Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সামার অব সচিন

ভাবাই যায় না। দেখতে দেখতে ষোলো বছরের ছেলেটা বিয়াল্লিশে পড়ে গেল! আর কে বলতে পারে বিয়াল্লিশতম বছরে তাঁর জীবনে ‘সামার অব ফর্টি টু’ ফিল্মের মতোই স্মরণীয় নানান কিছু ঘটবে না? আজ সচিন তেন্ডুলকর-এর জন্মদিনে নয়াদিল্লি থেকে লিখছেন সাংবাদিক জিএস বিবেকহঠাৎ করে সচিন তেন্ডুলকরের ফোনেই ঢুকল এসএমএসটা। সেন্ডার দু’জন: বিরাট কোহলি ও যুবরাজ সিংহ। অনেক দিন ধরেই অন ড্রাইভ মারা নিয়ে বিরাটের সমস্যা হচ্ছিল। বিরাটের মনে হচ্ছিল বেশি শাফল করতে গিয়ে ব্যালেন্স হারাচ্ছেন। আর যুবরাজ নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন ‘সচিন পাজি’র সঙ্গে।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

হঠাৎ করে সচিন তেন্ডুলকরের ফোনেই ঢুকল এসএমএসটা।

সেন্ডার দু’জন: বিরাট কোহলি ও যুবরাজ সিংহ।
অনেক দিন ধরেই অন ড্রাইভ মারা নিয়ে বিরাটের সমস্যা হচ্ছিল। বিরাটের মনে হচ্ছিল বেশি শাফল করতে গিয়ে ব্যালেন্স হারাচ্ছেন।
আর যুবরাজ নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন ‘সচিন পাজি’র সঙ্গে।
বিরাট আর যুবরাজের এসএমএস-এর বক্তব্য ছিল— ‘পাজি, আমরা মুম্বইতে। আমাদের ব্যাটিং নিয়ে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে। কালকে সকালে কি এমআইজি ক্লাব বান্দ্রাতে তুমি আসতে পারবে? আমরা তোমার সঙ্গে আধ ঘণ্টা কথা বলতে চাই।’
এই এসএমএসের যে উত্তর পাঠিয়েছিলেন অর্জুন তেন্ডুলকরের বাবা, তা দেখে চমকে গিয়েছিলেন ওঁরা দু’জন। ‘আধ ঘণ্টা! ব্যাটিংয়ের সমস্যা যখন, তখন দু’ঘণ্টা নয় কেন?’
এই না হলে জিনিয়াস।
এই না হলে সচিন তেন্ডুলকর।
প্রতিদিন তো আর আমরা ভগবানের জন্মদিন পালন করতে পারি না। কিন্তু প্রতি বছর ২৪ এপ্রিলটা সেটা পারি।
আর ‘গড’‌য়ের বিয়াল্লিশতম জন্মদিনের সকালে একটাই কথা বারবার মনে পড়ছে।
সচিন যখন খেলতেন তখন সবার একটাই প্রশ্ন ছিল, কত দিন খেলবেন এসআরটি?
আজ যখন তিনি রিটায়ার করেছেন, প্রত্যেক ক্রিকেট আলোচনায় একটাই কথা— কত দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন সচিন?
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, সারাজীবন যেমন প্রেসকে অন্ধকারে রেখেছিলেনি, এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও কেউ কিছু জানবে না যত দিন না সচিন জানাচ্ছেন।

আজ যখন দেশে কে কোচ হবে, সৌরভ না রাহুল— এই নিয়ে চলছে নানা গল্প, তখন সচিনের নামটা কিন্তু কোথাও উঠে আসছে না।

তার একটা ব্যাখ্যাও রয়েছে।

ভারতে আমরা অধিনায়ক হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মূল্য বুঝতে পারি না, তার কারণ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এমএস ধোনি এসে গিয়েছিল।

লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়ের মূল্য বুঝিনি কারণ অজিঙ্ক রাহানে, শিখর ধবন এসে গিয়েছিলেন।

গত টেস্ট সিরিজে বিরাট কোহলি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যে ভাবে ব্যাট করেছিলেন, আমরা কিন্তু সচিনকে ভুলেই গিয়েছিলাম।

আমি চাই এমন একটা সময় আসুক, যখন ব্যাটসম্যান কোনও বোলারকে খেলতে পারবে না, আর গোটা ভারত সমস্বরে বলে উঠবে ‘‘ইস্, সচিন থাকলে ঠিক খেলে দিত!’’

ক্রিকেট রোম্যান্টিক বলেই সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি, যখন ভারতীয় ক্রিকেট-দেবতার অবতার রূপে আবার সচিন ফিরবেন।

আজ তো আমরা ভগবানকে মিস করছি না।

আগে মিস করি... তবেই তো তিনি দেখা দেবেন।

এ তো গেল ক্রিকেট রোম্যান্টিকের গল্প। কিন্তু সচিন-ঘনিষ্ঠদের মতে অবসরজীবনটা যথেষ্ট উপভোগ করছেন সচিন।

আর আইপিএল-এ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স টিমের সঙ্গে সচিনকে দেখলে তো বোঝাই যায় না মানুষটা ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন!

এই তো গত কালই সচিন কোটলা এসেছিলেন। বাসে আগে যে জায়গায় বসতেন, আজও সেখানেই বসেন। তখন যেমন প্র্যাকটিসে সবার আগে নামতেন, আজও তাই নামেন। সে দিন মাঠে ঢুকেই সোজা ড্রেসিংরুমে ঢুকে গেলেন আগের মতো। ইন্ডিয়ান টিমে যখন খেলতেন তখন হোম ড্রেসিং রুমে ঢুকতেন, আইপিএল বলে অ্যাওয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকলেন। এখানেই থেমে থাকছেন না। আজও দেখলাম নেটে সেই আগের মতো বল করছেন।

আমার মনে হয় সচিন, আইপিএল-এর এই মেন্টরশিপ জাতীয় কাজটাই এই মুহূর্তে চাইছেন। এখনই আগ বাড়িয়ে নিজের থেকে বেশি চাপ নিতে চাইছেন না।

কিন্তু খবর তিনি সবই রাখছেন। সে দিন শুনলাম অনিল কুম্বলেকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, কোনও ভাল লেগ স্পিনার অনিলের চোখে পড়েছে কি না!

এই হচ্ছেন সচিন। খেলা ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে দায়িত্ববান সৈনিক।

অনেককেই বলতে শুনি, রিটায়ারমেন্টের পর কী রকম যেন সচিন পিছিয়ে পড়েছেন। কমেন্ট্রিতে সৌরভ, রাহুল অনেক অনেক এগিয়ে। সচিন সেখানে কী রকম সব কিছু থেকেই দূরে।

আমার ধারণা, সচিন খুব ভাল করেই জানেন ওঁর লিমিটেশন। বিশ্বকাপের আগেই একটা চ্যানেলে সচিন নানান প্রোগ্রাম করেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের সেই প্রোগ্রামের টিআরপি দুর্ধর্ষ বাড়ল না।

তার কারণ ক্যামেরার সামনে সৌরভের মতো সচিন স্বতঃস্ফূর্ত নন। আর সচিন সেটা নিজেও জানেন। সে জন্যই কোচিংয়ের মতোই সচিন টিভি অ্যাসাইনমেন্ট বেশি করবেন না বলেই আমার ধারণা।

তা হলে আমরা কি সচিনকে একটু হলেও ভুলে যাচ্ছি? সেটা কি ভারতে হতে পারে কোনও দিন?

আজও হরভজনের আইপডে সেই গানগুলো আলদা ফোল্ডারে রাখা আছে, যেগুলো সচিনপাজির থেকে নেওয়া।

আজও সুরেশ রায়না দেখা হলেই বলেন অ্যাডিডাসের ‘এসটি’ ব্যাটটা ছাড়া উনি ক্রিকেট খেলার কথা ভাবতেও পারেন না।

আজও ভারতের ড্রেসিংরুম যাঁরা আলো করে আছেন, তাঁদের সবার মনে ‘স্পেশাল সচিন মেমরি’ চিপ রয়েছে।

এ রকম যার উপস্থিতি, তাকে কি কোনও দিন ভোলা যায়?

এটাই বোধহয় সচিন তেন্ডুলকরের সবচেয়ে বড় লেগ্যাসি।

এ রকম উপস্থিতি তো তাঁদেরই হয়, না থেকেও যাঁরা সর্বক্ষণ থাকেন।

কিছু কিছু দেশে আমরা তাঁদের ‘গড’ বলি।

আমাদের দেশে তাঁকে সচিন তেন্ডুলকর বলা হয়।

আজ ৪২-এ পড়লেন ।

কে বলতে পারে এই বিয়াল্লিশের সচিনের থেকে আমরা ‘সামার অব ফর্টি টু’র মতো আর একটা আইকনিক ছবি পাব না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE