Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি পারব না

মোনালিসা গেস্ট হাউজ? নেই। ইন্সপেক্টর রানা? না, নেই। বিদ্যা আছেন। তবে ‘বাগচী’ নন। ‘কহানি ২’য়ের শ্যুটিংয়ের মাঝে এই প্রথম মুখ খুললেন সুজয় ঘোষ। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।সকাল থেকে ভিজতে ভিজতে হাওড়ার আন্দুল রোডে লোকেশন খুঁজে বেড়িয়েছেন। বিকেল চারটের সময় পূর্ণদাস রোডের কাফেতে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে অর্ডার করলেন চিকেন বার্গার।

‘কহানি ২’ ছবির শ্যুটিংয়ে বিদ্যা বালন-সুজয় ঘোষ

‘কহানি ২’ ছবির শ্যুটিংয়ে বিদ্যা বালন-সুজয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০০:৩২
Share: Save:

সকাল থেকে ভিজতে ভিজতে হাওড়ার আন্দুল রোডে লোকেশন খুঁজে বেড়িয়েছেন। বিকেল চারটের সময় পূর্ণদাস রোডের কাফেতে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে অর্ডার করলেন চিকেন বার্গার। শুরু হল আড্ডা…

যে প্রশ্নগুলো লোকের মনে আসবেই সেগুলো জিজ্ঞেস করছি। প্লিজ অনেস্টলি উত্তর দেবেন।

বলুন, বলুন...

বিদ্যা বাগচী কলকাতায় আবার কোনও কেস সল্ভ করতে ফিরছেন। তাই তো?

বিদ্যা ফিরেছেন। বাগচী ফিরেছেন কিনা বলতে পারব না। তিনি ফিরিতেছেন, কেস সলভ করিতেছেন এবং চলিয়া যাইতেছেন।

বব বিশ্বাস মারা গেছেন। তার ভূত কি ফিরছে?

(হাসি) না, বব বিশ্বাস ফিরছেন না।

মিলিন্দ দামজিও তো মারা গিয়েছিলেন।

ইয়েস। নো মিলিন্দ দামজি।

মোনালিসা গেস্ট হাউজ থাকছে?

এটা নতুন গল্প। মোনালিসা থাকছে না।

‘কহানি’র সিকোয়েল অথচ মোনালিসা থাকবে না?

‘কহানি থ্রি’তে সব থাকবে। ‘কহানি টু’ তে এরা নেই।

তার মানে ‘কহানি’ ‘একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি- ‘ব্যোমকেশ’, ‘ফেলুদা’র মতো...

ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যাপারটা কিন্তু চাপের। আগে সেকেন্ড ছবিটা উতরোক। তারপর ভাবা যাবে।

খরাজ মুখোপাধ্যায় থাকছেন?

(হেসে) ইয়েস। খরাজদা আছেন। নিত্যদা আছেন।

ইন্সপেকটর রানা নেই, খানও নেই?

আনন্দplusয়েই তো দেখলাম ইন্সপেক্টর রানা শর্টস পরে মায়ামি বিচে রাইমা সেনের সঙ্গে বসে রয়েছেন। না, পরম নেই। নওয়াজও নেই। এটায় অর্জুন রামপাল আছে। টোটা আছে। ‘কহানি ২’ শুরুর আগে পরম আমায় হোয়াটসঅ্যাপ করেছিল ‘‘আমি কই’’ বলে। আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম এই ছবিতে সত্যি সেই রকম চরিত্র ছিল না যেটা ওর প্রতি জাস্টিস করবে।

আর নওয়াজ ‘কহানি ২’ তে নেই। কিন্তু আমার প্রযোজিত ছবি ‘তিন’য়ে আছে। খুব ইচ্ছে ছিল পরাণদাকে কাস্ট করব। কিন্তু পরাণদা যা ব্যস্ত, ডেট পাওয়া গেল না...

‘তিন’ ছবির শ্যুটিংয়ে সুজয়-বিদ্যা

আপনি কলকাতা থেকে শুধু পুরুষ অভিনেতাদেরই নেন, আপনার ছবিতে টালিগঞ্জের কোনও অভিনেত্রীকে তো দেখি না?

ছবিতে অভিনেত্রী একজনই। বিদ্যা, বিদ্যা এবং বিদ্যা।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে কখনও নেওয়ার কথা ভাবেননি?

ভেবেছি তো। কিন্তু আমার কাছে মিস্টার বচ্চন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় — এঁরা হলেন হিরো। নায়ক। ক্যারেক্টার রোল ওঁদের আমি দিতে পারব না। এটায় লাল পাড় শাড়ি থাকবে ? (হাসি) অন্য পাড়ের শাড়ি থাকবে, এটা শিওর।

ক্লাইম্যাক্সে দুর্গা পূজা?

না, দুর্গা পূজা নেই।

‘একলা চলো রে’র মতো রবীন্দ্রসঙ্গীত?

গান আমার ওই একই থাকবে। আর ডি বর্মন, রবীন্দ্রসঙ্গীত।

অমিতাভ বচ্চন গাইবেন ?

এখনও বলিনি ওঁকে। ইনফ্যাক্ট মিউজিক নিয়ে বসতে হবে। কোন রবীন্দ্রসঙ্গীত থাকবে সেটা ঠিক করতে হবে। আর দেখুন মিস্টার বচ্চনদের মতো আর্টিস্টদের একটা ছন্দ থাকে। সেই ছন্দে পড়তে হবে পুরো প্ল্যানটা। জাস্ট গাওয়াতে হবে বলে গাইয়ে তো কোনও লাভ নেই।

একটা ব্যাপার ভেবে দেখেছেন! এই পাঁচ বছর আপনি কোনও ছবি করেননি। বিদ্যারও কিন্তু সেই রকম কোনও হিট নেই।

এটা পিওরলি কোইন্সিডেন্টাল। চারটে ছবি করেছে তো বিদ্যা...

চলেনি তো একটাও...

আরে সব ছবি চলতে হয় নাকি?

এটা কোনও কথা হল!

কালকে তো ‘কহানি টু’ও না চলতে পারে। না চললে খারাপ লাগবে কিন্তু ইউ উইল হ্যাভ টু মুভ অন। আর বিদ্যা আর আমার মাঝখানে...

বিদ্যা আনন্দplus-কে বলছিলেন আপনারা নাকি দু’বছর কথা বলেননি...

কারেক্ট। দু’বছর কথা হয়নি। আজকে ফিরে তাকালে মনে হয়, মনোমালিন্য একটু হওয়া ভাল। তার পর একদিন একটা ক্যাফেতে দেখা হয় আমাদের...

আইস-ব্রেক করলেন কে?

বিদ্যাই। ক্যাফেতেই কথা হল। সে দিন একবারের জন্যও মনে হয়নি যে দু’বছর আমরা কথা বলিনি।

আপনাদের তো ‘দুর্গা রানি সিংহ’ বলে একটা ছবি করার কথা ছিল। সেটা কি শেলভড?

ওই নামটা ব্যবহার করতে চাই। কিন্তু ওই গল্পটা আর করব কিনা জানি না।

আজকে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় রণবীরের সঙ্গে কাজ করছেন। কলকাতার বিভিন্ন অভিনেতা বড় বড় ব্যানারের হিন্দি কাজ করছে। এই পথটা আপনি দেখিয়েছিলেন। এটা ভাবলে কেমন লাগে?

না না, আমি পথ দেখাইনি।

দয়া করে এত বিনয়ী-বিনয়ী ইন্টারভিউ দেবেন না। আপনি না দেখালে কেউ জানত শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মতো এত ভাল একজন অভিনেতা আছেন এ দেশে?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যে মানের অভিনেতা, আমি না হলে অন্য কোনও ডিরেক্টর ঠিক খুঁজে বের করত অপুকে।

অভিনেতাদের পথ দেখানোর থেকে যেটা আমার বেশি ভাল লাগে সেটা হল, বলিউড ক্রমশ বাংলা ছবি নিয়ে ইন্টারেস্টেড হয়ে উঠছে। ‘রাজকাহিনি’র হিন্দি হচ্ছে। ‘বেলাশেষে’র কথা চলছে। অরিন্দম শীলের ‘হর হর ব্যোমকেশ’ শুনছি হিন্দিতে হতে পারে। ‘সিনেমাওয়ালা’, ‘প্রাক্তন’ নিয়ে কথা হচ্ছে। এটা খুব পজিটিভ সাইন।

আপনাকে একটা প্রশ্ন করতেই হবে। প্রায়ই শুনি কথাটা যে মিস্টার বচ্চনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য সুজিত সরকারের সঙ্গে আপনার নাকি একটা চাপা কম্পিটিশন সবসময় চলে। কতটা ঠিক সেটা...

না না কোনও কম্পিটিশন নেই। আমি তো ‘পিকু’ দেখে আপনাকেই আনন্দplus-এর এক ইন্টারভিউতে বলেছিলাম ‘বন্ধু বোধহয় বছরের সেরা ছবিটা বানিয়ে ফেলেছে।’ হল তো তাই, পিকু ওয়াজ দ্য বেস্ট ফিল্ম অব দ্য ইয়ার। কোনও কম্পিটিশন নেই।

এখন তো সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও ছবি করছেন বিদ্যার সঙ্গে।

ভেরি গুড।

অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীও অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করছেন।

হ্যাঁ, শ্যুটিংয়ের আগে এক বার দেখা হয়েছিল। তখন টোনি খুব টেনশনে ছিল। প্রথম হিন্দি ছবি করার প্রেশারটা কত বড় আমি জানি...

একটু বিদ্যা বালনে ফিরি। কত বার সেটে ‘দেজা ভ্যু’ হয়েছিল আপনাদের শ্যুটিং চলাকালীন?

অনেক বার। প্রথম দিনের শ্যুটিংয়েই পুরনো ‘কহানি’র সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আগের বার বিদ্যার অভিনয় দেখে সেটে সবাই চমকে যেত। এ বারেরও তাই হয়েছে। মেয়েটা জাস্ট অন্য লেভেলের অভিনেত্রী।

কালিম্পংয়েও তো একটা শিডিউল হয়েছিল আপনাদের?

হ্যাঁ। সেখানে তো যা-তা অবস্থা। সেটে একদিন সব কিছু রেডি। হঠাৎ বিদ্যা এসে বলল, ‘‘আমি এই সিনটা করতে পারব না। আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।” আমি ভাবলাম যেমন ইয়ার্কি মারে তেমনই ইয়ার্কি মারছে বোধহয়। তার পর দেখি অঝোরে কাঁদছে। সিনটাও অসম্ভব শক্ত ছিল। পরে অবশ্য যে অভিনয়টা করল, সেটা মাইন্ড ব্লোয়িং
এটা শক্ত ছবি একটু। আমি যে মেসেজটা দিতে চেয়েছি এই ছবির মধ্যে দিয়ে সেটা দর্শক বুঝলে আমি সবচেয়ে খুশি হব। না বুঝলে, বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে হাঁটা দিতে হবে। (হাসি)

‘কহানি ২’‌য়ের আগে তো আপনার প্রযোজিত ‘তিন’ মুক্তি পাবে।

হ্যাঁ, ‘তিন’ নিয়ে আমি খুব এক্সাইটেড। পরিচালক ঋভু দাশগুপ্ত হ্যাজ বিন ফ্যানটাস্টিক। বিদ্যা একটা ছোট রোলে আছে। নওয়াজ দারুণ কাজ করেছে। আর বড়বাবু তো আছেনই।

বড়বাবু মানে অমিতাভ বচ্চন?

ইয়েস। একটা কথা তা হলে বলেই দিই। হাঁড়িকাঠে মাথা রাখলাম। ইদানীংকালের বড়বাবুর বেস্ট পারফর্ম্যান্স দেখা যাবে ‘তিন’‌য়ে। কী করে যে উনি করেন কে জানে!

‘পিকু’র থেকেও ভাল?

‘পিকু’ অন্য ধরনের ছবি। তা হলে তো ‘কালা পাত্থর’ কী ‘দিওয়ার’‌য়ের সঙ্গেও তুলনা করতে হয়। কিন্তু তা ছাড়া ‘তিন’ ইজ মিস্টার বচ্চন’স বেস্ট পারফর্ম্যান্স।

এখন তা হলে ‘কহানি’র শ্যুটিং শেষ করে পোস্ট প্রোডাকশন আর ‘তিন’ রিলিজ করা — এই আপনার কাজ?

ইয়েস, দু’টোই বড় কাজ। এ ছাড়া আমার ছেলেমেয়ে আমাকে ব্যস্ত রাখে। হুমমম... একটা জিনিস ভাবছি জানেন...

কী?

বলেই দিই। অগস্ট মাসে আমার শর্ট ফিল্ম ‘অহল্যা’র সিকুয়েল করছি। এই পাঁচ বছরে ‘অহল্যা’র মতো রেসপন্স আমি অন্য কিছুতে পাইনি। ‘অহল্যা’ ওয়াজ সুপারহিট।

এটা তো বড় খবর...

হ্যাঁ, ওই গল্পের মধ্যেই আর একটা চরিত্র ঢুকবে। সেম কাস্ট। সৌমিত্রবাবু, টোটা, রাধিকা আপ্তে আর নতুন একজন।

ইন্টারভিউ শেষ করে কি সেই মেট্রোপোল হোটেলের ৩০২ নম্বর ঘরে ফিরে যাবেন?

হ্যাঁ, কলকাতায় এলে ওটাই তো আমার ঠিকানা। রুম নম্বর ৩০২। পাশে মোনালিসা গেস্ট হাউজ। একটা রহস্য রহস্য ব্যাপার আছে না?

হ্যাঁ।

আর রহস্যে ভয় পাই না। বিদ্যা ঠিক সল্ভ করে দেবে…

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sujoy Ghosh interview Kahani 2 MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE