Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

স্টারডম হল একটা ফাঁদ

অনেকেই জানতেন না রাজেশ-ডিম্পলের বড় মেয়ে এত ভাল লিখতে পারেন। কিন্তু তাঁর প্রথম বই বেরোতেই হইচই চারিদিকে। লেখক টুইঙ্কল খন্না-র সঙ্গে কথা বললেন নাসরিন খানঅনেকেই জানতেন না রাজেশ-ডিম্পলের বড় মেয়ে এত ভাল লিখতে পারেন। কিন্তু তাঁর প্রথম বই বেরোতেই হইচই চারিদিকে। লেখক টুইঙ্কল খন্না-র সঙ্গে কথা বললেন নাসরিন খান

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

মাসখানেক আগে বার হওয়া ‘মিসেস ফানিবোনস’ তো ঝড় তুলে দিয়েছে।

না না, আমি ঝড়-টর তুলিনি। এটা তেমন কিছু ব্যাপারই নয়। তবে বইটা যে ভাল লেগেছে মানুষের তার জন্য আমি আনন্দিত। বইটা যে এত ভাল বিক্রি হবে আমি ভাবতেও পারিনি। আমার মনে হয়েছিল মাঝারি ধরনের ভাল চলবে বইটা।

যাঁরা আপনার বই বা ব্লগ পড়েননি তাঁদের জন্য বলে রাখছি আপনার লেখা তো ব্যঙ্গাত্মক, হাসির। শুরুতেই এই ধরনের লেখা কেন?

আমি সেই সাংবাদিকের কাছে কৃতজ্ঞ যিনি তাঁর কাগজে একটা সেলিব্রিটি কলামে আমার লেখা নিতে শুরু করেন। ওই কলামের জন্য লিখতে গিয়ে লেখার চর্চা শুরু হয়েছিল।

আগে কখনও লেখালেখি করেছেন?

কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু। মৃত্যু, বিষাদ, এসব নিয়ে কবিতা লিখতাম। ২৩টা লিমেরিক লিখে ফেলেছিলাম। একটা উপন্যাসও অর্ধেক লিখেছিলাম। ষোলো বছর বয়সি এক মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছিল। তার পর কুড়ি বছর একটা শব্দও লিখিনি। এখন সেই একই লেখা লিখছি কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিটা এখন এক মহিলার।

লোকে বলে তীব্র সেন্স অব হিউমার আপনি পেয়েছেন আপনার মা ডিম্পল কাপাডিয়ার থেকে। সত্যি?

না। (খানিকটা ভেবে) আমার এই স্বভাবের পুরো কৃতিত্বই দেব আমার দাদু-দিদাকে। আমার তো মনে হয় মা আমাকে নকল করেন। বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে এমন সব কথা বলছিলেন সেদিন যে আমি ওঁকে ঠ্যালা মেরে চুপ করাতে বাধ্য হয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের পর একটা পার্টিতে যেতে যেতে মা বলেছিলেন, ‘‘বই বেরোনো মানে এই নয় যে এখন কেবল নিজের বই নিয়ে কথা বলবে।’’ কিন্তু নিজেই আমার বই নিয়ে কথা বলা থামাচ্ছিলেন না। (জোরে হেসে ওঠেন টুইঙ্কল)।

অক্ষয়কুমার সম্প্রতি বলেছেন তিনি জীবনে একটাই বই পড়েছেন আর সেটা ‘মিসেস ফানিবোনস’...

সেটা ঠিক। আমি হলাম ওর জীবনের সলমন রুশদি। যেহেতু ও বইটই পড়ে না তাই আমার লেখা পড়ে আমাকেই জিনিয়াস লেখক ঠাউরেছে।

অক্ষয় আপনাকে এই বইয়ের অনেকটা এডিট করতে বলেন। এটা কি সত্যি?

সেটা সত্যি। আমার শেষ লেখাটা ও এডিট করতে চায়নি। বরঞ্চ ও আমাকে আর লেখাগুলো আরব সাগরের জলে ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নতুন করে লেখালেখির সময় ছিল না। আমি যেমনটা লিখেছিলাম তেমনটাই ছাপা হয়।

টুইটার, ফেসবুকে কেউ আপনার পিছনে লাগে না। কী ভাবে সকলের মন জুগিয়ে চলেন?

আমাকেও কেউ রেয়াত করত না। আমারও পেছনে লাগা হত। পেছনে লাগার মধ্যে ইন্ডাস্ট্রির রাজনৈতিক গন্ধ থাকে। ইদানীং লক্ষ করছি ওরা আমাকে ছেড়েই দিয়েছে। হয়তো আমার মধ্যে তেমন কটাক্ষ করার খোরাক কিছু পাচ্ছে না।

অনলাইনে এই গালাগালির ব্যাপারটা নিয়ে অনেক সেলিব্রিটিই ঝামেলায় পড়েছেন। ভয় লাগে নিশ্চয়ই?

না, একেবারেই না। এতে করে এই লোকগুলোর মনের বিষগুলোই বেরিয়ে আসে। আমি একদম তাদের পছন্দ করি না যারা অন্যের প্রোফাইলে গিয়ে অবাঞ্ছিত কমেন্ট করে। আমি আমার পোস্টে যে সব কমেন্ট পাই সেগুলো পড়ি। সেখান থেকেই ফিডব্যাক নিই। নজর রাখি আমি নিজে সীমা অতিক্রম করছি কি না।

নিজস্ব একটা পরিচিতি গড়ে তোলার পর বাবা রাজেশ খন্নাকে মিস করেন?

(খানিকক্ষণ চুপ) এটা একটা সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার। কোনও কথা বলতে চাই না। খুবই ব্যক্তিগত... হ্যাঁ, ওঁকে মিস করি। চিরকাল করব।

আচ্ছা মিসেস ফানিবোনসের হাসি পায় কীসে?

সারা জীবন ধরেই আমি নানা মজার কথা বলেছি। লোকে তা শুনে হেসেছে। সবাইকে আমি যে হাসাতে পারি সেটা আমার জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য। আসল কথা আমি নিজেকে হাসিখুশি রাখতে চাই বলে সব সময় হাসির কথা বলে থাকি।

আজকের মানুষ দেখনদারির ওপরেই জোর দেয়। সেখানে চেহারা না দেখে আপনার রসিকতা এবং সংবেদনশীলতা যখন লোকে মন দিয়ে দেখে তখন কেমন লাগে?

দারুণ লাগে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিটা খুব খাটো। একজন কেউ দারুণ দেখতে বা খুব বুদ্ধিমান—এই ভাবে কেন বিচার করা হবে? মানুষের মধ্যে দুটো গুণই তো থাকতে পারে।

আপনি কি প্রথম থেকেই এই রকম?

আমার বেড়ে ওঠার বয়স থেকেই আমি এই রকম। বুঝেছি যদি জনপ্রিয় হয়ে থাকার চেষ্টা করি তা হলে আমার যে রসবোধ আছে সেটা মানুষকে দেখাতে পারব না। যারা ‘অড’ তারাই ‘ইউনিক’। তারাই পারে জীবনটাকে অন্য ভাবে উপভোগ করতে।

এই যে খোলা বইয়ের মতো হয়ে যাওয়া, এতে কি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে?

আমি খোলা বই নই। যদিও কিছুটা খোলা বইয়ের মতোই, তবে পুরোটা নয়। সকলে শুধু ততটাই জানতে পারে যতটা জানাতে চাই। কেউ কি জানে আমি ধার্মিক না নাস্তিক? জানে কি আমার জীবনের বাকি দিকগুলো? বাইরের লোকেরা আমার সম্পর্কে যা জানে তা একটা ধারণা মাত্র।

কোথা থেকে এত শক্তি পান?

আমি আমার মনোবিদের কাছে যাই। (মজা করে বলেন) সত্যিই জানি না কী বলা উচিত।

গ্ল্যামার, পয়সা সব কিছুর মধ্যে মানুষ হয়েও এত বাস্তববাদী কী করে হলেন?

যা হয়েছে সবটাই আমার মায়ের জন্য। মায়ের জন্যই এতটা বাস্তববাদী হয়েছি। আমরা বোর্ডিং স্কুলে পড়তে গিয়েছিলাম। সেটাও আমাদের খুব বাস্তববাদী হতে সাহায্য করেছে। আমরা কোনও দিন সিনেমাটাকে বিশেষ নজরে দেখিনি। এটা আর পাঁচটা কাজের মতোই একটা কাজ।

লাখ লাখ ফ্যান থাকা সত্ত্বেও লাইমলাইট থেকে দূরে সরে যাওয়াটা ঠিক কেমন ছিল?

সহজ ছিল। কারণ আমি যা হতে চেয়েছি তাই হয়েছি। অভিনেত্রী ছাড়া আর সবই হতে চেয়েছি। সুযোগ এসে যাওয়ার পর আমি যা করার তাই করেছি। সিনেমাও করেছি। কিন্তু ফিল্ম আমাকে টানে না। নিজের কোনও ছবি কখনও দেখি না। এমনকী আমার মা-ও আমার ছবি দেখেননি। নাগালের মধ্যে যা পাওয়া যায় সেটা আমি পেতে ইচ্ছুক নই। আমার কাছে আনামী কেউ হয়ে ওঠাটাই অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

অনেকের চোখেই রাজেশ খন্না হলেন সত্যিকারের সুপার স্টার। কী ভাবে মনে রাখতে চান আপনার বাবাকে?

উনি আমার বাবা। বাবা কী ছিলেন, কী করতেন এই সব বাদ দিয়ে একজন মেয়ে যে ভাবে তার বাবাকে মনে রাখতে চায় আমিও সে ভাবেই মনে রাখব।

বেড়ে ওঠার বয়সে তারকা মা-বাবার সন্তান হওয়াটা কতটা চাপের ছিল?

এটা মোটেই চাপের ব্যাপার নয়। আমাদের প্রত্যেককেই জীবনে মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের বাবা-মা তারকা হলেও শিক্ষকেরা মোটেও আমাদের বিশেষ চোখে দেখেননি। সেই কারণেই আমাদের বোর্ডিংয়ে পাঠানো হয়েছিল। আমিও অন্যদের মতোই এক মা। অক্ষয় আর পাঁচ জনের মতোই এক বাবা। আমরা একটা সাধারণ, স্বাভাবিক পরিবার। লোকে আমাদের অন্যরকম ভাবতে পারে, কিন্তু আমরা আমাদের মতোই। আসল কথা স্টারডমকে সিরিয়াসলি নিলেই যত সমস্যা। এটা একটা ফাঁদ।

জীবনে সব থেকে মূল্যবান শিক্ষা কী পেয়েছেন?

জীবন মানেই শিখে চলা আর বেড়ে ওঠা। এবং হাসতে হাসতে এগিয়ে যাওয়া। জীবনের যাত্রা উপভোগ করেছি। সব মায়েদের আমি বলি বাচ্চাদের ‘পারফেক্ট’ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন না। তাদের ফাঁকগুলো, দোষত্রুটিগুলো আপন করে নিন। আমি বুঝেছি আমার দোষত্রুটি আর ফাঁকগুলোই আজকের আমাকে তৈরি করেছে। আমার অতিরিক্ত ওজন আর চাঁচাছোলা কথা বলার অভ্যেসই আমাকে ‘ইউনিক’ করে তুলেছে। তাই বারবার বলি নিজের বাচ্চার সব রকম ‘ইউনিকনেস’ আপন করে নিন সাদরে।

সুদর্শন স্বামীকে নিয়ে সংসার করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। অজস্র অনুরাগী থাকে। আপনার স্বামী যদি একটু কম ভাল দেখতে হতেন তা হলে কি ভাল হত?

কখনওই নয়। যদি সুদর্শন না হত আমি কখনই ওকে বিয়ে করতাম না।

আপনার বোনের তো বিয়ে হয়েছে কলকাতার এক পরিবারে। কলকাতা কেমন লাগে?

বোন কলকাতায় ছিল ন’ বছর। ওকে দেখতে প্রায়ই যেতাম। ও বালিগঞ্জে থাকত। কলকাতাকে ঘিরে অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি আছে আমার।

এই স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে আবার রুপোলি পর্দায় ফেরার কোনও চান্স আছে?

না, কখনও নয়। নো নেভার! নো নেভার! এই যে কথাটা বললাম একটা গানের মতো করে শুনতে পারেন।

বলিউডে খানেদের সঙ্গে কুমারদের তথাকথিত লড়াই কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

তা হলে কি আমির আমার বই উদ্বোধনে আসত?

আপনার নাম টুইঙ্কল কে রেখেছিলেন?

আমার দাদু। ঈশ্বর ওঁকে আশীর্বাদ করুন। (কপট রাগে) কিন্তু ওপরে গিয়ে যখন দেখা হবে তখন ওঁকে কিছু জরুরি কথা বলব।

এর পর কী নিয়ে লিখছেন?

এর পর আমি আর একটা বই লিখছি। এ বইটা প্রথমটার থেকে একেবারেই আলাদা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE