Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘জীবনে প্রচুর রিস্ক নিয়েছি’

কাজ নিয়ে অভিযোগ করতে ভালবাসেন না। বরং তিনি সমাধান খোঁজেন। তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েও হাল ছাড়েননি ঋতাভরী চক্রবর্তীকাজ নিয়ে অভিযোগ করতে ভালবাসেন না। বরং তিনি সমাধান খোঁজেন। তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েও হাল ছাড়েননি ঋতাভরী চক্রবর্তী

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

প্র: প্রথম হিন্দি ছবি ‘পরি’ মুক্তির অপেক্ষায়। কী রকম লাগছে?

উ: যে ভাবে সব কিছু এগোচ্ছে, তাতে আমি খুব খুশি। গত বছরও পরিবারে কিছু সেট ব্যাক গিয়েছে। ‘পরি’র লুক সেটের জন্য মুম্বই গিয়েছি ধুম জ্বর নিয়ে। আসলে ছবিটা সই করায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল আমার লুক। আমাকে দেখতে যেন পরম আর অনুষ্কার বয়সি লাগে। তখন আমি নিজে মুম্বই গিয়ে অডিশন দিয়েছিলাম। ওরা বলেছিল, চরিত্রটা বাঙালি মেয়ের। এক মাস পর কলকাতায় আসবে অডিশন নিতে। কিন্তু এক মাস অপেক্ষা করা যায় বলুন? তার পর লুক সেটের জন্য গেলাম। দু’দিন পর থেকে শুটিং শুরু হল। আসলে আমরা কী পারি, কী পারি না, তার সবটা আমাদের মাথার মধ্যে। যখন টিভিতে কাজ করতাম, তখন হিন্দি ছবিতে কাজ করতে চাই বললে লোকে হাসত। গুরুত্বপূর্ণ হল, আমি নিজেকে কোথায় দেখছি। ‘নেকেড’ যখন প্রোডিউস করি আমার লসও হতে পারত। কিন্তু ওটা না করলে হয়তো ‘পরি’র কলটা আসত না।

প্র: ছবিতে আপনার ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের চুম্বন দৃশ্য রয়েছে। আবার অনুষ্কা শর্মাও তাঁর বুকে মাথা রাখছেন। তার মানে কি ছবিটা ত্রিকোণ প্রেমের গল্প?

উ: ছবির গল্প বা আমার চরিত্রটা নিয়ে ছবি রিলিজ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলার অনুমতি নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি দু’জনের সঙ্গেই স্ক্রিন শেয়ার করেছি।

প্র: ট্রেলারে তো আপনাকে মাত্র এক ঝলক দেখা যাচ্ছে। ছবিতে আপনার চরিত্রের গুরুত্ব কতটা?

উ: অবশ্যই অনুষ্কা ‘পরি’র সবচেয়ে বড় স্টার এবং ওর চরিত্রটাই বেশি ইন্টারেস্টিং। কিন্তু এটা যেহেতু হরর ফিল্ম, তাই প্রোমোতে সেটুকুই দেখানো হয়েছে, যা দেখে দর্শকের কৌতূহল জন্মাবে। তবে খুশি যে, আমার বলিউড ডেবিউ এমন ছবিতে হচ্ছে, যেখানে পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছি।

প্র: শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি আরও একটা হিন্দি ছবি করছেন?

উ: (হাসতে হাসতে) আমার ব্যাগে বাংলাও আছে, হিন্দিও আছে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘খেলেছি আজগুবি’ ছবিটা করছি। ফুটবল নিয়ে গল্প। আমার বিপরীতে পরমই আছে। এখানে আমার চরিত্রটা খুব মিষ্টি, যেমনটা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’তে ছিল। হিন্দি ছবির নাম বলতে পারব না। সেখানে আমার চরিত্রটা ছোট শহর থেকে আসা এক মরাঠি মেয়ের। রুক্ষ, রুগ্‌ণ চেহারা। সে একজন স্টাইলিস্টকে শুটিংয়ে অ্যাসিস্ট করে। তবে ওই চেহারাটা তৈরি করার জন্য ওরা আমাকে মাত্র তিন সপ্তাহ সময় দিচ্ছে। ফিজিক্যালি তো চাপ পড়বেই। মা বলছে, ‘এই তো সবে ‘পরি’ রিলিজ করবে, নানা জায়গায় যাওয়া, ফোটোশুট... এই সময় পাটকাঠির মতো শুকনো না হলেই নয়?’ ওরা শুধু বলেছিল, চরিত্রটার নিরিখে আমি একটু বেশি লম্বা। তাই আলোচনা চলছে, ওজন বেশি না কমিয়ে, মেকআপ বা ক্যামেরার মাধ্যমে যদি কিছু করা যায়। আশা করছি, মার্চেই হয়তো দুটো ছবিতে হাত দিতে পারব। তার পর মায়ের ছবিও আছে। এ ছবির নায়িকা মুম্বইয়ের এক অভিনেত্রী।

প্র: শর্টফিল্ম ‘নেকেড টু’-ও নাকি প্ল্যান করছেন?

উ: হ্যাঁ। এ বার সানি লিওনির সঙ্গে কথা বলেছি। ওর স্ক্রিপ্ট ভাল লেগেছে, মে মাসে ও ডেট দিতে পারবে। এ সবের সঙ্গে অ্যাড প্রোডিউস করেছি প্রচুর, মডেল হিসেবে কাজ... রোজগার তো করতে হবে। শর্ট ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখেছি। একটা তো আমি আর সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) দু’জনে মিলে ভেবেছিলাম। আমার দায়িত্ব ছিল, গল্পটা লিখে ফেলার। গল্পটা পড়ে সৃজিত বলল, ‘এটা দিস না। বেশি-ই ভাল হয়ে গিয়েছে। পরে ছবি করিস।’ আলটিমেটলি ওটা আর দিইনি। শর্ট ফিল্ম বানাব। ওকে ক্রেডিটও দেব (হাসি)।

প্র: ঋতাভরীর ফেসবুক প্রোফাইল বলে, তিনি বোল্ড। মানুষ ঋতাভরী কতটা সাহসী?

উ: জীবনকে দেখার দুটো দিক আছে। অনেকেই আছেন কাজ করলেও তাঁরা কিছুতেই খুশি নন। আমার মধ্যে ওই ঘ্যানঘ্যানানি নেই। আমার অনেক স্বপ্ন... ভাল অভিনেত্রী হওয়া, প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করা, কোনও দিন পরিচালক হিসেবেও নিজেকে দেখতে চাই। তার জন্য আমি সারা দিন খাটছি। এক সময় কী ভাবে কেরিয়ার গড়ব, তার উপদেশ নিতে গিয়ে পুরো ঘেঁটে গিয়েছিলাম। তখন বুঝলাম, অ্যাডভাইস না নিয়ে আমি এগোই। ভুল হলে, সেটা নিজের ভুল। জীবনে যে কত রিস্ক নিয়েছি, সেটা এখানে বলে শেষ করতে পারব না। আমার জন্য এটাই বোল্ড।

প্র: অনেকে বলেন, ঋতাভরী নাকি মুম্বইয়ে দারুণ পিআর কর়ছেন!

উ: (হা হা হা) সব নিন্দুককে ধন্যবাদ! মুম্বইয়ের কিছু যোগাযোগ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বলিউড ইন্ডাস্ট্রিটা বিরাট, কলকাতাতেই কত লোকের সঙ্গে এখনও আলাপ হয়নি! মুম্বইয়ে সুবিধেটা হল, অডিশন দিতে হয়। অনেকটা পরীক্ষার মতো। এখন কেউ যদি পরীক্ষককে চোখ মেরে সাকসেসফুল হন, সেটা আলাদা। পুরো দুনিয়াটাই কালো আর সাদায় ভরা।

প্র: মনে হচ্ছে, সেই কালো দিকটা দেখেছেন?

উ: হ্যাঁ, সেটা কলকাতা, মুম্বই দু’ জায়গাতেই। মুম্বইয়ে একটা বড় প্রোডাকশন হাউসের ছবির জন্য শর্ট লিস্টেড হয়েছিলাম। প্রোডিউসার একদিন মিটিংয়ের জন্য ডাকেন। গিয়ে দেখি, তিনি শর্টস পরে বসে খেলা দেখছেন। একটু পরে রুমে আর একটি মেয়ে এল। সে কথা বলতে বলতে ক্রমশ প্রযোজকের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বুঝলাম, আমাদের মধ্যে যে প্রযোজকের আই ক্যান্ডি হতে পারবে, তাকেই উনি কাজটা দেবেন। বুঝেছিলাম, এখান থেকে চলে গেলে এই প্রোডাকশন হাউস থেকে চিরতরে বাদ পড়ে যাব। কিন্তু নিজের ডিগনিটি রক্ষার্থে ওখান থেকে বেরিয়ে আসি। তবে সব প্রযোজক এ রকম নন। এ ধরনের ঘটনা অন্য পেশাতেও ঘটে। তার মধ্য থেকেই মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ritabhari Chakraborty interview Actress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE