Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেরা মেয়েবাজি করলে সেটা গুণ...

...আর মেয়েদের পুরুষবন্ধু থাকলেই যত কাটাছেঁড়া? শহরে শ্যুটিং করতে এসে অকপট তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।হিন্দি ছবি ‘সুইট হোম’-এর জন্য কলকাতায় এসে ভায়োলিন শিখছেন? হ্যাঁ, সোহিনী দাশগুপ্ত-র ছবিতে আমার চরিত্র (ছোটি) ভায়োলিন বাজায়। তাই শিখছি। আমি গিটার বাজাতে পারি। গান শিখেছি। মাকে দেখেছি সেতার বাজাতে। তবে দু’দিন ক্লাস করে বুঝেছি যে, ভায়োলিন বাজানোটা বেশ শক্ত। সোহিনী খুব সুন্দর চিত্রনাট্য লিখেছে। মনে আছে, নয়ডাতে দুই বোনকে নিয়ে একটা ঘটনা হয়েছিল? তাঁদের বাবা-মা মারা যান...

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

হিন্দি ছবি ‘সুইট হোম’-এর জন্য কলকাতায় এসে ভায়োলিন শিখছেন?

হ্যাঁ, সোহিনী দাশগুপ্ত-র ছবিতে আমার চরিত্র (ছোটি) ভায়োলিন বাজায়। তাই শিখছি। আমি গিটার বাজাতে পারি। গান শিখেছি। মাকে দেখেছি সেতার বাজাতে। তবে দু’দিন ক্লাস করে বুঝেছি যে, ভায়োলিন বাজানোটা বেশ শক্ত। সোহিনী খুব সুন্দর চিত্রনাট্য লিখেছে। মনে আছে, নয়ডাতে দুই বোনকে নিয়ে একটা ঘটনা হয়েছিল? তাঁদের বাবা-মা মারা যান...

শিরোনামে এসেছিল যে, ওঁদের পোষ্য মারা যাওয়ার পর থেকেই ওঁরা একদম নিজেদের গুটিয়ে নেন...

হ্যাঁ, এবং একদিন ফ্ল্যাট ভেঙে দেখা যায় দুই বোনের কী সাঙ্ঘাতিক অবস্থা! খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। কঙ্কালসার অবস্থা। নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার খবরটা পড়ে সোহিনী একটা কাল্পনিক চিত্রনাট্য লেখে। দুই বোনকে নিয়ে। আমি ছোট বোনের ভূমিকায়। দিদির ভূমিকায় অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। কুলভূষণ খারবান্দা আমাদের বাবার ভূমিকায়। চিত্রনাট্যটা শহুরে আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতাকে ভিত্তি করে লেখা।

এই ছবির জন্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সঙ্গেও তো ইন্টার‌্যাকশন করেছেন? সোহিনী তো ওঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন...

বুদ্ধদার সঙ্গে এর আগেও কাজ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। এ বার যখন উনি আমাকে এই ছবির জন্য বললেন, আমি রাজি হয়ে যাই। সোহিনী চিত্রনাট্যটাও খুব ভাল লিখেছে। বুদ্ধদার ক্রিয়েটিভ ইনফ্লুয়েন্স সোহিনীর মধ্যে থাকলেও সেটে বুদ্ধদাকে দেখিনি। ওখানে সোহিনী শ্যুট করেছে।

এই গরমের মধ্যে লীনা যাদবের ‘পার্চড’ শ্যুটিং করলেন রাজস্থানে!

এপ্রিলে যখন শ্যুটিং করেছিলাম, তখন সব নাইট শিফ্ট ছিল। তাই মরুভূমিতেও গরমটা টের পাইনি। কিন্তু তার থেকেও বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল এই ছবিতে অভিনয় করা। দু’টো ভাষায় ছবির শু্যটিং করতে হয়েছে একসঙ্গে। একটা শ্যুট দিয়ে আবার অন্য ভাষার জন্য শ্যুট দিতে হচ্ছে। ছবিটা তিনটে মেয়ের গল্প নিয়ে। আমার চরিত্রটা এক ৩২ বছর বয়সি বিধবা মহিলার। আমার সঙ্গে ঋদ্ধি সেন-ও অভিনয় করছে। কৌশিক সেনের ছেলে। ওর পরিণত অভিনয় আমাকে এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করেছে। মাঝে মাঝে শ্যুটিংয়ের পরে এতটাই ‘ড্রেনড্’ লাগত যে আমরা মেডিটেশন করতাম!

শুনেছি চিত্রনাট্যে অল্পবয়সি বিধবার জীবনে যৌনতার প্রসঙ্গ এসেছে...

আমি কনট্র্যাক্টে সই করেছি বলে, এই নিয়ে কোনও কথা বলতে পারব না। যৌনতার প্রসঙ্গ এসেছে ঠিকই। এমন ভাবে এসেছে, যা আগে কোনও ভারতীয় ছবিতে দেখানো হয়নি।

ভয় হয়নি যে, এমন একটা বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে?

এটা খুবই সেনসিটিভ বিষয়। আর লিনা অন্তত সেনসিটিভলি সেটাকে হ্যান্ডেল করেছে। মেয়েদের যৌন-কামনা নিয়ে আমাদের দেশে সিরিয়াস কাজ প্রায় হয়নি বললেই চলে। তবে ছবিতে আমার কোনও সেক্স সিন নেই। যৌনতা শব্দটা থাকলেই আমাদের দেশে লোকে ভাবে যে ছবিতে সেক্স সিন, ন্যুডিটি ইত্যাদি থাকবে। সেটা না থেকেও তো এই ধরনের ছবি হতে পারে। আবার এগুলো রেখেও ছবি করা সম্ভব। আমার মনে হয় কেন এবং কী ভাবে ন্যুডিটির বিষয়টা পরিচালক ডিল করেছে, সেটাই দেখার। শুধুমাত্র সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য? নাকি এর পিছনে সিরিয়াস উদ্দেশ্য রয়েছে। অনেক আলোচনা শুনি যে, এ দেশের সিনেমাতে যৌনতাকে সুড়সুড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর কারণ আমাদের সমাজ। করাপশন, ডাবল স্ট্যান্ডার্স, সিনেমায় যৌনতা নিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়ার প্রবণতা এ সব হয় কারণ আমরা সেটাই ডিজার্ভ করি।

যৌনতাকে নিয়ে তন্নিষ্ঠার পছন্দের তিন ছবি

লুই বুনুয়েল-এর ‘বেল ডি জুঁর’

স্টিফেন ড্যালড্রি-র ‘দ্য রিডার’

অ্যান্ড্রিয়া আর্নল্ড-এর ‘ফিশ ট্যাঙ্ক’

কোনও দিন অসুবিধায় পড়েছেন এই ধরনের ছবি করতে গিয়ে?

আমি এখনও পর্যন্ত ফ্রন্টাল ন্যুডিটি নিয়ে কাজ করিনি। বাট আই নো ইট ইজ নট ইজি। যদিও আমাদের দেশে অনেক অল্পবয়সি প্রোগ্রেসিভ দর্শক রয়েছে।

‘পার্চড’-এর চিত্রগ্রাহক রাসেল কার্পেন্টার। এর আগে ‘টাইটানিক’য়ের জন্য অস্কার পেয়েছেন। ‘চার্লিজ এঞ্জেলস্’ শ্যুট করেছেন। ওঁর কাজের ধরনটা অন্যদের চেয়ে কতটা আলাদা?

ভাগ্যক্রমে আমি অনেক ভাল ভাল চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে কাজ করেছি। ‘অ্যানা ক্যারেনিনা’তে আমার খুব ছোট রোল ছিল। সেখানে কাজ করেছিলেন সিমাস ম্যাকগ্রেভি। ও ‘অ্যাভেঞ্জার’, ‘গডজিলা’ আর ‘ফিফটি শেডস্ অব গ্রে’তে কাজ করেছে। জানতাম রাসেলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা দারুণ হবে। ও স্পিরিচুয়ালি খুব ইভল্ভড। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর বেস্ট কাজ কোনটা বলে মনে হয়। প্রথমে এটা-ওটা নাম বলেছিল। তারপর বলল, ‘পার্চড’!

এর আগে প্যান নলিনের ‘অ্যাংরি ইন্ডিয়ান গডেসেস’য়ের জন্য শ্যুটিং করেছেন...

হ্যাঁ। গোয়াতে থাকাকালীন ছ’টি মেয়ের জীবনে একটা ঘটনা ঘটে। এবং তার পর কী ভাবে সমাজ এবং পুলিশ তাদের ‘জাজ’ করতে শুরু করে ছবিটা তা নিয়েই। সেই মূল্যায়ন দেখে মনে হয় যেন আমরা মহাভারতের যুগের থেকেও পিছিয়ে আছি। এ ছাড়াও রুচিকা ওবেরয়ের একটা ছবির শ্যুটিং করলাম। যেখানে আমি ২২ বছরের এক অন্তর্মুখী মেয়ে। ওয়ান ডে শি ফাইন্ডস সামথিং স্পেশাল অ্যাবাউট হারসেল্ফ। এই তিনটে ভিন্ন ধরনের ছবিতে কাজ করে আমি এতটাই স্যাটিসফায়েড যে, মনে হয়েছিল আর কোনও সিনেমা না করলেও আক্ষেপ থাকবে না।

শুনেছি ‘অ্যাংগ্রি ইন্ডিয়ান গডেসেস’য়ে সমকামিতা নিয়ে বেশ সাহসী কিছু ঘটনা রয়েছে চিত্রনাট্যে?

আমি গল্পের ব্যাপারে কিছু রিভিল করতে পারব না।

এই ধরনের বিষয় নিয়ে ছবি করলে কি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা দর্শক আপনাকে ‘জাজ’ করতে শুরু করে দেয়?

(হাসি) অভিনেত্রীরা কিছু করুক বা না করুক, সমাজ এবং ইন্ডাস্ট্রি তাদের ‘জাজ’ করবেই। প্যানের ছবিতে একটা দৃশ্যে আমরা ইমপ্রোভাইজ করে শু্যট করেছি। রাতে একটা মেয়ে একা ফেরার সময় ইভটিজড হলে প্রশ্ন ওঠে এত রাতে একা কেন হেঁটে যাচ্ছিল? আর যদি কোনও পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে থাকে, তা হলেও চাপ। একটা ছেলের সঙ্গে কেন? এটাই বাস্তব। অভিনেত্রী হলে তো কথাই নেই! যা করবে, সেটা নিয়েই চাপ। আমি তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি। যার যত জাজ করার ইচ্ছে, করুক না। আমি আমার মতোই থাকব। বিন্দাস...

আজকাল মহিলাদের মুখ্য ভূমিকায় রেখে অনেক ছবি তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মূলধারার ছবিতে অভিনেত্রীদের জন্য লেখা হচ্ছে জনপ্রিয় সংলাপও...

আমাদের দেশে একটা হিস্টোরিকাল চেঞ্জ হচ্ছে। মেয়েরা সরব হয়েছে। এই যে ধরুন ধর্ষণ নিয়ে আবু আজমি যে উক্তিটা করলেন। মুম্বইতে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সব বন্ধুবান্ধব তা শুনে বেজায় খাপ্পা। অনেকেই বলাবলি করছে যে আর আজমিদের রেস্তোরাঁতে যাবে না। সমাজে যখন এই ধরনের একটা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তার প্রতিফলন সিনেমায় হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আজকাল অনেক বেশি সংখ্যক মহিলা পরিচালনা করতে আসছেন।

মহিলা আর পুরুষ পরিচালকদের কাজের ধরনের তফাত লক্ষ করেন?

এর আগেও মহিলারা ছবি পরিচালনা করেছেন। কিন্তু মীরা নায়ার বা সাই পরাঞ্জপে তো শুধুমাত্র মহিলাদের ভয়েসকেই প্রাধান্য দেননি তাঁদের ছবিতে। তবে আজকাল মহিলা পরিচালকরা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নিয়ে ছবি করতে গেলেও প্রযোজক পাচ্ছেন। তবে আমার মনে হয় মহিলা আর পুরুষ পরিচালকদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে তফাত থেকেই যাচ্ছে। অ্যাজ উইমেন, উই আর টায়ার্ড অব বিয়িং অ্যাংগ্রি। প্রোটেস্ট করতে করতে ক্লান্ত। কই, একটা পুরুষকে তো প্রোটেস্ট করতে হয় না!

‘গুলাব গ্যাং’য়ে আপনি মাধুরী, জুহির সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে সেখানে একটা দৃশ্যে পুরুষদের শায়েস্তা করার জন্য তাদের শাড়ি পরিয়ে নাচানো হয়! এটা কি প্রগ্রেসিভ চিন্তাধারা?

যদিও আমি ছবিটা করেছি, তবু বলব যে এ ভাবে দেখানোটা ঠিক নয়। তার সঙ্গে এটাও বলব যে বিষয়টাকে একটা বৃহত্তর ক্ষেত্রে ফেলেও দেখা যায়। মেয়েদের এমপাওয়ারমেন্ট নিয়ে মূলধারায় ছবি বানানো হচ্ছে। সেটা ভাল। তাতে কিছু ভুল হবে। কিছু অ্যামেজিং ব্যাপারও থাকবে। আসলে আমাদের দেশে এখনও অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আজও সিনেমায় ছেলেরা যদি মেয়েদের টিজ করে, তাতে কারও আপত্তি থাকে না। ভাবটা এমন যে, একটু ‘মেয়েবাজি’ করলে কী বা এসে যায়? কিন্তু একটা মেয়ে সেটা করে দেখাক। তা হলে তার চরিত্র নিয়ে টানাটানি হবে।

সিঙ্গল মহিলা হয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গিয়ে কোনও আলাদা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?

এখন আর হই না। তবে সফল মহিলাদের সব জায়গায় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। বলা হয় সে অমুকের জন্য সাফল্য পেয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি বাদ দিন, এখন তো মুম্বইতে সিঙ্গল মহিলা হিসেবে থাকাটাই সমস্যার। অর্ধেক সোসাইটিতে সিঙ্গলদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া বা বাড়ি বিক্রিও করা হয় না। আমার এক বন্ধু অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব (‘টার্নিং থার্টি’-র পরিচালক)-কে ওর বিল্ডিং থেকে চলে যেতে হয়েছে শুধুমাত্র ও সিঙ্গল বলে। আমি শকড্। চাইলেও আমার ফ্ল্যাটটা কোনও সিঙ্গল মহিলাকে বিক্রি করতে পারব না! তার মানে মুম্বই বিয়ের মতো ইনস্টিটিউশনকে চাপিয়ে দিচ্ছে সমাজ! ফিরে গিয়ে ঠিক করেছি একটা পিটিশন দেব চেঞ্জ.অর্গ সাইটে। দেখি কিছু পাল্টায় কি না।

আনাচে কানাচে

‘দ্য বেঙ্গল’য়ের মিটিংয়ের ফাঁকে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও সন্দীপ ভুতোরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE