Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সেক্সি ড্রেস পরলেই গায়িকা হওয়া যায় না

গানের জন্য মেদ ঝরাতে নারাজ। মনে করেন গলায় কোনও বিশেষত্ব না থাকলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে টেকা শক্ত। আকৃতি কক্কর কলকাতায় ঝটিতি সফরে এসে কথা বললেন আনন্দ প্লাসের সঙ্গেআজকের দর্শক কিন্তু বোকা নন। তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী গান না গাইলে মঞ্চ থেকে সোজা নামিয়ে দেবেন। একটা সেক্সি পোশাক পরে মঞ্চে উঠলাম, অথচ গান গাইতে পারলাম না। লাভ কী!

কলকাতায় ঝটিতি সফরে আকৃতি কক্কর।

কলকাতায় ঝটিতি সফরে আকৃতি কক্কর।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০০:৫৮
Share: Save:

প্র: আপনি এত সুন্দর দেখতে!

উ: থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু এর সঙ্গে সুরে গান গাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

প্র: কে বলল? কলকাতায় আপনার স্টেজ শোয়ে তো দারুণ ফিটেড পোশাকে গান করেন…

উ: দাঁড়ান দাঁড়ান। আজ যদি হৃতিক রোশনকে মঞ্চে গান গাইতে বলা হয়, শুনবে লোকে? ও তো এত ভাল দেখতে! আজকের দর্শক কিন্তু বোকা নন। তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী গান না গাইলে মঞ্চ থেকে সোজা নামিয়ে দেবেন। একটা সেক্সি পোশাক পরে মঞ্চে উঠলাম, অথচ গান গাইতে পারলাম না। লাভ কী! জানেন কত লোকে বলে, মোটা হয়ে যাচ্ছ, রোগা হও। কেন হব বলুন তো? আমি খেতে ভীষণ ভালবাসি। বাড়িতে তো বাঙালি কুকের দৌলতে এখন হয় ঝিঙে পোস্ত নয় মোচার ঘণ্ট, সর্ষে মাছ খাচ্ছি। আর খাবও! এই সমস্ত খেয়েই সিম্পল একটা কুর্তা পরেও যদি সুর লাগাতে পারি, দর্শককে ছুঁয়ে যাবে সেটা। গানের দুনিয়া বদলে গিয়েছে।

প্র: কী রকম?

উ: একটু পিছনে তাকাতে হবে। আমি দিল্লিতে বড় হয়েছি। পঞ্জাবি মধ্যবিত্ত পরিবারে। ক্লাস ইলেভেনে আমি দিল্লিতে লাইভ কনসার্ট করা শুরু করি। ধরুন, মুম্বইয়ের বড় কোনও শিল্পী পারফর্ম করবেন। তার আগে মিনিট কুড়ির জন্য আমাকে পারফর্ম করার সুযোগ দেওয়া হতো। আমাকে ট্র্যাকে গাইতে হতো কারণ ব্যান্ডের জন্য বাজেট থাকত না। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ের গানে ইনভেস্ট করার মতো অত টাকা কোথায়? এই শোগুলিতে কে কে, মিকা, শঙ্কর মহাদেবন, বিশাল-শেখরের মতো বড় মাপের শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমি সঙ্গে-সঙ্গে ওঁদের মোবাইল নম্বর নিয়ে নিতাম। ভাবতাম যদি কখনও মুম্বই যাওয়ার সুযোগ হয়, তা হলে ওঁদের সঙ্গে একবার দেখা করার চেষ্টা করব। ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষার আগে বাবা আমার সামনে একটি শর্ত রাখেন। যদি আমি ভাল রেজাল্ট করি, তা হলে আমাকে মুম্বই নিয়ে যাবেন। আমি আর্টসের ছাত্রী ছিলাম। ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম! সে বছর আর্টসে আমি দিল্লির মধ্যে প্রথম হই। বাবা কথা রেখেছিলেন। মাস ছয়েকের জন্য ব্যবসা গুটিয়ে আমাকে মুম্বই নিয়ে যান। যে সেলেব্রিটি সিঙ্গারদের নম্বর ছিল, ওখানে গিয়ে সবাইকে ফোন করতাম। কারও ফোন পেয়ে গেলে ভাবতাম, লটারি লেগে গেল।

প্র: প্রথম ব্রেক কবে?

উ: বিশাল-শেখরের হাত ধরে। ‘দশ’ ছবিতে একটি গানে আমি কিছুটা অংশ গাই। তার পর আর সমস্যা হয়নি। এ দিকে টলিউডে হাতেখড়ি হয় জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ওঁর স্ত্রী চন্দ্রাণী আমার গান শোনেন এবং জিতদা’র কাছে রেফার করেন। আমি ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু এত কিছুর পর আজও খুব শক্ত করে মাটি আঁকড়ে থাকতে হয়। এখন যে কেউ মোবাইলে গান রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিম-সুলেমান, বিশাল ভরদ্বাজকে ট্যাগ করে আপলোড করে দিতে পারে। এতটাই সুবিধে। রিয়্যালিটি শো আছে। কেউ চাইলে হিমেশ রেশম্মিয়ার সামনে গান শোনাতে পারে। কত সুযোগ! কিন্তু প্রতিযোগিতা অনেক। গলায় বিশেষত্ব না থাকলে কেউ টিকতে পারবে না।

প্র: তা হলে রিয়্যালিটি শো হয়ে সুবিধেই হয়েছে বলছেন?

উ: অবশ্যই। কলকাতার ছেলে জাতীয় স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। এটা কম কী? তবে সব ধারার গান গাইতে হবে। লেগে থাকতে হবে।

প্র: এখন তো কেবল বিটের গান…

উ: না। বিটের গানের চল বেশি। কিন্তু লোকে মনে রাখে মেলোডি। ধরুন ‘লভ আজ কাল’ ছবির গান ‘আজ দিন চাড়েহা’ সবাই আজও মনে রেখেছে। কারণ মেলোডি। কই ওই ছবির অন্য গান তো কেউ মনে রাখেনি!

আরও পড়ুন: ছোট পরদার হার্টথ্রব

প্র: বলা হচ্ছে, মেলোডি দিয়ে আপনি টলিউডের গায়িকাদের ভাত মারছেন!

উ: এ বাবা! একেবারেই নয়। কলকাতার একটা টান আছে। বিশেষ করে এখানকার সংস্কৃতি জগৎ। খুব ভাল লাগে গাইতে। আমি এখানে ‘কমরেড’-এ সুরজিৎদার সঙ্গে কাজ করলাম। এই ছবিতে নচিকেতা চক্রবর্তী আর শানও গেয়েছেন। জয়দার (সরকার) সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছিল। এত গুণী শিল্পী! তবে আমি অনুপম রায় আর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর সঙ্গেও কাজ করতে চাই। মুম্বইয়ে যেমন অপেক্ষায় আছি ইলায়ারাজা, রহমানজি’র ডাক পাওয়ার জন্য। আর আমি দেখেছি, আমার গলা শুভশ্রীর সঙ্গে ভাল যায়। ‘নবাব’ ছবিতে ‘ষোলোয়ানা’ গেয়ে খুব মজা পেয়েছি। দেব, যিশু, কোয়েল আমার খুব প্রিয় অভিনেতা। মুম্বইয়ে যেমন আলিয়া, করিনা, ক্যাটরিনা। এ ভাবেই চলছে। আর কী?

প্র: বিয়ের জন্য কেরিয়ারে কোনও অ্যাডজাস্টমেন্ট…

উ: আমার স্বামী চিরাগ অরোরা পরিচালক। তাই সুবিধেই হয়েছে। সময় পেলে আমার কনসার্টেও আসে। আর আমার পুরুষ ফ্যান ফলোয়িং নিয়েও ওর কোনও সমস্যা নেই (হাসি)।

প্র: নিজে গান লিখে, সুর দিয়ে বেনি দয়ালের সঙ্গে গাইলেন। কিন্তু এখন তো প্রাইভেট অ্যালবামের বাজার নেই!

উ: তাতে কী! ইন্টারনেট আছে তো! তবে পাইরেসি বন্ধ করতে হবে। চাইলেই কিন্তু সব হয়। এনার্জি আর গান দুটোকে এমন ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে যাতে দর্শকও নিজের অনুভূতি আমার গানেই খুঁজে পায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE