Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অমিতাভ...টোনি... দিল্লি...

আজ কলকাতার হোটেলে বিগ বি-কে চূড়ান্ত চিত্রনাট্য শোনাতে যাচ্ছেন প্রযোজক সুজিত সরকার ও পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। তার আগে আনন্দplus-কে জানালেন বচ্চনকে নিয়ে তাঁদের নতুন ছবির সব খবর। শুনলেন ইন্দ্রনীল রায়বাঙালি আর কিছুতেই ছাড়তে পারছে না ‘জামাইবাবু’-কে। এক বাঙালি পরিচালক-প্রযোজকের কাজ শেষ হতে না হতেই তিনি চলে যাচ্ছেন অন্য এক বাঙালি প্রযোজক-পরিচালকের সংসারে। বুঝতেই পারছেন, কথা হচ্ছে অমিতাভ বচ্চনের। জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ অবধি তিনি পরিচালক ঋভু দাশগুপ্ত ও প্রযোজক সুজয় ঘোষের সঙ্গে ‘তিন’ ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকবেন কলকাতায়।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

বাঙালি আর কিছুতেই ছাড়তে পারছে না ‘জামাইবাবু’-কে।

এক বাঙালি পরিচালক-প্রযোজকের কাজ শেষ হতে না হতেই তিনি চলে যাচ্ছেন অন্য এক বাঙালি প্রযোজক-পরিচালকের সংসারে।

বুঝতেই পারছেন, কথা হচ্ছে অমিতাভ বচ্চনের।

জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ অবধি তিনি পরিচালক ঋভু দাশগুপ্ত ও প্রযোজক সুজয় ঘোষের সঙ্গে ‘তিন’ ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকবেন কলকাতায়। আর তার ঠিক আট দিনের মাথায় আবার পৌঁছে যাবেন রাজধানী দিল্লিতে। সেখানে শুরু হতে চলেছে তাঁর পরের ছবি। যার পরিচালকও বাঙালি। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, যাঁকে ভালবেসে সবাই ‘টোনি’ ডাকে। সেই ছবির প্রযোজকও আর এক বঙ্গসন্তান, ‘পিকু’র পরিচালক সুজিত সরকার।

এত দিন শুধু এটাই খবর ছিল যে টোনির পরিচালিত ছবিতে কাজ করবেন অমিতাভ বচ্চন। ছবি সম্বন্ধে আর কোনও তথ্য জানানো হয়নি ছবির পরিচালক বা প্রযোজকের তরফ থেকে। এই প্রথম আনন্দplus-এর সামনে মুখ খুললেন তাঁরা।

মঙ্গলবার সকালে যখন টোনির সাউথ সিটির ফ্ল্যাটে পৌঁছনো গেল, তখন তিনি নতুন ছবির শ্যুটিংয়ের আগে দর্জিকে প্যান্টের মাপ দিচ্ছেন। ‘‘সুনো, থোড়া পকেট সাইড মে রাখনা। স্টাইলিশ হোনা চাহিয়ে প্যান্ট,’’ দর্জিকে বলে তিনি বসলেন কফি নিয়ে।

তাপ্সি পান্নু ও কীর্তি কুলহারি

‘‘হ্যাঁ, ছবির কাস্টিং মোটামুটি কমপ্লিট। ফেব্রুয়ারি মাসের ৯-১০ তারিখ থেকে শ্যুটিং। বেশির ভাগ শ্যুটিংটাই হবে দিল্লিতে। এ বার গিয়ে সব রেকি করে এলাম। সুরজ কুণ্ড, সাউথ দিল্লির বিভিন্ন জায়গা, ওল্ড দিল্লি, আশেপাশের হাইওয়ে — সব জায়গায় শ্যুটিং করব আমরা প্রায় ৬৫ দিন ধরে,’’ বলেন টোনি।

কিন্তু ছবির টাইটেল কি ঠিক হয়েছে?

‘‘হ্যাঁ, আমরা একটা ওয়ার্কিং টাইটেল ঠিক করেছি। ‘ইভ’। টাইটেলটা চেঞ্জও হতে পারে,’’ জানালেন পরিচালক।

কথায় কথায় যা জানা গেল, এই ছবিটা মোটেই নির্ভয়া রেপ কেসের গল্প নয়। যদিও ছবির পরিচালক ও প্রযোজক দু’জনেই বললেন ছবিতে অবশ্যই একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা থাকবে।

এটাও জানা গেল, এই ছবিতে নায়িকা হিসেবে থাকছেন তিনজন। তাপ্সি পান্নু, কীর্তি কুলহারি এবং খুব সম্ভত মণিপুরের মেয়ে অ্যান্ড্রিয়া। যদিও শেষ জনের সঙ্গে এখনও পাকা চুক্তি হয়নি। এ ছাড়াও ‘ইভ’ ছবিতে পীযূষ মিশ্র ও বিনোদ নাগপালকেও দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।

কথায় কথায় জানা গেল ‘ইভ’ ছবিটার গল্প অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর নিজের। ‘‘এই গল্পটা আমি প্লেনে বসে শুনিয়েছিলাম সুজিতকে। সেই সময় আমরা সান ফ্রান্সিসকো যাচ্ছিলাম ‘অপরাজিতা তুমি’র শ্যুটিং করতে, যে ছবিটার প্রযোজকও ছিল সুজিত। আজকে ‘ইভ’ ছবির স্ক্রিপ্টটা লিখেছেন রীতেশ শাহ যিনি ‘কহানি’র ডায়লগ লিখেছিলেন। এ ছাড়াও রীতেশ আরও অনেক বড় বড় ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। আনন্দplus-কে এটাও জানিয়ে রাখি, এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চন রয়েছেন এক উকিলের চরিত্রে, যার নাম দীপক সেহগল। এর বেশি কিছু আর বলা সম্ভব নয়,’’ ব্রেকফাস্টে সানি সাইড আপ খেতে খেতে বলেন অনিরুদ্ধ।

এতটাই উত্তেজিত টোনি ছবি নিয়ে যে, এক্সারসাইজও শুরু করেছেন ছবির শ্যুটিংয়ের আগে। ‘‘তিন কিলোমিটার করে হাঁটছি রেগুলারলি। আর ডিম ছাড়া তো কোনও নন-ভেজ প্রায় খাচ্ছিই না। আমি এখন ৮০ পারসেন্ট ভেজিটেরিয়ান। আর শুনুন, আমি টালিগঞ্জের পশ্চিম পুঁটিয়ারির ছেলে, জীবনে কোনও দিন ভাবিনি অমিতাভ বচ্চনকে ডিরেক্ট করতে পারব। আমি আর আমার বন্ধুরা ডায়লগ মুখস্থ করতাম ওঁর ছবির। ‘শরাবি’র পর পর দু’টো শো দেখেছিলাম বসুশ্রীতে, ম্যাটিনি আর ইভনিং। জীবন যখন এই সুযোগটা আমাকে দিয়েছে, আই ওয়ান্ট টু ডু ফুল জাস্টিস,’’ নিজের ফ্ল্যাটে যামিনী রায় এবং বিকাশ ভট্টাচার্যের পেন্টিংয়ের সামনে বসে বলেন টোনি।

মেঘলা সকালে সোফায় নিজেকে এলিয়ে দিয়ে তিনি এটাও জানান, গত পনেরো দিন, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তিনি অমিতাভ বচ্চনের ছবি নিয়ম করে দেখেছেন।

‘‘রোজ দেখা চলছে। ‘জঞ্জির’, ‘আনন্দ’, ‘দিওয়ার’, ‘ত্রিশূল’, ‘কালা পাত্থর’, ‘লাওয়ারিশ’, ‘সিলসিলা’, ‘ম্যয় আজাদ হু’ থেকে ‘পিকু’ — কিছুই বাদ দিচ্ছি না,’’ বলেন ‘অনুরণন’ ও ‘অন্তহীন’‌য়ের পরিচালক। এর আগে পরিচালক সুজিত সরকার গত বছরে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’‌য়ের প্রযোজনা করেছেন। তিনি আবার প্রযোজনায়।

‘ইভ’ ছবি নিয়ে ছবির প্রযোজক সুজিত সরকারের কী বক্তব্য?

‘‘প্রথমেই বলি এই ছবিতে আমি শুধু প্রোডিউসর হিসেবে থাকছি না, সে অর্থে বলতে গেলে আমি ছবির ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসর। আর আমি যাঁকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তিনি অমিতাভ বচ্চন।

উনি আমার উপর বিশ্বাস রেখেই এই ছবিতে কাজ করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। এটা ভেবে আমি খুশি যে উনি জানেন সুজিত যখন বলেছে, তখন নিশ্চয়ই কিছু স্পেশাল আছে ছবিতে,’’ বলেন ‘ভিকি ডোনর’, ‘ম্যাড্রাস কাফে’-র পরিচালক।

সুজিতও মনে করিয়ে দেন, এই ছবি এমন একটা সোশ্যাল ইস্যু নিয়ে যেটা গোটা দেশে এই মুহূর্তে অসম্ভব প্রাসঙ্গিক।

‘‘আমি শুধু ছবি প্রযোজনা করব বলে প্রযোজনা করি না। আমার কাছে ফিল্মে সোশ্যাল মেসেজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’‌য়েও তাই ছিল। এ বারেও তাই। আর টোনি আমায় যখন গল্পটা শুনিয়েছিল আমার দারুণ লেগেছিল। আর জানেনই তো আমার একটা দুর্বলতা আছে,
আমি বাংলা এবং বাঙালির জন্য সব কিছু করতে চাই। সেই জন্যই টোনিকে বলি ছবিটা পরিচালনা করতে,’’ বলেন বিসিএল-এর হুগলি হিরোজ টিমের মালিক।

কিন্তু যেখানে টোনি বা সুজিত রয়েছেন, সেখানে বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কই? লোকের তো একটা প্রত্যাশা থাকবে কলকাতার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখার।

প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন সুজিত। ‘‘একটু অপেক্ষা করুন, আমি আপনাদেরই জানাব। যদি সব ঠিকঠাক হয়, তা হলে বাংলা থেকে এমন একজন এই ছবিতে অভিনয় করবে, যাকে আক্ষরিক অর্থে ‘কাস্টিং ক্যু’ বলা হয়,’’ বলে কথা থামান সুজিত।

টোনির সব ছবির মতোই এটাতেও সঙ্গীত পরিচালনা করছেন শান্তনু মৈত্র। গান নিয়ে পরিচালক ও সঙ্গীতকারের চলছে শেষ মিনিটের মিটিং।

যদি প্ল্যান মাফিক সব চলে, তা হলে বুধবার বিকেলেই অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে হোটেলে দেখা করার কথা প্রযোজক-পরিচালকের।

‘‘যা কথা হয়েছে, আমি আর সুজিত বুধবার বিকেলেই ফাইনালি ওঁকে স্ক্রিপ্টটা পড়ে শোনাব। ওঁর ইনপুটস নেব। ওঁর লুক-টা নিয়ে নানা ভাবনাচিন্তা রয়েছে। লন্ডনের একজনকে দিয়ে উইগ বানানোরও কথা চলছে। সব শেষে, আর একটা কথা বলতে চাই। সুজিতের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিছু হয়তো পুণ্য করেছি জীবনে। তাই ওর মতো বন্ধু পেয়েছি। এখন শুধু মন দিয়ে ছবিটা বানাতে চাইছি,’’ বলেন টোনি।

কিন্তু টোনি কি একবারও ভেবেছেন কী হবে ওঁর প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ে?

যে ছ’ফুট দুই ইঞ্চির মানুষটাকে পশ্চিম পুঁটিয়ারির টোনি বসুশ্রী হলে দেখতে যেতেন, তাঁকে পরিচালনা করার দায়িত্ব এ বার তাঁর কাঁধে। ভয় লাগছে?

‘‘‘পিকু’ ছবিতে একটা সিন করতে গিয়ে কী অবস্থা হয়েছিল আমি জানি। হি ইজ গড। তবে এখনই প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ের কথা নিয়ে ভাবতে চাই না। ওগুলো ভাবলে প্রেশার বাড়বে। বললাম না, ‘স্যর’‌য়ের সঙ্গে ফুল কনসেনট্রেশন রেখে একটা দারুণ কাজ করতে চাই জীবনে,’’ বলেই আর এক কাপ কফি আনান টোনি। ‘‘সঙ্গে একটা হ্যাম স্যান্ডউইচ বলি? ওহ্, সরি, আমি তো এখন প্রায় ভেজিটেরিয়ান,’’ বলে হেসে ওঠেন অমিতাভ বচ্চনের নতুন বাঙালি পরিচালক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE