Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মিমিরাজ

পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে নতুন ছবি ‘কাটমুন্ডু’। তার আগে নায়িকার গোপনে গোয়া বেড়ানো। লুকিয়ে পুরী ঘোরা। আর অবশ্যই তাঁর জীবনের রাজ নিয়ে খোলামেলা মিমি চক্রবর্তী। সামনে ইন্দ্রনীল রায়।পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে নতুন ছবি ‘কাটমুন্ডু’। তার আগে নায়িকার গোপনে গোয়া বেড়ানো। লুকিয়ে পুরী ঘোরা। আর অবশ্যই তাঁর জীবনের রাজ নিয়ে খোলামেলা মিমি চক্রবর্তী। সামনে ইন্দ্রনীল রায়।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

বৃষ্টিভেজা রবিবার সকালে গেটওয়ে হোটেলে এসে দাঁড়াল টয়োটা ফরচুনার। জিনস আর পিঙ্ক টপ পরে গাড়ি থেকে নামলেন তিনি। ‘দবং’য়ের সলমন খানের যে রঙের সানগ্লাস, সেই রঙের রোদচশমাটা টেবিলে ছুড়ে, শুরু হল আড্ডা…

আপনার ইন্টারভিউ করতে আসছি এটা জানার পর থেকে যাঁরা আপনাকে চেনেন তাঁরা কিন্তু আমাকে সাবধান করে দিয়েছেন....

(হাসি) কেন, সাবধান কেন?

কারণ আপনি নাকি অসম্ভব অ্যারোগেন্ট, বদমেজাজি...

অ্যারোগেন্ট নই। তবে একটু ডানপিটে টাইপ সেটা মানছি। তা ছাড়া হিন্দিতে একটা কথা আছে না ‘মু-ফট’, সেটাও বলতে পারেন। ঢং করে আপনার সামনে এক, পিছনে আর এক বলা আমার ধাতে নেই। যা বলি মুখের ওপর বলি।

মুখের ওপর সত্যিটা বলেন তো?

একদম।

তা হলে প্রথমেই বেড়াল মারা হোক। রাজ চক্রবর্তী আপনার কে?

(প্রচণ্ড হাসি) এই পুজোতে আমার একটা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। নাম ‘কাটমুণ্ডু’। হাসি-কান্না সব মিলিয়ে সপরিবারে দেখার মতো ছবি। সেই ছবির পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।

আমি ‘কাটমুণ্ডু’র প্রোমোশন ছাড়া অন্য উত্তর খুঁজছিলাম..

(ভেবে) ফ্রেন্ড, ফিলোজফার, গাইড।

জুস অর্ডার করেছি। সঙ্গে অমলেট। খেয়েদেয়ে বাড়ি চলে যাই দু’জনে। এরকম উত্তর দিলে আর ইন্টারভিউ করে লাভ নেই।

আরে সত্যি কথাটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। রাজ খুব ভাল বন্ধু।

লোকে বলে আপনি আজকাল খুব ক্যাজুয়াল হয়ে গেছেন। অভিনয়-টভিনয় নিয়ে আর মাথা ঘামান না। কাজ চালানো একটা অভিনয় করে দেন নাকি সেটে?

আপনি জানেন একটা স্ক্রিপ্ট আমি পাঁচ বার পড়ি। পাঁচ বার। তার পর পুরো স্ক্রিপ্টটা এমন মুখস্থ হয়ে যায় যে আমার সেটে গিয়ে অযথা গম্ভীর হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তাই অন্যদের কাছে সেটা ক্যাজুয়াল লাগলেও আমি জানি আমি কী করছি।

এটার আর একটা কারণও আছে। রাজ আপনার কাছে সরকারি চাকরির মতো। যাই করি না কেন বছরে দু’টো ছবি আছেই।

টালিগঞ্জের হিরোইনদের কাছে সরকারি চাকরিবাকরি বলে কিছু হয় না। বয়ফ্রেন্ড ডিরেক্টর হলেও হয় না।

আপনার বয়ফ্রেন্ড তো ডিরেক্টর।

(হাসি) ওই দ্যাখো! ডিরেক্টর মোটেই আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। বললাম না ফ্রেন্ড-ফিলোজফার-গাইড।

মিমি, বিশ্বাস করুন আজ অবধি ফিলোজফির কোনও কথা শুনিনি রাজের মুখে।

(হাসি) আপনি ওকে ভাল করে চেনেন না বোধ হয়।

সেটা ঠিক, আপনার মতো চিনি না। একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। আপনার বাড়ি তো জলপাইগুড়ি।

হ্যাঁ জলপাইগুড়িতে বাড়ি। ওখানেই ছোটবেলা কেটেছে। ক্লাস টুয়েলভের পর কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসি। আশুতোষ কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু শুধু কলেজ আর বাড়ি আমার পোষাচ্ছিল না।

এখানে থাকতেন কোথায়? কোনও আত্মীয়ের বাড়ি?

না, পেয়িং গেস্ট থাকতাম। কলেজ থেকেই একটা সিরিয়ালের জন্য অডিশন দিই। ওরা আমাকে সিলেক্ট করে। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন হিরোইন হব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিরোইনদের মতো কথা বলা ছিল ফেভারিট পাসটাইম। তোয়ালে-গামছা বেঁধে চুল লম্বা করতাম। এতটাই পাগল ছিলাম।

তার পর?

তার পর সিরিয়ালটা শুরু হল। জলপাইগুড়িতে সেই সিরিয়ালের প্রোমো দেখে বাবা-মা শকড হয়েছিলেন। বাবা আমার সঙ্গে প্রায় এক বছর কথাই বলেননি। তার পর রানাদা আর সুদেষ্ণাদি আমাকে নিয়ে যায় বুম্বাদা আর ঋতুদা-র কাছে। ওঁরা দু’জনেই আমাকে ‘গানের ওপারে’র জন্য সিলেক্ট করেন।

আপনি নিজেই স্বীকার করলেন আপনি ডানপিটে, ‘মু-ফট’। এটা কি বড় শহর এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নানা প্রস্তাব থেকে বাঁচার জন্য ছোট শহরের মেয়ের ‘ডিফেন্স মেকানিজম’?

(ভেবে) একদমই তাই। এখানে যদি আপনি চুপচাপ থাকেন তা হলে কী কী সমস্যা হতে পারে সেটা যে কোনও ছোট শহরের মেয়ে আপনাকে বলে দেবে। স্ট্রং পার্সোনালিটি না থাকলে এখানে সারভাইভ করা খুব শক্ত। সেটা করতে করতে কখনও কখনও হয়তো অ্যারোগেন্টও লেগেছে আমায়।

নিজে ছোট শহরের বলেই কি হালিশহরের রাজ চক্রবর্তীকে আপনার ভাল লাগে?

হতে পারে। আসলে ছোট শহরে যারা বড় হয়েছে তাদের কিছু কিছু মানসিকতা একরকম হয়। চিন্তাধারার একটা মিল থাকে। রাজের সঙ্গেও যেমন কমন পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করতে ভাল লাগে।

একটু ‘কাটমুন্ডু’র কথায় ফিরি। এটা তো লুকিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ছবি।

হ্যাঁ লুকিয়ে, অফিসের বসকে না বলে বেড়াতে যাওয়ার ছবি। অনেক দিন পর এই রকম মেজাজের ছবি আসছে বাংলা সিনেমায়। একদম পুজোর মেজাজের ছবি বলতে যা বোঝায় ‘কাটমুণ্ডু’ তাই।

আপনি নিজেও তো লুকিয়ে বেড়াতে যেতে পছন্দ করেন।

হ্যাঁ করি। (হাসি)

যেমন দিন পনেরো আগে গোয়া গিয়েছিলেন। একটা ফ্লাইটে রাজ। পরের ফ্লাইটে আপনি। রাজের ফ্লাইটে অবশ্য অন্য এক নায়িকাও ছিলেন তাঁর বন্ধু এবং ছেলের সঙ্গে।

পারশিয়ালি রাইট আপনি। পুরোটা নন। হ্যাঁ আলাদা আলাদা ফ্লাইটে গিয়েছিলাম। আমার মুম্বইতে একটা অ্যাডের শ্যুট ছিল। সেটার কাজের জন্য গিয়েছিলাম। ওই শ্যুটিং শেষ করে একবেলার জন্য গোয়া যাই।

এমনিতে তো আপনি আর রাজ প্রায়ই বেড়াতে যান। পুরীতেও তো গিয়েছিলেন উল্টোরথে।

(হাসি) আপনিও তো ছিলেন। একসঙ্গে ছাব্বিশ জনের গ্রুপে গিয়েছিলাম আমরা। বুঝলেন!

বুঝলাম।

আচ্ছা ‘কাটমুণ্ডু’ নিয়ে আর প্রশ্ন করবেন না? একটা দু’টো প্রশ্ন করেই তো রাজে ফিরে যাচ্ছেন। আমাকে নিয়ে এত গসিপ কেন কে জানে!

আপনারা হিরোইনরা যখন মেক আপে বসেন সেখানে তো গসিপ করেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার বয়ফ্রেন্ড কে সেটা নিয়ে!

করি। মাঝেমধ্যে…

আপনারা গসিপ করতে পারলে আমরা কেন করব না বলুন?

সেলিব্রিটিদের একটুও একলা থাকতে দেবেন না আপনারা। এই যে গোয়া গেলাম, হোটেলের জিমে দেখলাম বিপাশা বসু আর তার বয়ফ্রেন্ড এক্সারসাইজ করছেন। আমি তো আর সেটা নিয়ে টুইট করিনি বা লিখিনি।

সেটা আপনি সাংবাদিক নন বলে।

হ্যাঁ কিন্তু মাঝেমাঝে সেলিব্রিটিদের দিকটাও আপনাদের দেখা উচিত। সেই প্রাইভেসিটা রেসপেক্ট করা উচিত।

টালিগঞ্জে আপনার সমসাময়িক হিরোইনদের সঙ্গে আপনার একটা তফাত আছে।

কী সেটা?

তাঁরা কমার্শিয়াল ছবি ছেড়ে অন্য ধারার ছবিতে আসতে চাইছেন। আর আপনি ঋতুদার সঙ্গে কাজ শুরু করলেও কমার্শিয়াল হিরোইনই থাকতে চাইছেন।

এটা শুনে খুব ভাল লাগল। আই টেক দিস অ্যাজ আ বিগ কমপ্লিমেন্ট। একটা কথা তা হলে ‘মু-ফট’ হয়ে বলেই দিই আপনাকে। এই যে যত হিরোইন আমরা রয়েছি, আমরা সবাই-ই কিন্তু কমার্শিয়াল ছবির হিরোইনই হতে চাই। কেউ যদি বলে তারা শুধু অভিনয় করবে কিন্তু সুইৎজারল্যান্ড কি টার্কিতে নাচতে তাদের অসুবিধে হচ্ছে, তা হলে তারা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছে। আমি খুব প্রাউড যে কমার্শিয়াল বাংলা ছবি করছি। রাজকেও আমি সব সময় তাই বলি।

রাজ নাকি আপনাকে সেটে খুব প্যাম্পার করেন?

আমি তো এখনও অবধি দেখিনি। সেটে আমি যা সবাই তাই। আর এটার বোধহয় বেটার উত্তর দিতে পারবে আমার সহ-অভিনেতারা। আর রাজ তো জানেনই রেগে গেলে সেটে মাইক ভাঙে। তা আমার নামে চারটে মাইক কিন্তু সেটে ভাঙা
হয়েই থাকে। তা হলে প্যাম্পারটা কোথায়? (হাসি)

‘যোদ্ধা’র শ্যুটিংয়ে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি গরমে পুরো ইউনিট দাঁড়িয়েছিল কারণ আপনার চুলের স্টাইলটা রাজের ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না।

বানানো কথা। মনে হয় না একেবারেই ঠিক। তবে হ্যাঁ, অত বড় একটা পিরিয়ড ছবি, মাথায় পাঁচ কেজির মুকুট—একটু অস্বস্তি হলে তো ডিরেক্টরকে বলব নাকি?

আচ্ছা একটা কথা বলবেন, ‘কাটমুণ্ডু’র জন্য এই ইন্টারভিউয়ের আগে আনন্দplus-এ একটা জয়েন্ট ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা ছিল আপনার আর রাজের। লাস্ট মিনিটে সেটা ক্যানসেল করলেন কেন?

আপনি তো জানেন আমি ক্যানসেল করিনি। আমি তো ইন্টারভিউটা দিতে চেয়েছিলাম।

ইন্টারভিউ ক্যানসেলের সময় কিছু কথা শুনছিলাম। সে সময় নাকি আপনার আর রাজের ঝামেলা চলছিল?

তাই! ঝামেলার কারণ কী?

কারণ হল ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’ র হিরোইন কৌশানী। তাঁর আর রাজের বন্ধুত্ব নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে একটু কথা চালাচালি শুরু হয়েছিল যেটা আপনার পছন্দ হয়নি।

মাই গড। ইন্ডাস্ট্রিতে এমনিই ভাল স্ক্রিপ্ট রাইটার কম। এগুলো যারা লিখছে তারা এই সব গল্প না বানিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখতে পারে তো!

কী বলছেন? আপনার আর রাজের ঝামেলা, এটা নিয়ে নবান্নতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কথা বলছেন। রাজকে বলেছেন, ‘‘এ সব কী শুনছি রাজ?’’

দিদি বলেছেন? ধুর।

সেই মিটিংয়ে প্রসেনজিৎ ছিলেন, সৃজিত ছিলেন। তাঁদের ফোন করব আপনার সামনে?

এই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। (হাসি) কোনও ঝগড়া নেই । একসঙ্গে থাকিও না। আমি থাকি মা-বাবার সঙ্গে। ঝামেলার সব গল্প মিথ্যে।

অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। আনন্দplus য়ে মাঝখানে আমরা একটা স্টোরি করেছিলাম, ‘নায়িকারা সব গেল কোথায়’। তাতে কিন্তু আপনি এক নম্বর নায়িকা হিসেবে সামনে এসেছিলেন।

হ্যাঁ, পড়েছিলাম। আমি আপনাদের কাছে, ইন্ডাস্ট্রির কাছে, আমার প্রোডিউসর আর ডিরেক্টরদের কাছে কৃতজ্ঞ। মন দিয়ে শুধু কাজ করে যেতে চাই। এখন ‘কাটমুণ্ডু’র প্রোমোশন নিয়ে খুব ব্যস্ত। চাই ছবিটা সুপারহিট হোক। এমনি বলছি না, ছবিটাতে মানুষের ভাল লাগার সব উপাদান আছে। ছবিটা দেখতে দেখতে লোকে প্রচণ্ড হাসবে এ ব্যাপারে আমি শিওর। প্রোডিউসার যেন ছবি থেকে নিজের ইনভেস্টমেন্ট ফেরত পান, সেটাই প্রধান লক্ষ্য।

এ সব তো ট্রেডের ভাষা বলছেন আপনি। বুঝতেই পারছি রাজের প্রভাব কতটা!

(হাসি) হায় ভগবান!

শেষ হয়ে এল ইন্টারভিউ। আর লুকোবেন না । ফাইনালি বলুন না রাজ কে?

যখন সত্যি রাজের সঙ্গে কিছু হবে তখন প্রমিস করছি আপনাকে আর আপনাদের বিভাগীয় সম্পাদককে ফোন করে জানাব। আমার কথার খেলাপ হয় না।

তাই তো?

হানড্রেড পারসেন্ট।

কিন্তু সত্যি কথা বলতে এত প্রবলেম কোথায়?

(হেসে) কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি যে সত্যি বলতে হবে। এত অনেস্টি দেখাতে পারছি না বস। দু’জনেরই ওয়াটার মেলন জুস শেষ। আর একটা করে জুস বলবেন প্লিজ...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE