(বাঁ দিক থেকে) মিশকা, তনুশ্রী, পাওলি, প্রিয়ঙ্কা ছবি: কৌশিক সরকার
সুচিত্রা-সুপ্রিয়া-সাবিত্রী-গৌরী দেবী- নামগুলো শুনেই আঁতকে উঠলেন অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের চার নারী। পাওলি-তনুশ্রী-প্রিয়ঙ্কা-মিশকা। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই জানিয়ে দিলেন, তাঁরা নাকি কেউ উত্তমের নায়িকা নন। ‘মহানায়ক’-য়ের সব চরিত্র কাল্পনিক। হাবেভাবে বোঝানো হল উত্তম-সুচিত্রা নিয়ে প্রশ্ন করা চলবে না।
তা হলে আমার সামনে এখন যাঁরা আছেন তাঁরা কি অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমিকা?
পাওলি: (চিকেন স্যালাড খেতে খেতে) অরুণ আর সুচরিতার সম্পর্কটা বেশ জটিল। এই ধারাবাহিকে সেটাই দেখানো হবে। নির্ভরতা, ভালবাসা, মুগ্ধতা, ভাল-মন্দ শেয়ার করা, সব মিলিয়ে দু’জনের সম্পর্ক। শুধু কি প্রেম? তা বোধহয় নয়।
‘মহানায়ক’-য়ের হোর্ডিংয়ে মুড়ে গেছে কলকাতা। আর তা দেখে সকলেই বলছেন পাওলিকে সুচিত্রা সেনের মতোই লাগছে।
পাওলি: একটা কথা বলি, এটা কিন্তু উত্তমকুমারের বায়োপিক নয়। আমি জানি না সবাই কেন এই ভুল করছেন।
ছবি: কৌশিক সরকার
কী বলছেন? আপনি আর প্রসেনজিৎ লিপ মেলাচ্ছেন ‘তুমি যে আমার’ গানে। তার পরেও বলবেন এটা উত্তমকুমারের জীবন নিয়ে ধারাবাহিক নয়?
তনুশ্রী: আমি একটু বলি? আমরা কেউই উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, গৌরী দেবী হতে পারব না। ইমপসিবল! অনেক সিনেম্যাটিক লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে এই ধারাবাহিকে। ফলে কাজটাও হয়েছে অন্য রকম । বলতে পারেন এটা একটা ফিকশনাল বায়োপিক।
প্রিয়ঙ্কা: আমরা প্রত্যেকেই ষাট-সত্তর দশকের ইন্ডাস্ট্রির কথা, এক নায়কের জীবনের কথা আর তার চারপাশ নিয়ে কাজ করছি। উত্তমকুমারের জীবন খুঁজে পাওয়া যাবে এই অ্যাশিওরেন্স কিন্তু কোথাও দেওয়া হচ্ছে না।
মিশকা: নায়কদের নিয়ে আগ্রহ তো বরাবরের। শাহরুখ কি গৌরী খান ছাড়া আর কারওর প্রেমে পড়েছেন? এই গসিপ তো আজকেরও। আর ষাট-সত্তর দশকের নায়ক বললে তো উত্তমকুমার আসবেনই। আর কোন সুপারস্টারই বা আছেন! তার জীবনের আদলই ধরা থাকবে এই ধারাবাহিকে। সেটাই স্বাভাবিক।
সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় জীবিত। ওঁদের চরিত্রে অভিনয় করার সময় কখনও মনে হয়নি তাঁদের পরামর্শ নিলে ভাল হত?
তনুশ্রী: (খুব উত্তেজিত)। আমি কিন্তু সুপ্রিয়া নই। প্রিয়া।
ধারাবাহিকে অরুণ চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য পাগল! এই প্রিয়া যে সুপ্রিয়া ছাড়া অন্য কেউ নন, সেটা বুঝতে কারও বাকি নেই।
তনুশ্রী চুপ!
মিশকা: ( চোখ বড় করে) আমি কিন্তু উমা।
প্রিয়ঙ্কা: আমিও গায়ত্রী, সাবিত্রী নই।
আরে আপনারা এত সচেতন হয়ে যাচ্ছেন কেন? তা হলে তো কথাই বলা যাবে না…
তনুশ্রী: আমি বলছি, কমলদা (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) যখন এই চরিত্রটার কথা বলেন তখন আমি সুপ্রিয়া দেবীর কাছে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল এটা ওঁর হুবহু চরিত্রায়ণ নয়। এটা একটা পিরিয়ড অ্যাক্টিং। ওই মানুষটা নয়। সময়টাই আসল। আমার মনে হয় আমাদের কারওর ওপর এই প্রেশারটা নেই যে, ওরে বাবা আমাকে সাবিত্রী বা সুপ্রিয়ার মতো হতে হবে। আমি চেষ্টা করছি প্রিয়া হয়ে ওঠার এবং আজকের দর্শকের কাছে প্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করার।
পাওলি কিন্তু পুরোদস্তুর সুচিত্রা সেন...
পাওলি: এই রে! এটা একটা কমপ্লিমেন্ট! নাকি চাপ? তবে আজ নয়, অনেক আগে থেকে বহু মানুষ বলছে আমার সঙ্গে নাকি সুচিত্রা সেনের মিল আছে।
মিশকা:বিশেষ করে হাসিটা…
পাওলি: (অবাক চোখে) বাব্বা, তুই এত খুঁটিয়ে দেখেছিস!
মিশকা:( মুখ বেঁকিয়ে) হ্যাঁ, আমাকে তো খুঁটিয়ে দেখতেই হবে। সব্বাইকে খুঁটিয়ে দেখেছি। সারাক্ষণ তো আমার অরুণের পাশে তুমি…
প্রিয়ঙ্কা:ও কিন্তু পুরোপুরি উমা হয়ে গেছে, আর মিশকা নেই! কী হবে!
মিশকা:( প্রিয়ঙ্কার দিকে তাকিয়ে) তবে গায়ত্রী খুব ভাল। অরুণের জীবনে যখন প্রিয়া আসছে ওই সময় ও উমার পাশে থেকে ওকে হেল্প করেছে।
আচ্ছা বলুন তো প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার লাভমেকিং সিন আছে?
পাওলি: ঘনিষ্ঠতা আছে। আমি আর বুম্বাদা এখানে কতকগুলো ইমোশনাল সিন করেছি। অসাধারণ হয়েছে সেগুলো। আগে যে ‘মনের মানুষ’ করেছি বা ‘ক্ষত’ করলাম তাতে এরকম দৃশ্য ছিল না।
ছবি: কৌশিক সরকার
‘মহানায়ক’ করতে গিয়ে প্রসেনজিতের প্রেমে পড়েননি?
পাওলি: এমা! কী যে বলেন!
মিশকা:আমি রোজ প্রেমে পড়ি! যত বার একসঙ্গে অভিনয় করি তত বার।
তনুশ্রী: বুম্বাদা এমনই। প্রতি মুহূর্তে প্রেমে পড়ছি। আমার চরিত্রটাই প্রেম করে, ঝগড়া করে, ভীষণ ইমোশনাল! সেই দৃশ্য করতে গেলে ইনভলভমেন্ট তো থাকবেই।
প্রিয়ঙ্কা: আমি ওরকম ভাবতেই পারব না! আমাকে খুব স্নেহ করে বুম্বাদা আর আমিও ওকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। তবে সত্যি যদি লাভমেকিং সিনের কথা বলেন, সেটা কিন্তু মিশকাই করেছে।
মিশকা:(মুচকি হেসে) আমি বুম্বাদাকে চুমু খেয়েছি। খুব টেনশন ছিল আমার! প্রথম সিন। সেখানেই চুমু। তাও আবার বুম্বাদা! তবে অনেক সহজ করে দিয়েছিল বুম্বাদা। দারুণ হয়েছে সিন-টা। প্লিজ দেখবেন। বুম্বাদা সেটে থাকলে আমাদের সব প্রবলেম সলভড হয়ে যায়। উনি পাক্কা ‘রাজা বাবু’।
তনুশ্রী: গরমে শ্যুট হচ্ছে। সকলের হেভি মেক আপ। কান লাল হয়ে যাচ্ছে। আমার খেয়াল নেই। বুম্বাদা বলল, ‘‘ গরমে ও শ্যুট করতে পারছে না।’’ আমাদের জন্য কিন্তু উত্তমকুমার নয়, অরুণ চট্টোপাধ্যায়ই ইম্পর্ট্যান্ট।
উত্তম-সুচিত্রা জুটি আজও বাঙালির রোম্যান্টিক আইডল। মহানায়ক দেখার পরে লোকে কি প্রসেনজিৎ-পাওলিকে সেরকম জুটি ভাববে?
পাওলি: ভাবলে খুব খুশি হব। ইনফ্যাক্ট এখন দেখছি অনেক ইভেন্টেই আমাকে আর বুম্বাদাকে একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে। তবে সুচরিতার চরিত্রটা কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং। পাবনার সাধারণ মেয়ে। বরের ইচ্ছায় স্টার হল। তার পরে সেই বর-ই সেটা মেনে নিতে পারল না। যা হয়ে থাকে। ইগো ক্ল্যাশ! কাজ করতে করতে অরুণের সঙ্গে সুচরিতার আলাপ।
এই সেরা রোম্যান্টিক জুটি ক্লিক করার কারণ কী?
পাওলি: আমার মনে হয় সেখানে নিশ্চয় একটা কেমিস্ট্রি ছিল। কিন্তু সেটা সবসময় রং অ্যাঙ্গেলে ভাবতে হবে কেন বলুন তো? সুচরিতা হাজব্যান্ডের প্রেম-ভালবাসা
পায়নি। সংসার পায়নি। ওর মনে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল। আর সেখান থেকে অরুণের সঙ্গে বন্ডিং। বন্ধুত্ব!
শোনা যায় তখন নাকি উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের টাইটেল কার্ডে নাম যাওয়া থেকে পারিশ্রমিক নিয়ে একটা ঠান্ডা লড়াইও ছিল। এটা কি থাকছে?
পাওলি: উত্তম-সুচিত্রা হিসেবে জানি না কিছু। তবে টাইটেল কার্ডে কার নাম আগে থাকবে? কার পারিশ্রমিক বেশি? এগুলো ‘মহানায়ক’-য়ে আছে। দু’জন স্টার একসঙ্গে কাজ করলে এগুলো আসবেই। লক্ষ করে দেখবেন অন-স্ক্রিন দু’জনের একটা টাসল ছিল। এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায়। পর্দায় সেই কারণে দু’জনকে এত ইন্টারেস্টিং লাগত। রিয়েল লাইফে সুচরিতা ভাবত অরুণ এমন এক জন বন্ধু যাকে ভরসা করা যায়। নিজে থেকে যে সুচরিতার মন পড়তে পারে। আর সেটা না পড়তে পারলেই ওর অভিমান হত।
কিন্তু উত্তমের জীবনে যখন সুপ্রিয়া এলেন?
পাওলি: সরি। অরুণের জীবনে যখন প্রিয়া আসছে তখন সুচরিতা কিন্তু মেনে নিতে পারেনি। অরুণের মতো এক জন সুপারস্টার অন্য এক মহিলাকে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য নিজের ক্যারিয়র স্যাক্রিফাইস করছে....এটা সুচরিতা মানতে পারেনি। আরও একটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট আছে, যেটা অনেকে জানেন না। সুচরিতা কখনও চায়নি, অরুণ আর উমার সংসার ভেঙে যাক।
তা হলে অরুণের প্রেমটা কার সঙ্গে ছিল?
পাওলি: খুব গণ্ডগোলের প্রশ্ন! এক মাত্র অরুণ বলতে পারবে। ( বুম্বাদাকে ফোন কর)
তনুশ্রী: সময়ে সময়ে অরুণের প্রেম বদলেছে।
পাওলি: আমার মনে হয় অরুণ সারা জীবন কিছু একটা খুঁজত… হয়তো বা আশ্রয়। কেউ ওর কাছে হেল্প চাইলে পরে ও তার প্রেমেও পড়ে যেত।
প্রিয়ঙ্কা:সকাল থেকে রাত সারাক্ষণ আমরা ইউনিটেই থাকি। ওখানেই বন্ধুত্ব। সম্পর্ক। এক জন মানুষের সঙ্গে প্রেমের দৃশ্য করছি, প্রেম নেই হয়তো। কিন্তু দেখাতে হচ্ছে। এই প্রেম-প্রেম ভাবটা কিন্তু আমাদেরও সাইকোলজিকালি এফেক্ট করে। (সকলের দিকে তাকিয়ে) করে তো!
পাওলি: এই! সব সময় করে না কিন্তু। করলে তো কেস!
প্রিয়ঙ্কা:আরে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কেমিস্ট্রি কাজ করে যায়। যেমন সুচরিতা-অরুণের হয়েছিল।
পাওলি:সুচরিতা-অরুণ দু’জনেই বুদ্ধিমান। চেয়েছিল ওদের জুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে। তাই সম্পর্কটাকে জিইয়ে রেখেছিল।
সাবিত্রী-উত্তম একসঙ্গে সিনেমা এবং নাটক করেছেন। দু’জনে একসঙ্গে স্ট্রাগলও দেখেছেন। ওঁদের প্রেম কি প্লেটনিক ছিল?
প্রিয়ঙ্কা:আমি সাবিত্রী নয়, গায়ত্রীর কথা বলব। এই ধারাবাহিকে অরুণ, যাবতীয় সমস্যা গায়ত্রীর সঙ্গে শেয়ার করে। উমার যখন সমস্যা হয়েছে সেটা গায়ত্রী মিটিয়েছে। বন্ধুত্ব আর প্লেটনিক প্রেম দু’টো একসঙ্গে কাজ করেছে।
তনুশ্রী: ওরে বাবা, এটা তো মহাজাগতিক প্রেম।
আচ্ছা, গৌরীদেবী উত্তমকুমারের ছোটবেলার প্রেম। এই ধারাবাহিকেও কি তাই?
মিশকা: গানের স্কুলে অরুণ আর উমার প্রেম হয়। তার পর বিয়ে। অরুণের জন্য উমা সকলের সঙ্গে লড়াই করে। অসাধারণ স্ত্রী। অনবদ্য প্রেমিকা। খুব লাউড একটা চরিত্র। অরুণের ওপর হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়। আবার প্রচণ্ড ভালবাসে। অরুণকে নিয়েই যত ইনসিকিওরিটি।
পাওলি: সুচরিতা উমার সঙ্গে কিন্তু সই পাতিয়েছিল।
মিশকা:হ্যাঁ, হ্যাঁ। মন পুড়িয়ে সই।
মহানায়কের সব নারীর পারষ্পরিক সম্পর্ক তা হলে খুব ভাল?
মিশকা:এই ধারাবাহিকে প্রতিটি চরিত্র খুব সেনসেটিভ। কেউ পুরো খারাপ বা পুরো ভাল নয়। দর্শকের এটাই ভাল লাগবে।
তনুশ্রী: দুনিয়ার লোকের কাছে প্রিয়া খারাপ। সে নাকি কারওর ঘর ভেঙেছে। কিন্তু ‘মহানায়ক’-য়ে প্রিয়াকে দেখলে মানুষ বুঝতে পারবেন সেটা শেষ কথা নয়।
উত্তমকুমারের পরিবার থেকে সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে আপত্তি উঠেছিল না!
তনুশ্রী: আমি জানি না। তবে এখানে উমা, প্রিয়াকে গ্রহণ করে নিয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে একটা কথা ঠিক, অরুণকুমারের পাশে অন্য কোনও মহিলাকে পছন্দ করত না প্রিয়া।
আপনি কোনও দিন প্রিয়া হতে পারবেন? বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়তে পারবেন?
তনুশ্রী:এখনও সেটা বলার সময় আসেনি।
প্রিয়ঙ্কা:আমাদের বেরোতে হবে।
পাওলি: কোথায় বেরোতে হবে?
প্রিয়ঙ্কা:‘মহানায়ক’য়ে যেতে হবে।
পাওলি: বসে পড়। এখানেই ‘আসল মহানায়ক’ হচ্ছে…
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy