খুশির চেরিগুলো ঝরে ঝরে পড়ছে। উঁহু, ফ্রুট কেকের মাথায় নয় শুধু। ঝরে পড়ছে স্যান্টার ঝুলি থেকে, ছড়িয়ে যাচ্ছে কিছুতেই শীত পড়তে না চাওয়া ব্যাজারমুখো শহরটায়।
বরফ পড়ুক দূর দেশে। সফেদ শৌখিনতা ছুঁয়ে যাক সিমলাকে, সুইৎজারল্যান্ডকে। স্লেজগাড়ি তো আর গড়গড়িয়ে চলবে না পিচের রাস্তায়! হাল্কা শ্রাগ, স্টোল বা সুতির জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে তাই একটু একটু সেমি-উত্তুরে হাওয়াকেই আপ্রাণ উপভোগের চেষ্টায় থাকতে হবে। এক অর্থে হাঁ করে চেয়ে থাকতে হবে।
তাই সই! দুঃখু দুঃখু ভাব করে থাকা কি আর চিরকেলে আমোদগেঁড়ে বাঙালিকে মানায়? আমরা সকলে তো উৎসবে আছি, আদিখ্যেতায় আছি। প্রাচ্যে আছি, পাশ্চাত্যে আছি। নারকেল নাড়ুতে আছি, কেকে আছি। একদম সেই কারণেই নাড়ু পাকানোয় আছি, কেক মিক্সিং-এও আছি।
ঠাম্মা বানাত, মা-ও মাঝেমাঝে চেষ্টা করে। মিহি করে কোরানো নারকেল গুড় দিয়ে ভাল করে জ্বাল দিয়ে আঠা আঠা হয়ে এলে একটু ঠান্ডা করে নাড়ু পাকানো। হয় গুড়ের লালচে নাড়ু, নয়তো চিনির সাদাটে। অথবা বরফির আকারের তক্তি। তার পরে ছিল এলোঝেলো বা ভাল ভাষায় পরিবন্ধ। সোল্লাসে জ্যাড়তুতো, খুড়তুতো, পাড়াতুতো সব ভাইবোনেদের মধ্যে লুচির মতো বেলে দেওয়া ময়দার জিনিসটাকে ছুরি দিয়ে ছোট থেকে বড় দাগে চিরে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। সেই আনন্দটা ভাগ করে নেওয়ারই এ এক বিলিতি বন্দোবস্ত। ‘কেক মিক্সিং সেরিমনি’। তবে ওই যে, রসনার উৎসবের থাকতে নেই কোনও গণ্ডি!
‘কেক মিক্সিং সেরিমনি’ বস্তুটি কয়েক বছর হল ঘাঁটি গেড়েছে কলকেতার বাজারে। বড়দিন আসবে আসবে- এমন একটা মরসুমি খুশবু হাওয়ায় ছড়াতেই সাবেক নাহুম্স, ফ্লুরিজ বা তুলনায় নবীন কেক্স, দ্য ফ্রেঞ্চ লোফ, কুকি জার ফি বছরই নতুন নতুন কেক-ট্রেন্ডের জন্ম দেওয়ার চেষ্টায় থাকে। শেষমেশ পঁচিশে ডিসেম্বরের রংচঙে দিনটা আসার হপ্তাকয়েক আগে থেকেই এই কেক মেশানোর উদ্যাপনে মাতামাতি শুরু হয় শহরের নানা কোণে।
কেক মেশানো বলতে কেক তৈরির নানা উপকরণ মেশানো। এমনিতে তো বাঙালির বড়দিন অর্থাৎ সর্বজনীন ক্রিসমাস উৎসবে আদতে প্লাম কেকই যাকে বলে গিয়ে ‘রাজ’ করে। ছোট ছোট করে কাটা নানাবিধ ফল, ফলের রস, ওয়াইন এবং কেক তৈরির আর যা যা উপকরণ— সব ভাল করে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে দেওয়া। সবাই বনে যাও শেফ। হাতে গ্লাভ্স, মাথায় শেফের টুপি। প্রবাদ আছে, যত লোক সামিল হবে কেক মেশানোর এই উৎসবে, ততই নাকি খুশিতে খুশিতে ভরে উঠবে আগামীর দিনগুলো।
এই যেমন সল্টলেকের এক নামজাদা ব্যুটিক হোটেল তাদের পুলসাইড রেস্ট্রো বার-এ সম্প্রতি আয়োজন করেছিল এমনই এক ‘কেক মিক্সিং সেরিমনি’র। হোটেলের কর্মীরা, সঙ্গে কিছু সেলিব্রেটেড অতিথি মিলে পড়ন্ত এক বিকেলে মেতেছিল কেক তৈরির এই উৎসবে। আহ্বান ছিল আরও সাধারণ মানুষের।
অনেকে মিলে কেক তৈরির উদ্যাপন চলছে বিভিন্ন ক্লাবে, এমনকী বাড়িতেও। মরসুমটাই যে ওভেন থেকে বেরিয়ে আসা গরম সুগন্ধির আমেজে মজে থাকার! তাই বাঙালি দুধে-ভাতে থাকুক, প্লামে-চেরিতে থাকুক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy