Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিরাট ফিটনেস অ্যাডিকশন

লিখছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়।ক্রিকেটার মাইক গ্যাটিঙের অটোবায়োগ্রাফির নাম— লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট। এখানে প্রসঙ্গটা ভিন্ন। এক দিকে রান, আর অন্য দিকে ফিটনেস—দুটোতেই একেবারে সামনে থেকে লিড করছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহালি।

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ক্রিকেটার মাইক গ্যাটিঙের অটোবায়োগ্রাফির নাম— লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট। এখানে প্রসঙ্গটা ভিন্ন। এক দিকে রান, আর অন্য দিকে ফিটনেস—দুটোতেই একেবারে সামনে থেকে লিড করছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহালি।

ট্রেনিঙের নতুন হাওয়া

বিরাটের হাতে এখন নতুন ব্রিগেড। ওদের অ্যাথলেটিক মুভমেন্টের রিংটোনটা বেছেছে বিরাট নিজে। আর অ্যাথলেট গড়ার সফ্টওয়্যারটা বানিয়েছেন ভারতীয় দলের ফিটনেস কোচ শংকর বসু। এক সময় আমি নিজে ভারতীয় দলের সহকারী ট্রেনারের কাজ করেছি। চাক্ষুষ করেছি, দৌড়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ তারকা ক্রিকেটার অনেক নমনীয়। ভারী ওজন তোলাতে কোথাও যেন আগাম ধারণাতেই আটকে। এতে নাকি আড়ষ্টতা আসে। শিল্পের ছোঁয়া কমে। টাইগার উডের গল্ফে মাখনে ছুরি চালানোর মতো আলতো ছোঁয়া লাগে। টাইগার নিজে কিন্তু ভারী ওজন তোলে। বর্তমান ট্রেনার শংকর বসু বিরাটদের বোঝান যে, ক্রিকেট বরাবরই পাওয়ার স্পোর্ট। টি২০ আসার পর ক্রিকেট আরও বেশি পাওয়ার-নির্ভর। সুতরাং সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে ওজন নিয়ে পাওয়ার ট্রেনিং করতেই হবে। বিরাট ব্যাপারটায় শুধু শিলমোহর দিল না, নিজেই এর বিজ্ঞাপন হয়ে উঠল।

বিরাট বদল

অতীতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অনূর্ধ্ব-১৭ বা অনূর্ধ্ব-১৯-এর শিবিরে বিরাটকে সামনে থেকে দেখেছি। তখন ফিটনেসকে বিরাট অত গুরুত্ব দিত না। সহজাত গতি ছিল দৌড়ে। দৃশ্যনীয় ঘাটতি ছিল স্ট্রোকের পাওয়ারে। আসলে ভারতীয় দলের অনেকের মতো বিরাটও বিশ্বাস করত, ক্রিকেটীয় দক্ষতা স্কোরবোর্ডে শেষ কথা বলবে। ফিটনেস? পরে ভাবা যাবে।

২০১২ সাল নাগাদ শংকর বসু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরুর কোচের পদে আসেন। এই দলের হয়ে বিরাট আইপিএল খেলে। এবার বদলাতে শুরু করে বিরাটের ফিটনেস মন্ত্রটা। বসু তুলে ধরেন ডেভ ওয়ার্নার বা এবি ডেভিলিয়ার্সের স্ট্রোকে যে এতটা পাওয়ার তার রহস্য। বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে বোঝান অলিম্পিক লিফটিং আর বেছে খাবার খাওয়া—এই দুয়ের যুগলবন্দি ফিটনেসের মাত্রাটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। ঠিক ওই সময় থেকে বিরাটের ফিটনেসের ভিত বদলে যায়।

ফিটনেস অ্যাডিকশন

২০১৫ সালে শংকর বসু ভারতীয় দলের ট্রেনার হওয়ার পর গাঁথনির ওপর দু’তিনটে ছাদ ঝটপট দাঁড়িয়ে গেল। এক সময় বিরাট নিজে আক্ষেপ করত ওর স্ট্রোকে পাওয়ারের অভাবের জন্য। বাউন্ডারি পার করতে কষ্ট হয়। নিজেকে পুরো বদলে দিয়ে বিশ্বের অন্যতম ফিট ক্রিকেটার হয়ে ওঠার জেদ চেপে বসে। ফিটনেস ওর কাছে হয়ে উঠল অ্যাডিকশন। শুধু নিজে নয়, অ্যাডিকশনটা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিল।

অ্যাডিকশনের ডোজ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন ‘অফ সিজন’ শব্দটা ডায়নোসরের মতো লুপ্ত। সুতরাং ফিটনেস ট্রেনিং হয় ম্যাচের মধ্যে, অথবা দুটো খেলা বা দুটো সিরিজের মধ্যে ফাঁকা সময়ে। ফাঁকা সময়ে বসু আলাদা করে রুটিন বানান। অলিম্পিক লিফটিং থাকে তিন থেকে চার দিন। অলিম্পিক লিফটিং বলতে বোঝায় হয় বার্বেল, মানে লোহার ভারী রড অথবা ভারী ডাম্বেল নিয়ে বিশেষ কিছু ব্যায়াম। এক থেকে দুই সিজন বরাদ্দ থাকে রানিংয়ের জন্য।

অলিম্পিক লিফটিং জিনিসটা কী

এটা কোনও রকেট সায়েন্স নয়। কুড়ি কেজির লোহার রড মানে বার্বলের দুই দিকে লাগানো হয় ২০-৩০ কেজি থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত ওজনের দুটো চাকা। এক কথায় সবচেয়ে ভারী ওজন নিয়ে মাত্র একবার স্ন্যাচ বা ক্লিন অ্যান্ড জার্ক করাকে বলে অলিম্পিক লিফটিং। তবে অলিম্পিক লিফটের অন্য ব্যায়ামগুলো বিরাট অনায়াসে করতে পারে।

পাওয়ার ক্লিন: বার্বেল মাটিতে থাকবে। মাটি থেকে তুলেই কাঁধের উচ্চতায় নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে স্কোয়াটের পজিশনে আসতে হবে। মেরুদণ্ড টানটান রাখা, বার্বেল শরীরের খুব কাছে রাখা—এ সব খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে বার্বেল গতিতে তুলতে হবে। পশ্চার ও লিফ্টের কায়দা ঠিকঠাক না হলে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। লিফটিঙের কায়দাটা দারুণ রপ্ত করে ফেলেছে বিরাট।

হ্যাং ক্লিন: শুরুর সময় শুধু বার্বেলটা হাঁটুর কাছে থাকবে। বাকি পদ্ধতি আগের ব্যায়ামের মতো।

ক্লিন অ্যান্ড জার্ক : এখানে শুরুটা হ্যাং ক্লিনের মতো। হ্যাং ক্লিনের অ্যাকশন শেষ হবার পর সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। দু’এক সেকেন্ডের অপেক্ষা। তারপর বার্বেল দ্রুত মাথার ওপর তুলতে হবে।

বার্বেল স্ন্যাচ: হ্যাং ক্লিনের কায়দায় শুরুতে বার্বেল থাকবে হাঁটুর কাছে। এবার দ্রুত বার্বেলটা মাথার ওপর তুলতে হবে। উপরে ওঠার সময় ৪৫ ডিগ্রি মতো স্কোয়াট করতে হবে। সবগুলো ব্যায়াম ৫-৬টা সেট হিসেবে ৪-৫ বার করতে হবে।

পায়ের শক্তি : বক্স জাম্প, সপ্লিট স্কোয়াট জাম্প, বার্বেল ডেড লিফ্ট, গুড মর্নিং এক্সারসাইজ। এক্সারসাইজগুলো বিরাটের কাছে জলভাত।

ভাগ বিরাট ভাগ: মূলত ৪০ মিটার থেকে ১০০ মিটার ইন্টারভ্যাল স্প্রিন্টে নজর দেওয়া হয়। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে স্প্রিন্ট। জগিং বা হেঁটে ফিরে আসা। এ ভাবে মোট ১০ বার। ২-৩টি সেট।

স্পিড এজিলিটি রান: ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর-এর ফিল্ডিং ড্রিলে নানান অ্যাঙ্গল থেকে জোরে ছুটে আসতে হয়। এজিলিটি ট্রেনিংটা ওখানেই হয়ে যায়।

লো কার্ব হাই প্রোটিন ডায়েট : মিডিয়াতে প্রচার চালানো হয় যে বিরাট আছে নো-কার্ব ডায়েটে। একদম ভুল। কথাটা হবে লো-কার্ব। লো-কার্ব ডায়েটে চলে ফলের মধ্যে পাকা পেঁপে, আপেল, ফুটি, আটার রুটি বা ব্রাউন রাইস অল্প পরিমাণে। প্রোটিনের মধ্যে চিকেন ব্রেস্ট বা গ্রিল-করা মাছ, দুপুরে বা রাত্রে। ব্রেকফাস্টে ডিমের সাদা অংশ ধরলে সারাদিনে ১২৫ গ্রাম মতো প্রোটিন হয়। থাকে স্যালাড আর সেদ্ধ সব্জি, বাদাম, ওয়ালনাট বা স্প্রাউট। বারে বারে খেলে বিপাকের হার বাড়ে। মনের অ্যালার্টনেস বজায় রাখে ব্ল্যাক কফি দিনে তিনবার মতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE