Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শাহরুখের হ্যাপি দিওয়ালি

বড়দা হয়ে সামলেছেন টিমকে। তাতে স্কোর করার সুযোগ পেলেন দীপিকা, অভিষেক-ও। কিন্তু ওই অবধি। লিখছেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়।স্পুফ বা প্যারোডি ব্যাপারটা কয়েক বচ্ছর হল বলিউডে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। তাতে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মরছে। বাজারে যার কাটতি আছে, এমন সব রেফারেন্স হাতে নিয়ে খেলতে নামা যাচ্ছে। নিরাপদ লগ্নি। তার পর সেগুলোকে একটু ঠাট্টা-মস্করা করে নিলেই অনেকটা কাজ এগিয়ে গেল। বেশ নতুন-নতুন একটা মলাটও দেওয়া গেল, অথচ সবটা নতুন করে ভাবতে হল না। বেশ স্মার্ট শোনাল, অথচ বিশেষ খাটতে হল না।

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

স্পুফ বা প্যারোডি ব্যাপারটা কয়েক বচ্ছর হল বলিউডে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। তাতে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মরছে। বাজারে যার কাটতি আছে, এমন সব রেফারেন্স হাতে নিয়ে খেলতে নামা যাচ্ছে। নিরাপদ লগ্নি। তার পর সেগুলোকে একটু ঠাট্টা-মস্করা করে নিলেই অনেকটা কাজ এগিয়ে গেল। বেশ নতুন-নতুন একটা মলাটও দেওয়া গেল, অথচ সবটা নতুন করে ভাবতে হল না। বেশ স্মার্ট শোনাল, অথচ বিশেষ খাটতে হল না। লোকে শুধু হেসেই মজা পেল না, ‘দেখেছ নিজেদের নিয়ে কী রকম মজা করতে পারে’ বলে দরাজ সার্টিফিকেটও দিয়ে ফেলল। ফারহা খান এই ব্যাপারটাতে বরাবরই সিদ্ধহস্ত। এবং তিনি যেটা ভাল পারেন, তিনি সেটাই করতে চাইবেন, এতেও আশ্চর্যের কিছু নেই। দর্শকও ফারহার ছবি যখন দেখতে যাবেন, তখন একটা আদল মাথায় রেখেই যাবেন, এটাই প্রত্যাশিত। সুতরাং ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিটা কেন হ্যাপি নিউ ইয়ারের মতো, এ প্রশ্ন তোলার কোনও মানে হয় না। আমরা তা তুলবও না। এটা কী, ওটা কেন ভাববে বলে যদি কেউ ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ দেখতে গিয়ে থাকে, সেটা একান্তই তার সমস্যা। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর নয়। এই ছবিতে বরং ভাবতে হবে, তিন ঘণ্টার দশ সেকেন্ড কম হল-এ বসে থেকে আপনার পয়সা উসুল হল কি না।

এই পয়সা উসুলের ঢেকুরটা যাতে ওঠে, ফারহা তার জন্য চেষ্টার কমতি করেননি। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’য়ের সেটাই গুণ। আবার সেটাই দোষ। ডাকাতি বা হেইস্ট-এর সঙ্গে নাচের কম্পিটিশনকে মেলানো, নানা কিম্ভূত চরিত্র, জবরদস্ত ক্লাইম্যাক্স এগুলো নিঃসন্দেহে ভাল আইডিয়া। যতগুলো স্পুফ আছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটা চমত্‌কার। মোদীজি আমার মতে বেস্ট। ফারহার আরও একটা গুণ স্বীকার না করলেই নয়। তিনি যে ধরনের ছবিতে বিশ্বাস করেন, একেবারে হাত খুলে সেই ছবিই করেন। কোনও রকম ভান-ভণিতার মধ্যে যান না। এবং তার মধ্যে ডেভিড ধবন বা রোহিত শেট্টির চেয়ে ফারহা পিছিয়ে তো নয়ই বরং এগিয়ে থাকতে পারেন। এই ‘মর্দানি’ স্যালুটযোগ্য!

কিন্তু চড়া সুরে চড়া রঙের ছবি করবেন বলে কি কোনও রকম পরিমিতি রাখা চলবে না? বেশি গুড় ঢাললে বেশি মিষ্টি যেমন হয়, গা কিটকিট করা মিষ্টি যে বেশি খাওয়া যায় না, সেটাও তো ঠিক! এত রং, এত আলো, এত বাজনা কেন? চোখ-কানের একটু বিশ্রামও তো চাই! ফারহা যে ঘরানার ছবি করেন, তাতে সব কিছুই যতটা সম্ভব ফাঁপিয়ে ক্যারিকেচার-এ পর্যবসিত করাটাই নিয়ম! মানলাম! কিন্তু ক্যারিকেচার করতে গেলে টাইমিং-এর বোধ একেবারে বিসর্জন দিতে হয়, এ কথা কে বলল? বিশেষ করে ছবিতে যে ক’টা মারপিটের দৃশ্য আছে শাহরুখ বা সোনু যেই থাকুন, বক্সিং রিংই হোক বা আটলান্টিস-এর ছাদ নির্বিঘ্নে একটু ঝিমিয়ে নিতে পারেন! সম্পাদকদের টিমও সম্ভবত তাই-ই করেছিল। তার পর ধরা যাক, ছবির প্রথম পর্বে এক-একটা চরিত্রকে ইন্ট্রোডিউস করানো হচ্ছে! নানা রকম কমিক উপাদান উপুড় করে দেওয়া হচ্ছে! কিন্তু দেখলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশি। ফারহা এক বার ‘কাল হো না হো’ দেখে নিলে পারতেন! দেখতেন, ফর্মুলা মেনেও কী চমত্‌কার হতে পারে ইন্ট্রোডাকশন সিন!

শুধু তাই না, ফারহা সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছেন নায়কের দৃশ্যটাই। খুব উঁচু দিয়ে ছয় মারতে গিয়ে একেবারে লোপ্পা। কষ্ট হয় শাহরুখের জন্যে। প্রতিটা ফ্রেমে যেন তাঁকে মনে করিয়ে দিতে হবে, তিনি শাহরুখ খান! প্রতি সেকেন্ডে যেন তাঁকে নিজেকে বিপণন করে যেতে হবে! দর্শক তো জানে, তিনি কে! তবে কেন এত বাড়তি? এত অতিরিক্ত? ‘ওম শান্তি ওম’-এ সিক্স প্যাক ছিল বলে এ বার এইট প্যাক দেখাতে হবে এটা বিশ্বশ্রীর মাথাব্যথা হতে পারে! নায়কের হবে কেন?

ফারহা তাঁর বন্ধু পরিচালক। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, বন্ধুর সত্যিকার উপকার ফারহা এ ছবিতে করতে পারলেন না। বরং উপকৃত হলেন বাকিরা। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’য়ে দীপিকা যে ভাবে নজর টেনে নিয়েছিলেন, এখানেও তাই করলেন। ‘মোহিনী’ই এ ছবির সেরা চরিত্র। তার পরেই নন্দু। অভিষেক বচ্চন ‘ধুম থ্রি’ তে আমিরের তলায় চাপা পড়ে যাওয়ার দুঃখটা এই ছবিতে পুষিয়ে নিয়েছেন। সোনু সুদ বা জ্যাকি শ্রফ কেউই খুব একটা দাগ কাটার সুযোগ পাননি। নাসির-পুত্র ভিভানও না। এই দু’জনের আর একটু জায়গা পাওয়া দরকার ছিল। বোমান ইরানি খারাপ অভিনয় করতে জানেন না, তাই করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর মতো অভিনেতা এ সব খেজুরে চরিত্র না করলেই খুশি হব। তবে সবাই মিলে ছবিতে একটা টিম হয়ে উঠতে পেরেছেন, সেটা কম কথা নয়। শাহরুখের কাজ ছিল বড়দা হয়ে সবাইকে আগলানো। তিনি সেটাই করেছেন। কিন্তু নিজের শরীর ছাড়া অন্য ক্যারিশ্মা দেখানোর সুযোগ পাননি। শাহরুখের যা কিছু অস্ত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী রোমান্স, চোখ ছলছলে আবেগ বা উইটি কমেডি কোনওটাই এ ছবিতে সে ভাবে মজুত নেই। ফলে ছবিটা আগা থেকে গোড়া শাহরুখময় হয়েও, শাহরুখের ছবি হয়ে উঠতে পারেনি। ‘মাই নেম ইজ খানে’র পরে মনে রাখার মতো ছবি কিন্তু আর করেননি শাহরুখ। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ হয়তো তাঁকে টাকার অঙ্কে আর একটা হ্যাপি দিওয়ালি দেবে, আর একটা ‘ওম শান্তি ওম’ দেবে না।

এর পরেও দুইখান কথা আছে। ‘ওম শান্তি ওম’-এ প্রায় গোটা বলিউড একত্র হয়েছিল, মনে আছে নিশ্চয়! সেই সোনার সংসারে যে ভাঙন ধরেছে, সেটা অ্যাদ্দিনে সকলেরই জানা। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’য়ের ক্যামিও-তালিকা তাই আলাদা করে প্রণিধানযোগ্য। মালাইকা অরোরা, ডিনো মোরিয়া, সাজিদ খান (ভাগ্যিস শিরীষ কুন্দ্রা এসে পড়েননি), প্রভুদেবা, অনুরাগ কাশ্যপ!!! সঙ্গীত পরিচালক বিশাল ডাডলানিও আছেন। যদিও ছবিতে ‘মনবা লাগে’ আর ‘ইন্ডিয়াওয়ালে’ ছাড়া কোনও গানই মনে থাকে না। কিন্তু বোমানের মায়ের চরিত্রে বহু দিন পরে ডেইজি ইরানিকে দেখে ভাল লাগবে। আর প্লিজ, এন্ড টাইটেলটা দেখুন! ওখানে আর একটা পুরোদস্তুর নাচের কম্পিটিশন আছে। ফারহা বিচারক। তাঁর তিন ছেলেমেয়েও হাজির! আর আব্রামকে নিয়ে শাহরুখ! ছবির এই দৃশ্যটাই সবচেয়ে ভাল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE