোলাকুলিটা হবে?
উফফ... আমার সাক্ষাৎকারে প্রীতম আসবেই? এ বার বাদ দিন না। দেখুন আমাদের প্রায়ই দেখাসাক্ষাৎ হয়। আমাদের কোনও ঝগড়া নেই। ভাল গান শুনলেই আমরা একে অপরের পিঠ চাপড়াই। ওর সঙ্গে শুধু দেখা হওয়ার অপেক্ষা। পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে এই বার কোলাকুলিটা সেরে ফেলব।
একসঙ্গে কোনও মিউজিক অ্যালবাম করার প্ল্যান নেই?
ও ওর মতো কাজ করুক। আমি আমার মতো কাজ করি। দু’জনে আলাদা কাজ করলে আরও বেশি গান তৈরি হবে।
বেগম জান যখন সংগঠক
আজ দুই বাংলার নামী কিছু শিল্পী নিয়ে সিঙ্গাপুরে বঙ্গ উৎসব সংগঠন করছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তারই রেকি চলছিল বৃহস্পতিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy