হে মন্তের দুপুর জমে উঠেছে মেঘলা আর অনুরাগের অষ্টমঙ্গলা নিয়ে। তত্ত্বের ষড়যন্ত্রকে ঘিরে টেনশনের সিন।
এরই ফাঁকে শ্যুট ফেলে খুব কাছাকাছি চলে এল অনুরাগ আর মেঘলা। শুধু দু’জনের জন্য। ক্যামেরার খচখচ শব্দ তাদের রোম্যান্স টলাতে পারল না।
দারুণ শ্যুট হল তো! আসলে আপনাদের দু’জনের কেমিস্ট্রিটাই কিন্তু সাড়ে পাঁচটার একটা ধারাবাহিকের টিআরপি তিন মাসে এক নম্বরে পৌঁছে দিল।
বিক্রম: দারুণ শ্যুট? কী ঝামেলা বলুন তো এ রকম একজন শর্ট হাইটের নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করা!
সোলাঙ্কি: এই, হচ্ছেটা কী? আমি বেঁটে হলে তুমি কী?
বিক্রম: হ্যাঁ, হিরো হিসেবে আমি জানি আমি কিছুটা শর্ট। তোমার পেয়ারের আবীরদার (চট্টোপাধ্যায়) মতো এত লম্বা নই ঠিকই। তাই বলে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি কোনও হাইট হল!
আবীর বুঝি সোলাঙ্কির খুব পছন্দের?
বিক্রম: ওরে বাবা! একেবারে ফিদা!
সোলাঙ্কি: উফ্, খুব ভাল লাগে আমার!
যা বলছিলাম, সেই তো ত্রিকোণ প্রেমের একটা মেগাসিরিয়াল। তার টিআরপি তিন মাসের মধ্যে এত চড়চড়িয়ে উঠছে, এর কারণ কী?
বিক্রম: এর কারণ লেখার ধরন। শব্দ। গল্পটা এক, কিন্তু সেটা যে ভাবে নস্টালজিক, রোম্যান্টিক করে দেখানো হচ্ছে, তাতে লোকের দারুণ ভাল লাগছে। ‘ইচ্ছেনদী’র হিরো কিন্তু আমি নই। এর আসল নায়ক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁরই লেখা, ভাবনা।
সোলাঙ্কি: লীনাদি এমন এক লাভস্টোরির কথা বলছেন, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা দারুণ রোম্যান্স করছে। কিন্তু খুব লাউড নয়। ছোটখাটো চাউনি, অল্প কথা, আলতো ছোঁয়া... উফ্, আমার নিজেরই এই রোম্যান্সটা দেখতে দারুণ লাগে!
এটা আসলে রোম্যান্স... অন্তত ও রকম মাখো মাখো ফুলশয্যার দৃশ্য, চুমু খাওয়ার দৃশ্যের পর নিশ্চয়ই আপনারা বলবেন না, এটা জাস্ট একটা অভিনয়...
বিক্রম: দেখুন, এটা জাস্ট অভিনয় যেমন নয়, আবার জাস্ট প্রেমও নয়। প্রেম হলেই কেমিস্ট্রি হবে এমনও নয়। (সোলাঙ্কির দিকে সোজা তাকিয়ে) কী সোলাঙ্কি, তুমি নিশ্চয়ই বলবে না আমরা প্রেম করছি।
সোলাঙ্কি: আমি কিন্তু অনুরাগ আর মেঘলার প্রেমে পড়ে গেছি। কত দিন পর এ রকম একটা লাভস্টোরি হচ্ছে তাই না? খুব ভাল...
বিক্রম: (উত্তেজিত) হ্যাঁ, তবে আমরা তো আর অনুরাগ-মেঘলা নই।
বিক্রম, আপনি বেশ ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দিয়ে বিষয়টা থেকে সরে যেতে চাইছেন...
বিক্রম: নাহ্। দেখুন অনেকগুলো ছবি করার পর আবার আমার টিভিতে ফেরা। মাঝে মুম্বইতেও হিন্দি সিরিয়াল করেছি। কিন্তু লীনাদির কথায় এই অফারটা নিই আমি। সোলাঙ্কি সেখানে বেশ নতুন।
সোলাঙ্কি: আগেও আমি সিরিয়াল করেছি। কিন্তু এ রকম জনপ্রিয়তা পাইনি।
বিক্রম: (সোলাঙ্কির দিকে তাকিয়ে) আমিও এটাই বলতাম। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে যখন ‘সাত পাকে বাঁধা’ করতাম, তখনও সবাই ভাবত ওর সঙ্গে আমার প্রেম। আসলে তা নয়। ‘ইচ্ছেনদী’তে আমাদের দু’জনের প্রেমের দৃশ্যে ডায়লগ খুব কম। এ বার মানুষের মনে পৌঁছতে গেলে এ গল্পে আমাদের কেমিস্ট্রিটা কিন্তু খুব স্ট্রং হওয়ার দরকার ছিল। আমরা সেটাই করেছি।
সোলাঙ্কি: ধরুন আমার ফোনে কথা বলার শট। সামনে ও নেই। কিন্তু আজও বিক্রমের সঙ্গে সেই শট নিয়ে আলাদা করে কথা বলি।
আর এই আলাদা করে কথা বলতে গিয়েই...
বিক্রম: না, না, প্রেম নয়। আসলে ওর সঙ্গে ওয়েভ লেংথ ম্যাচ করে। নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়।
সোলাঙ্কি: দারুণ অ্যাক্টর ও। আমায় হেল্প করে। কোথায় কখন কী বলতে হয় আমি কিছুই জানি না। ও বকে। বলে, ‘এ ভাবে কথা বোলো না’। অনেক কিছু শিখেছি আমি।
সোলাঙ্কি তো ব্লাশ করছে....
বিক্রম: ব্লাশ? অনেক দিন ও ফ্লোরে ব্রাশ করে আসে না কিন্তু! (প্রচণ্ড হাসি)
সোলাঙ্কি: উঃ! কী যে বাজে কথা।
আসলে কিসিং সিনে বিক্রমকে সোলাঙ্কির ব্রাশ করার খবর রাখতে হয়েছিল...
সোলাঙ্কি: মোটেও না। কিন্তু বিক্রম আর আমি ফ্লোরে সারাক্ষণ ঝগড়া করি।
বিক্রম: এমন কিছু ডিপ কিস ছিল না যে ডিডিএলজের শাহরুখ কাজলের মতো ভেতরে বিদ্যুৎ খেলে যাবে।
শুনেছি স্ক্রিপ্টে যা ছিল না, সেটাও ওই সিনে হয়ে গিয়েছিল?
সোলাঙ্কি: চুমু খাওয়াটা ছিল। বাদবাকি যা, সেটা অটোমেটিক হয়ে গিয়েছিল (লাজুক হাসি)। বিক্রম সিনটা দেখে বলেছিল, যাক আমরা উতরে গেলাম।
চব্বিশ ঘণ্টার বেশির ভাগটাই একসঙ্গে কাটাচ্ছেন, আড্ডা মারার ছবি পোস্ট করছেন ফেসবুকে...
বিক্রম: (থামিয়ে) আমাদের এক কমন বন্ধুর সঙ্গে দু’জনে আড্ডা মারি। দু’জন দু’জনকে ভাল কানেক্ট করতে পারি।
সোলাঙ্কি: এগ্জ্যাক্টলি! উই কানেক্ট।
এ বার একটু সিরিয়ালে ফিরি। এখন মেগাতে ‘পাখি’, ‘মৌরী’, ‘বাহা’, ‘রাশি’ ‘মেঘলা’ — এ ভাবেই নায়িকাদের পরিচিতি হয়। সোলাঙ্কি যে ‘মেঘলা’ তা বেশির ভাগ মানুষই জানে না। সিরিয়াল শেষ হলে কী হবে? ভয় করে না?
সোলাঙ্কি: হ্যাঁ, এখন তো সিরিয়ালে নায়িকাদের নাম থাকে না। ফেসবুকের জমানায় সবাই নাম জানে না। মজার কথা, আমার মাকে সবাই বলে, ওই দ্যাখ মেঘলার মা যাচ্ছে। মা তো চায়নি যে আমি এম ফিল ছেড়ে সিরিয়াল করি। তাই মাঝেমধ্যে বেশ অস্বস্তি বোধ করে মনে হয়।
বিক্রম: আসলে আমার মনে হয়, এই নামগুলো হতে হতে প্রত্যেকেরই নিজের কাজের প্ল্যানিংটা কিন্তু করে রাখতে হবে। কমফোর্ট জোনে থাকলে চলবে না।
আপনার প্ল্যানিংটা ঠিক কী রকম?
বিক্রম: আমি সিরিয়ালের পাশাপাশি ছবি করার কথাও ভাবছি।
সিরিয়াল করতে করতে সবাই তাই ভাবে আর সিনেমায় শিফট করার পর আবার মেগা সিরিয়াল! ওটা আর নয়।
বিক্রম: না, আমি ছবি করে সিরিয়ালে ফিরেছি। আমি দেখছি সিরিয়াল করে মাস গেলে হাতে যে টাকাটা পাই নতুন মুখ হিসেবে ছবি করে আমি সেই টাকাটা পাব না। কনস্ট্যান্ট ফ্লো অব মানি আমার জন্য খুব জরুরি ছিল।
সিরিয়ালের জন্য ছবি ফিরিয়েছেন?
বিক্রম: সিরিয়ালে কমিটেড বলে খানপাঁচেক ছবি ছেড়েছি। এ বার ছবিও করব। আশা করি, চ্যানেল আমায় সাপোর্ট করবে। আর ‘‘সিরিয়াল দেখি না’’ বলে ইন্ডাস্ট্রিতে যে সমস্ত বন্ধু এক কালে নাক সিঁটকাত, তারাই কিন্তু ‘ইচ্ছেনদী’ দেখে আমায় ফোন করছে।
কারা তাঁরা?
বিক্রম: তারা সবাই আমার খুব ভাল বন্ধু। সোহিনী সরকার, সায়নী ঘোষ, ইন্দ্রাশিস, অঙ্কুশ। ওরা এই জুটিটা নিয়ে খুব খুশি।
সোলাঙ্কি: বিক্রম আমায় বলেছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিক ‘ইচ্ছেনদী’ দেখেন। মেঘলা ওঁর খুব প্রিয়। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবীদি (মুখোপাধ্যায়)-ও তো বলেন ‘ইচ্ছেনদী’র কথা। আর মেগা সিরিয়াল, আমার মতো নিউকামারদের কাছে স্কুলের মতো। বিশ্বজিৎদা (চক্রবর্তী), লাবণি আন্টি (সরকার) এঁদের সঙ্গে ফ্লোর শেয়ার করছি। ভুল হলে শুধরে নিচ্ছি। এই শুধরানোটা সিরিয়ালে সম্ভব। ফিল্মে নয়। চন্দনদার (সেন) সঙ্গে যখন শ্যুট থাকে তখন নিশ্চিন্ত হই। উনি নিজেও দারুণ অভিনয় করবেন, আর অন্যকে দিয়ে ভাল অভিনয়টা করিয়ে ছাড়বেন। ভাবুন তো, ‘ইষ্টিকুটুম’য়ের মতো সিরিয়াল চার বছর চলছে।
বিক্রম: সত্যিই তাই। ঋষি কৌশিক নয় নয় করে বারো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে আছে।
ফেসবুকে আপনার ২২টা প্রোফাইল, ট্যুইটারেও আছে। পুজোর সময় দারুণ সব অফার ছিল। মেঘলার পা-টা মাটিতে আছে তো?
বিক্রম: যখন যা বলেছি ও কিন্তু শুনেছে। (চোখ বড় করে) যাদবপুরের উচ্চশিক্ষিত হিরোইন! বাপ রে! সেটে বাংলা উচ্চারণ ভুল করলেই খপ করে ধরে!
সোলাঙ্কি: না না, সে অনেক আগের কথা...আফটার অল হিরো! আমি কী ভুল ধরব? তবে পা মাটিতেই আছে। এ বার পুজোয় মন দিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু কোথাও ফিতে কাটিনি। (হেসে) তাড়া নেই, তবে ছবি করতে চাই।
ছবির জন্য যদি বিকিনি পরতে হয়?
সোলাঙ্কি: বিকিনি যদি একটা পোশাক হয় আর সেটা যদি আমায় মানায়, তা হলে পরব না কেন?
বিক্রম: ভেবেচিন্তে বললে তো?
সোলাঙ্কি: ওহ, আবার!
বিক্রমের আসলে লাভার বয় ইমেজ হয়ে গিয়েছে...
বিক্রম: এটা আমি কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিচ্ছি। আমি ফ্লার্ট করি না কিন্তু...
বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ করে মারা গেলেন....
এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। হাসপাতালে তো সারাক্ষণই ওর কাছে ছিলাম। মনে পড়ছে এলা-অতীনের কেমিস্ট্রিটা ‘চার অধ্যায়’-এর শ্যুটে বাপ্পাদা খুব চমৎকার করে আমাকে আর পাওলিকে বুঝিয়ে দিয়েছিল। পাওলির সঙ্গে তো কথা হয়নি বাপ্পাদা চলে যাওয়ার পর। তবে মনে হয়, আমার মতোই পাওলিও খুব মিস করবে বাপ্পাদাকে।
পাওলির বিয়েতে যাচ্ছেন?
বিক্রম: নেমন্তন্ন করলে নিশ্চয়ই যাব। আমি চাই ও সুখে থাকুক। ব্রেক আপ হয়েছে বলে ওর ওপর রেগে আছি, তা কিন্তু নয়। ওর সঙ্গে যে সময় কাটিয়েছি সেই সময়টা আমার ভাল লাগার। ওর ‘নাটকের মতো’ দেখে দারুণ লেগেছে।
(বলে চলেছেন বিক্রম.... আর মেঘলা তাকিয়ে তার অনুরাগের দিকে। নামল অমাবস্যার রাত)
ছবি: কৌশিক সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy