Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যু যে কত কাছে হাড়ে হাড়ে বুঝলাম

বিজ্ঞান ভবনে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভয়াবহ অটো দুর্ঘটনা। তিন সপ্তাহ এইমস-এর ট্রমা সেন্টারে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা ফিরছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তার আগে নয়াদিল্লির আইটিইউতে শুয়ে শুয়েও একমাত্র আনন্দplus-এর সঙ্গে হল ফোন আড্ডা। এ পারে ইন্দ্রনীল রায়বিজ্ঞান ভবনে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভয়াবহ অটো দুর্ঘটনা। তিন সপ্তাহ এইমস-এর ট্রমা সেন্টারে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা ফিরছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তার আগে নয়াদিল্লির আইটিইউতে শুয়ে শুয়েও একমাত্র আনন্দplus-এর সঙ্গে হল ফোন আড্ডা। এ পারে ইন্দ্রনীল রায়

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

অশোকা হোটেলের স্যুইটে সোনার মেডেল দেখিয়ে কনট প্লেসে ইউনাইটেড কফি হাউসে ডিনার তো বোঝা গেল। তার পরে কিনা অটো অ্যাকসিডেন্ট? ব্যাপারটা চূড়ান্ত অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স না... সিনেমাতেও দেখাবে না।

হা হা হা হা কী করব?

কী করব মানে? সৃজিত মুখোপাধ্যায় অটো চড়ে ঘুরবে কেন দিল্লির রাস্তায়? গাড়ি ভাড়া করা যেত না?

অবশ্যই যেত। আমি আসলে জেএনইউতে থাকাকালীন স্টুডেন্ট লাইফে অটো করেই ঘুরে বেড়াতাম। কোনও দিন ভাবিনি অ্যাক্সিডেন্ট হবে এই রকম। জানলে কি আর উঠতাম?

জানলে উঠতেন না ঠিকই, কিন্তু যার ওপর বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দশ কোটি টাকার লগ্নি রয়েছে, তার আর একটু সাবধান হওয়া উচিত ছিল না কি?

হ্যাঁ ছিল। মানছি...

ঠিক কী হয়েছিল সে দিন রাতে?

জেএনইউ-থেকে অটো ধরেছিলাম। আজকে ফিরে তাকালে মনে হয় অটো ড্রাইভার বোধ হয় ঈষৎ মদ্য পানও করেছিল। অটোতে উঠেই দেখি একটা সাঙ্ঘাতিক শার্প টার্ন নিল। আমি তখনই সাবধান করে বলেছিলাম এই রকম চালালে আমরা নেমে যাব।

বলতে না বলতেই আর একটা শার্প টার্ন এবং অ্যাক্সিডেন্ট। রাস্তার ধারে দিল্লি মেট্রোর কনস্ট্রাকশানের বড় বড কংক্রিট স্ল্যাব রাখা ছিল। আমার গোড়ালিটা সেই চলন্ত অটো আর কংক্রিট স্ল্যাবের মধ্যে পড়ে গিয়ে থেঁতলে যায়।

ও মাই গড !

হ্যাঁ, বলছি তো কপাল ভাল বলে আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে পারছি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম।

মৃত্যু যে আমাদের কত কাছে এই অ্যাক্সিডেন্টে সেটা বুঝতে পারলাম। জীবন সম্বন্ধে একটা অন্য পারস্পেকটিভ দিল পুরো ঘটনাটা।

পারস্পেকটিভ তো বোঝা গেল। কিন্তু অনেকেই বলেছে ব্যাপারটা ঘটল কারণ বান্ধবী প্রিয়ার সঙ্গে ‘রোম্যান্স রিভিজিট’ করার জন্যই অটোতে চড়া?

(প্রচণ্ড হাসি) দেখুন আপনাকে মিথ্যে বলব না। এটা ঠিকই বলেছেন। আসলে দিল্লিতে এলেই স্টুডেন্ট লাইফটা আমাদের দু’জনকেই এতটা হাতছানি দেয়...

লোকে তো বলছে দিল্লি গেলে শুধু কাকাবাবুর অ্যাক্সিডেন্ট হয় না, কাকাবাবুর পরিচালকেরও হয়।

হ্যাঁ, সত্যি সেটা। দিল্লিতে কাকাবাবু মানে একটা জিন্ক্স। কিছু না কিছু প্রবলেম হবেই। মনে আছে আগের বারও সব ঠিকঠাক হয়ে মিশর রহস্য ছ’মাসের জন্য পিছিয়ে গেল। এই বারও তো পিছিয়ে গেল কাকাবাবু ।

অসুবিধে হবে তো পিছিয়ে গেলে?

না, সেই রকম অসুবিধে হবে না। কলকাতা ফিরে কথা বলব টিমের সঙ্গে। সুইৎজারল্যান্ডে আমাদের রেকি ফাইনালাইজড হয়ে গিয়েছে।

যেটা সমস্যা হল, গরমকালে সুইৎজারল্যান্ডের বরফে শ্যুটিংটা আরামসে করা যেত। এর পরে অক্টোবরে শ্যুট করলে বোধ হয় ব্যাপারটা অত সহজে করা যাবে না।

তাতে আর আশ্চর্যের কী? সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের শ্যুটিং মানেই তো নানাবিধ ঝামেলা...

(হাসি) হ্যাঁ সেই। আগের বার বেদুইনরা মেশিন গান নিয়ে তাড়া করেছিল সাহারা মরুভূমিতে। এই বার দেখি কী হয়...

কলকাতা কবে ফিরছেন?

কলকাতা ফিরছি বৃহস্পতিবার রাতে। অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিল্লি এয়ারপোর্ট। হুইলচেয়ার করে প্লেনে ওঠা, হুইলচেয়ারে করে নামা। অ্যাম্বুল্যান্সে করে সোজা ফ্ল্যাট।

‘রাজকাহিনি’ তো মুক্তি পাচ্ছে পনেরোই অগস্ট।

হ্যাঁ, ‘রাজকাহিনি’ ফিফটিন অগস্ট। ‘রাজকাহিনি’ নিয়ে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় কারণ পোস্টপ্রোডাকশন প্রায় শেষ। এই যে ‘রাজকাহিনি’র পোস্টপ্রোডাকশনটা আগেই করে নিয়েছিলাম সেটার সুফল এখন পাচ্ছি। গিয়ে প্রেশারে পড়ব না।

কলকাতা থেকেও তো প্রচুর মানুষজন দেখা করতে গিয়েছিল শুনলাম হাসপাতালে...

হ্যাঁ, যিশু (সেনগুপ্ত) তো মাকে নিয়েই এসেছিল। যিশু ছাড়াও ঋতুপর্ণা (সেনগুপ্ত), গার্গী (রায়চৌধুরী) এসেছিল। ডেরেক ও’ ব্রায়েন এসেছিলেন। বাবুলদা (সুপ্রিয়) এসেছিলেন। দিদি মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন। কনীনিকা দিল্লি এসে ফোন করেছিল, কিন্তু হসপিটালে আসতে পারেনি।

যাঁরা হাসপাতালে আপনাকে দেখতে এলেন, তাঁদের কি এ বার আপনার ছবিতেও দেখা যাবে?

(প্রচণ্ড হাসি) যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা জানেন আমি সেই রকম পরিচালক নই।

এত সব মানুষজনকে দেখে বান্ধবী প্রিয়া কী বলছে?

প্রিয়া যে ভাবে এই সময়টা আমার সঙ্গে ছিল তার জন্য আমি ওভারহোয়েল্মড্। ওর একটা অসম্ভব খারাপ লাগা, গিল্ট আছে যে আমার এত বড় একটা অ্যাকসিডেন্ট হল।

শি ওয়াজ দেয়ার লাইক এ রক। ওর লন্ডন ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা ও পিছিয়ে দিয়েছে। আই অ্যাম ব্লেসড। অনেক কিছু শিখলাম এই এক মাসে....

যেমন?

শিখলাম আমাদের কষ্টটা কষ্টই নয়। আমরা ভাবি না, উফ থ্রিজি নেই এখানে, তা হলে হোয়াটস্যাপ করব কী করে? অথবা বিরিয়ানিতে মাংসটা কম দিল কেন আমাকে? এগুলো না লাক্সারি। মানুষের সমস্যা কী রকম হতে পারে এই ক’দিনে ইনটেনসিভ ট্রমা ইউনিটে থেকে বুঝে গিয়েছি। দেখেছি ছোট্ট ছেলের পা কাটা। দেখলাম একজন মানুষ হরিয়ানার গ্রামে মোবাইল রিচার্জ করতে গিয়েছিল। স্থানীয় গুন্ডারা তাকে এমন মেরেছে যে সে প্রায় প্যারালিটিক হয়ে গিয়েছে। দেখলাম এত কিছুর মধ্যেও তারা হাসছে। তাদের বাড়ির লোকেরা নিজেদের শক্ত রাখছে...

তাদের সঙ্গে আপনার কথা হয়?

হ্যাঁ, সবার সঙ্গে। সবাই জিজ্ঞেস করে কেমন আছি। নানা বিষয়ে কথা হয়। ধোনির ব্যাটিং থেকে কেজরিওয়াল। এ ক’দিনে আমি যেন একটা পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম। ফিরে যেতে চাই কলকাতা প্রবল ভাবে। কিন্তু এই মানুষগুলো, এই মুখগুলো সারাজীবন থেকে যাবে আমার সঙ্গে। আই উইল মিস দেম।

এতক্ষণ কথা বলার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সৃজিত...

থ্যাঙ্ক ইউ। বেশ কিছু দিন এখন হুইলচেয়ার। তার পর ব্যাক টু লাইটস ক্যামেরা অ্যাকশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE