Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিবি হয়ে ডেবিউ করলাম নেগেটিভে

চৈতী ঘোষাল ডেবিউ করলেন গ্রে শেডের চরিত্রে এবং পরিচালক হিসেবে চৈতী ঘোষাল ডেবিউ করলেন গ্রে শেডের চরিত্রে এবং পরিচালক হিসেবে

ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক

ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০০:৩৭
Share: Save:

দুপুর ১২টা, তাঁর গল্ফ গার্ডেনের ফ্ল্যাটে বেল বাজানোর আগেই দরজা খুলে দিলেন চৈতী ঘোষাল। একরাশ হাসি ছড়িয়ে বললেন, ‘‘দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ পেলাম। তাই...’’

গত রাতে ২টো অবধি শ্যুটিং করছেন তিনি। চৈতীর চোখে তখনও ঘুমের ছায়া। প্রায় দু’-আড়াই বছর পর মেগা সিরিয়ালে প্রত্যাবর্তন করেছেন চৈতী। টানা মেগা সিরিয়ালে কাজ করতে-করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তাই কিছু দিনের বিরতি। তিনি ছুটির মেজাজে থাকলেও তাঁর কাছে কাজের অফার এসেছে বিস্তর। প্রতিবারই ‘না’ বলেছেন। তা হলে ‘জামাই রাজা’য় কী এমন হল যে, তিনি ফেরাতে পারলেন না? ‘‘আমার এই মুহূর্তে যা আর্থিক পরিকাঠামো তাতে দুধেভাতে চলে যায়। তাই শুধু অর্থের কারণে ফিরে আসিনি। বলতে পারেন, দর্শকের চাহিদা ও নিজের অভিনয়-ইচ্ছের তাড়নায় আবার ফিরে এলাম। দু’বছরে যত চরিত্রের প্রস্তাব পেয়েছি, সব করে ফেলেছি। ‘জামাই রাজা’র বিবি আমার কাছে নতুন। এই প্রথম কোনও গ্রে শেডের চরিত্রে কাজ করছি,’’ বললেন চৈতী।

এক দিকে গৌতম হালদারের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক ‘রক্তকরবী’র নন্দিনী, অন্য দিকে ‘জামাই রাজা’র দজ্জাল মা! ক্ল্যাশ ও ক্লাস এই দুটো শব্দকে কী ভাবে ম্যানেজ করছেন? ‘‘বাহ্‌! ক্ল্যাশ ও ক্লাস! অনেক দিন পর একটা ভাল প্রশ্ন।’’ মন্তব্য
করে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন চৈতী। প্রতিবেদকের পছন্দ জেনে নিজের হাতে চা করে আনলেন। পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার কাজই তো ‘ক্লাস’ শব্দ মুছে দেওয়া। নাইন-টেনে পড়ার সময় প্রথম নন্দিনী চরিত্রটি করি। এখনও করে যাচ্ছি, এবং সারা জীবনই করে যেতে চাই। বিবি-নন্দিনী দুটো দিকে ফিডব্যাক ভাল। ক্ল্যাশ তো এখনও হয়নি।’’ কিন্তু নন্দিনী যাঁদের মুগ্ধ করেছে, মেগার চড়া অভিনয়ের জন্য তাঁদের সমালোচনা শুনতে হয়নি? ‘‘বহুবার। যখন ‘এক আকাশের নীচে’ করেছি, তখন কিন্তু দেখেছি, ‘এক আকাশ...’ আর ‘রক্তকরবী’র দর্শক মোটামুটি এক। এর পর মেগার রূপটা বদলেছে, ন্যাচারাল অ্যাক্টিং করার জায়গাটা বদলেছে। আমি একজন প্র্যাকটিসিং অ্যাক্টর, প্রফেশনও অভিনয়। যদি কোনও একটা বিশেষ গণ্ডিতে নিজেকে আটকে ফেলি, তা হলে তো সফল হব না।’’

আরও পড়ুন:

ছোট পরদার তিন হার্টথ্রবের গল্প...

দু’বছরের বিরতিতে নাটক পরিচালনায় হাতেখড়ি করে তিনি বেশ তৃপ্ত। এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেন ওয়েস্ট বেঙ্গল আর্টিস ফোরামকে। যাঁদের উদ্যোগে কয়েক জন নতুন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সুন্দর’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিলেন। প্রশংসিত এবং পুরস্কৃতও হয়। সফলতা তাঁর খিদেটা বাড়িয়ে দেয়। ‘‘অফবিট নামে বাবার (শ্যামল ঘোষাল) একটা নাটকের দল ছিল। দলটা বন্ধ হয়ে যায়। ওটা রিভাইভ করি ‘সুন্দর’ নাটকটি দিয়েই। পাশাপাশি ‘মিলেনিয়াম ম্যামস’ নামে একটি ফিনানসিয়াল দলের উদ্যোগে থিয়েটার থেরাপি শুরু করেছি বেশ কিছু অবাঙালি মহিলাকে নিয়ে, যাঁরা জানতেনই না থিয়েটার খায় না মাথায় দেয়। আমরা প্রথম মঞ্চস্থ করেছি হিন্দি নাটক ‘ভার্জিন মেরি’। আমার ইচ্ছে আছে স্পেশ্যাল চাইল্ড ও প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে থিয়েটার থেরাপি করার।’’

থিয়েটার, সিরিয়ালের বাইরে তাঁর আর একটা ক্ষেত্র সিনেমা। ইতিমধ্যে তিনি অভিনয় করেছেন একটি হিন্দি ছবিতেও। মিতালী ঘোষাল পরিচালিত ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ড’-এ তাঁর সঙ্গে অভিনয় করছেন তাঁর ছেলে অমর্ত্যও। অমর্ত্যর এটা ডেবিউ ফিল্ম। ইঞ্জিনিয়ার ছেলে মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়েছে স্রেফ অভিনয় ও মিউজিকের টানে। ছেলের এই সিদ্ধান্তে বিন্দুমাত্র আফসোস নেই চৈতীর, বরং আছে সমর্থন। বরুণ সবতি, রজিত কপূর প্রমুখ আছেন এই ছবিতে। তাঁর চরিত্রটি বাঙালি মেয়ের। বারবার কথা প্রসঙ্গে চলে আসছিল ‘টোয়েন্টি টু...’র কথা, বোঝাই যাচ্ছে ছবিটি নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী।

হিন্দি ছবির পর তাঁর হাতে এখন বেশ কিছু ছবি। কিন্তু কমার্শিয়াল বাংলা ছবিতে চৈতীকে দেখা যায় না কেন? ‘‘ডাকে না তাই। আর ওই ধরনের ছবিতে আমার জন্য তো কোনও চরিত্র নেই! দেবের মা হব? দেবের মা-র কি কিছু করার আছে ছবিতে? দেবের বিপরীতে যদি নেগেটিভ চরিত্র পাই, যে সরাসরি দেবের সঙ্গে অ্যাকশন করবে, তা হলে আমি করব। না হলে, অর্থহীন।’’

দু’বছরের ছুটি শেষ, স্বামী ও ছেলে দুজনেই নিজেদের কাজে এখন মুম্বইয়ে। সিরিয়াল, সিনেমার শ্যুটিং, থিয়েটার থেরাপি নিয়ে এখন জমজমাট চৈতীর সংসার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE