Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যা ছুঁয়ে

দেড় বছর কথা বলেননি সুজয় ঘোষ-এর সঙ্গে। পরের সপ্তাহ থেকে আবার কলকাতায় তিনি। আর মাধবী মুখোপাধ্যায় আজও তাঁর কাছে ‘চারুলতা’। খোলামেলা বিদ্যা বালন। শুনলেন ইন্দ্রনীল রায়নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিতাভ বচ্চন যে-ফোন থেকে সেলফি তুলেছেন কিছুক্ষণ আগে সেই ফোন থেকেই আটটার সময় ফোন এল তাঁর। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ করে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে শুরু হল আড্ডা। মাঝখানে শুধু আট বার কল ড্রপ।

ছবি সৌজন্যে: বিদ্যা বালন

ছবি সৌজন্যে: বিদ্যা বালন

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৫ ০০:২৬
Share: Save:

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিতাভ বচ্চন যে-ফোন থেকে সেলফি তুলেছেন কিছুক্ষণ আগে সেই ফোন থেকেই আটটার সময় ফোন এল তাঁর। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ করে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে শুরু হল আড্ডা। মাঝখানে শুধু আট বার কল ড্রপ।

প্লিজ, একটা কথা অনেস্টলি বলবেন?

(হাসি) বলুন...

সেই যে ‘কহানি’র ক্লাইম্যাক্সে ‘বিদ্যা বাগচী’ হারিয়ে গেল, সে কি আর ফিরবে না?

প্লিজ সুজয় ঘোষকে জিজ্ঞেস করবেন ‘বিদ্যা বাগচী’ কবে ফিরবে? ও ছা়ড়া কেউ জানে না।

সুজয়কে জিজ্ঞেস করলেই বলে খুব শিগ্গিরি ফিরবে...

কবে? হোয়েন? প্লিজ বলুন ‘কহানি ২’-টা তাড়াতাড়ি লিখতে। সবাই মিলে চাপ দিন ওকে। অনেক দিন হল ‘বিদ্যা বাগচী’ চলে গেছে। এ বার তার নিজেরও খুব ফেরার ইচ্ছে হয়েছে।

কোথায় ফিরবেন, সেই মোনালিসা গেস্ট হাউসে?

ইয়েস (হাসি)।

আচ্ছা ‘কহানি’ পর্বে পরে ফিরছি। তার আগে আপনার কেরিয়ার নিয়ে একটা-দু’টো অপ্রিয় প্রশ্ন করতে পারি?

যতক্ষণ ইচ্ছে পারেন... ফ্লাইট মিস হলে পরের ফ্লাইট ধরব (হাসি)। বলুন!

‘কহানি’ আর ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এর পর যে উচ্চতায় আপনি পৌঁছে গিয়েছিলেন, সেই জায়গাটা এত হেলায় ছেড়ে দিলেন কেন?

কোনও উচ্চতায় যে আমি পৌঁছেছিলাম, সেটাই তো জানি না। আমি শুধু কাজ করে যাচ্ছিলাম।

কাজ করছিলেন ঠিক আছে, কিন্তু উচ্চতায় তো পৌঁছচ্ছিলেন। লোকে টিকিট কাটত ‘বিদ্যা বালন ফিল্ম’ দেখবে বলে।

বিশ্বাস করুন, সে জন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। এটাও সত্যি মাঝখানে আমার কয়েকটা ছবি একদম চলেনি। আমি ‘কহানি’তে যতটা ইনভলভড ছিলাম, ওই না-চলা ছবিগুলোতেও আমার ইনভলভমেন্ট ওয়াজ দ্য সেম। কিন্তু চলেনি, কী করা যাবে!

সব সময় শুনতাম আপনার স্ক্রিপ্ট সেন্স দুর্দান্ত। প্লিজ বলবেন,‘ঘনচক্কর’-এর চিত্রনাট্যে আপনি কী দেখেছিলেন যে ও রকম একটা ছবি করলেন?

দেখুন, সব সময় তো প্ল্যানমাফিক সব কিছু হয় না। আমি কিন্তু নিজের আনন্দে কাজ করে গেছিলাম ‘ঘনচক্কর’-এ। আসলে সব ছবিতেই আমি সেল্ফ কনজিউমড হয়ে থাকি। তাই আমার নিজের ইনভলভমেন্ট নিয়ে আমি খুশি।

কিন্তু আপনার সেই জায়গাটা তো চলে গেল। ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’ কী ‘কুইন’ দিয়ে কঙ্গনা রানাওত তো বিদ্যা বালন-এর জায়গাটা নিয়ে নিলেন।

একটা কথা বলি? বলিউডে কিন্তু সবার জন্য জায়গা আছে। আমার তো মনে হয় ‘কুইন’ কী ‘তনু ওয়েডস মনু’র সাফল্য এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে নারীকেন্দ্রিক ছবির বাজারটা কত বড়। দ্য স্পেস হ্যাজ ওপনড্ আপ।

কিন্তু আপনার ফ্যানেরা তো মিস করছে আপনাকে এ রকম ছবিতে না দেখে। স্পেশ্যালি কলকাতার মানুষ।

আমি ফ্ল্যাটার্ড। হ্যাঁ, নারীকেন্দ্রিক ছবি করতে আমার ভাল লাগে। খুব বেশি দিন আমার ফ্যানদের আমি অপেক্ষায় রাখব না এই গ্যারান্টি দিচ্ছি।

একটু সুজয় ঘোষের কথায় ফিরি?

সিওর।

ঝামেলা তো মিটে গেছে আপনাদের। আনন্দplus-এই প্রথম বেরিয়েছিল খবরটা।

সত্যি বলছি, আমাদের কিন্তু সেই রকম কোনও ঝগ়ড়া হয়নি। ও একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছিল। ‘দুর্গা রানী সিংহ’। কিন্তু সেই সময় আমার শরীর ভাল ছিল না তাই ওকে আমি রিফিউজ করেছিলাম। ঝগড়া হয়নি।

বুঝলাম। কিন্তু সুজয়ের খারাপ লাগাটা তো স্বাভাবিক। আপনি শরীর ভাল নেই বলে ওঁর ছবি করছেন না কিন্তু ‘হমারি অধুরি কহানি’র শ্যুটিং করছেন?

বিশ্বাস করুন, আমি কিন্তু ‘হমারি অধুরি কহানি’ও করতে চাইনি। ওদের বলেও দিয়েছিলাম। কিন্তু শ্যুটিংটা পিছিয়ে যাওয়াতে আমার করতে অসুবিধে হয়নি। তবে সুজয়ের সঙ্গে যে কাজ করতে পারছিলাম না, সেটা ভেবে কিন্তু আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছিল। আই ওয়াজ ফিলিং রিয়েলি ব্যাড। আপনাকে একটা স্কুপ দিতে পারি…

প্লিজ দিন।

আমি আর সুজয় কিন্তু প্রায় দে়ড় বছর কথাও বলিনি…

‘কহানি’র পরিচালকের সঙ্গে দেড় বছর কথা বলেননি, এটা দারুণ স্কুপ। কিন্তু তা-ও বলবেন কোনও ঝামেলা ছিল না?

কথা না হলেই কি ঝামেলা হয় নাকি (হাসি)? আসলে কিছুতেই ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছিল না। যে জায়গাগুলোতে দেখা হয়ে থাকে আমাদের, প্রিমিয়ার-পার্টি, কোথাও দেখা হচ্ছিল না। তাই কথা হয়নি।

জানি খুব কল ড্রপ হয়। কিন্তু ফোন বলে একটা জিনিস আছে তো?

(হাহাহা) জানতাম প্রশ্নটা আসছে।

তা হলে?

তা হলে আর কিছুই না। খুব শিগগির আমরা আবার কাজ করছি। এই তো একটু আগে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনেই কথা হল ওর সঙ্গে। শুনুন, যে জিনিস আপনি মন থেকে চাইবেন, পুরো ইউনিভার্স সেটা আপনাকে দেওয়ার জন্য নানা ফন্দি আঁটবে। আমার আর সুজয়ের কাজ করাটাও তাই।

আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না সুজয়ের মতো অত টকেটিভ একজন দে়ড় বছর আপনার সঙ্গে কথা না বলে থেকেছিলেন...

(হাহাহা) আমিও কিন্তু খুব টকেটিভ।

এত টকেটিভ যখন আপনি, তা হলে এত দিন পর ট্যুইটার জয়েন করলেন কেন?

দেখুন, আমি অসম্ভব প্রাইভেট একজন মানুষ। আমার কাছে ইন্টা‌র‌্যাকশন মানে ওয়ান অন ওয়ান ইন্টা‌র‌্যাকশন। দেখবেন, আমি গ্রুপ ইন্টারভিউয়ে বিশ্বাস করতে চাই না। কথা হলে হবে দু’জনের মধ্যে। আর কেউ থাকবে কেন?

এই চিন্তাধারার জন্যই আমি এত দিন কোনও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক জয়েন করিনি। তাই আমার নামে বোধহয় ম্যাক্সিমাম ফেক আইডি রয়েছে। কিন্তু ট্যুইটারে জয়েন করার পর থেকে দেখছি এটা দুর্দান্ত মাধ্যম নিজের চিন্তাধারা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

আচ্ছা, আজকের বিদ্যা বালন তো মিসেস সিদ্ধার্থ রায় কপূর-ও। বলিউডের অন্যতম প্রোডিউসরের স্ত্রী। কত জন পরিচালক আপনাকে রোজ অনুরোধ করেন তাঁদের চিত্রনাট্যগুলো সিদ্ধার্থের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য?

(হাসি) প্রচুর অনুরোধ পাই, এটা ঠিক। তাঁদের একটাই কথা বলি, আপনারা ওর অফিস থেকে সিদ্ধার্থের বোর্ড লাইনের নম্বরটা ট্রাই করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন। আর যাঁরা নাছো়ড়বান্দা, তাঁদের আমি সিদ্ধার্থের ই-মেল আইডি-টা দিয়ে দিই।

সিদ্ধার্থের কাছেও তো আপনাকে অ্যাপ্রোচ করার নানা ফোন আসে নিশ্চয়ই?

অবশ্যই। সিদ্ধার্থের স্ট্যান্ডার্ড রিপ্লাই, ‘বিদ্যা হ্যাজ আ ম্যানেজার। প্লিজ কল হার আপ’ (হাসি)। কাজের দিকটায় এই প্রফেশনালিজমটা বজায় না রাখলে আমরা থাকতে পারব না। এ ছাড়া উপায় নেই দু’জনেরই।

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনে তো মিস্টার বচ্চন খুব সেলফি তুললেন আপনাদের। ওটাই তো ওই সন্ধ্যার হাইলাইট হয়ে গেল!

আমিই তো তুলতে বললাম। অত জনকে নিয়ে সেলফি, মিস্টার বচ্চনের হাইট না হলে ভাল উঠত না ছবিটা।

মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে আপনার বন্ডিংটা তো স্পেশ্যাল?

খুউব স্পেশ্যাল। আমার ‘অরো’ আফটারঅল। ওই মঞ্চে যাঁরা যাঁরা ছিলেন, সবার সঙ্গেই আমার বন্ডিং খুব ভাল। মিস্টার বচ্চন, জয়াজি, শর্মিলাজি। আমি ওঁদের দেখে বড় হয়েছি। তবে সবচেয়ে খুশি হয়েছি কাকে মিট করে জানেন?

কাকে?

মাধবীদি (মুখোপাধ্যায়)। বহু দিন আগে আমি একটা মিউজিক ভিডিয়ো করেছিলাম। উনি ঠাকুমা, আমি ওঁর নাতনি। সেই থেকে আমাদের বন্ডিং। আমার কাছে মাধবীদিকে মিট করা মানে ‘চারুলতা’কে ছুঁয়ে দেখা। আপনি এই ইন্টারভিউয়ের পরে আমাকে আপনার ই-মেল আইডি-টা এসএমএস করবেন। আমি ওঁর সঙ্গে আমার সেলফিটা পাঠাব আপনাকে।

শুনলাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনী’ করছেন আপনি?

(হাসি) খুব ভাল লেগেছে ‘রাজকাহিনী’। রিলিজের আগেই দেখেছিলাম। ভীষণ পাওয়ারফুল ছবি। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে যিশুকে। হি ইজ আউটস্ট্যান্ডিং। আমি িযশুকে সেটা বলেওছি। আর ঋতুপর্ণা দারুণ। খুব ভাল লাগল সুদীপ্তাকে। বাকি মেয়েদের অনেকের নাম জানি না বাট দে ওয়্যার অল ফ্যান্টাস্টিক।

বুঝলাম। কিন্তু আপনাকে কবে দেখব বেগম জান-এর চরিত্রে?

আর কিছু দিন অপেক্ষা করুন (হাসি)। এখনও টু আর্লি টু টক।

কলকাতা ফিরছেন তো পরের সপ্তাহে?

ইয়েস, আই অ্যাম ব্যাক। সেই নভেম্বর মাস আর আমি কলকাতায় শ্যুটিং করছি। পুরোটা দেজা ভ্যুঁ। ঋভু দাশগুপ্তর ছবিটা করছি মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে। অনেক দিন থাকতে পারব কলকাতায়, এটা ভেবেই আমি খুশি।

জানেন ‘পিকু’ দেখে অনেকে বলেছিল দীপিকা খুব ভাল, কিন্তু বিদ্যা হলেও দারুণ হত?

তাই? প্লিজ সুজিতকে (সরকার) বলবেন কথাটা (হাসি)। আসলে ‘পিকু’ দেখে আমারও খুব হিংসে হয়েছিল জানেন?

কেন?

ও আমার হিংসে হয় (হাসি)। আমি ছাড়া কলকাতায় কেউ শ্যুটিং করছে দেখলেই আই ফিল জেলাস। আফটারঅল আমি মনেপ্রাণে বাঙালি, এটা মানেন তো?

সে তো পুরো কলকাতা মানে।

জানি আমি সেটা।

শেষ প্রশ্ন। ‘বিদ্যা বাগচী’ যখন কলকাতায় এসেছিল, তিন ঘণ্টা পরে সবাই জেনেছিল প্রেগনেন্সিটা মিথ্যে। বুঝতে পারছেন কোন দিকে যাচ্ছে প্রশ্নটা?

(হাসি) আমি শুনতে চাই না (চেঁচিয়ে স্পষ্ট বাংলায়) এবার কিন্তু আর কল ড্রপ হবে না...

থ্যাঙ্ক ইউ বিদ্যা।

থ্যাঙ্ক ইউ। ই-মেল আইডি-টা পাঠাবেন ...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE