নেমসেক?
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘শেষ অঙ্ক’ কিন্তু মোটেই মনে করায়নি ১৯৬৩-র উত্তম-শর্মিলার ‘শেষ অঙ্ক’।
মিল এক জায়গায়।
দুই ছবিতেই হাজির ‘কোর্টরুম ড্রামা’।
শেষ অঙ্ক
৬/১০
পার্নো, দীপঙ্কর, জুন, অরিন্দম
ইদানীং বাংলা সিনেমার প্রত্যেকটা গল্পেই থ্রিলার, সাসপেন্স, খুন, রহস্য দারুণ হিট। এই ছবিও সেই ছকের বাইরে যায়নি। মার্ডার-মিস্ট্রি এ ছবির পটভূমিতে ক্রমেই ঘনিয়ে ওঠে রহস্য। হাজির হয় একের পর এক চরিত্র। পক্ষ-বিপক্ষের উকিলের জোর তরজা, নেশাসক্ত তরুণীর পুলিশ হ্যারাসমেন্ট, কর্পোরেট কালচারের ক্ষয়ে যাওয়া মুহূর্ত— এখনকার ফাস্ট লাইফের সঙ্গে মিল-টা চোখ ছুঁয়ে যায়! ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় রিসার্চটা নেহাত মন্দ করেননি।
বড়লোক বাবার বখাটে ড্রাগখোর মেয়ে রায়না রায়চৌধুরীর চরিত্রে পার্নো মিত্র সাবলীল। বিশেষ করে নেশা করার মুহূর্তগুলো অভিনয় নয়, যেন আসল বলেই ভুল হয়। রায়নার বাবা ঋতব্রত রায়চৌধুরীর চরিত্রে শঙ্কর চক্রবর্তী এবং অমৃতার চরিত্রে জুন মাল্য তারিফযোগ্য। আলাদা করে বলতে হয় অলোকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে অরিন্দম শীলের কথা। নিউজ চ্যানেলের ভিপির চরিত্রে, নিজের সততার প্রতি একনিষ্ঠ অভিনয়ে আরও একবার অরিন্দম প্রমাণ করলেন শুধু পরিচালক নন, অভিনেতা হিসেবেও তাঁর এখনও অনেকটাই দেওয়া বাকি ইন্ডাস্ট্রিকে।
ক্রিমিনাল ল-ইয়ার প্রণয় দাশগুপ্তের চরিত্রে দীপঙ্কর দে বাস্তবের দুঁদে উকিলদের মতোই ব্যাট চালিয়ে গেলেন। মীর এবং তাঁর যুগলবন্দি টানটান রহস্যের মধ্যেও বেশ একটা কমিক রিলিফ দেয়। সমদর্শী দত্ত এসিপি পৃথ্বীরাজ হয়ে ওঠার চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি। কিন্তু ও রকম সুদর্শন চেহারার, স্মার্ট পোশাকআশাকের যুবককে একজন ‘টাফ কপ’-এর চরিত্রে মাঝে মধ্যে কোথাও যেন একটু খাপছাড়া লাগছিল। অপরাধ প্রমাণ হওয়ার ভিডিও ফুটেজ দেখার পর ঋতব্রতর সঙ্গিনী মীনাক্ষী ভট্টাচার্যের চরিত্রে দেবলীনা দত্ত এবং রাজীব মিত্রর চরিত্রে শতাফ ফিগরের অসহায়তার অভিনয় বেশ প্রশংসনীয়।
ছবির সেরা চমক?
প্রাইভেট ডিটেকটিভ জন ব্রিগেঞ্জার চরিত্রে মীর। তবে ফিরোজের চরিত্রটাও বেশ। রায়নাকে ড্রাগ সাপ্লাই করা, হোটেলে নিয়ে তোলা, আবার পুলিশি জেরার মুখে পড়ে নিজের অসহায় আর্থিক অবস্থার স্বীকারোক্তি করা— বেশ সম্ভাবনাময় অভিনয়।
নতুন ধারার বাংলা ছবিতে গান আসে পরিস্থিতি বুঝে। নাইটক্লাবে নেশাসক্ত পরিবেশে উষা উত্থুপের গলায় এই ছবির একমাত্র গান তাই মানিয়েছে বেশ। ছবির আবহসঙ্গীতে স্যাভি। তবে মার্ডার মিস্ট্রি এই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে আবহ সুর মাঝেমধ্যে একটু বেশিই কানে বাজে। শুরু থেকেই এ ছবিকে টানটান বাঁধার চেষ্টা ছিল। শেষের দিকে সেই চেষ্টা অনেকটাই কাজে দিয়েছে।
তবে বেশ কিছু খটকা থেকেই যায়। রাতে গাড়ি চালানোর সময় পাশ থেকে বাইকে দুই যুবক ধাওয়া করে উকিল প্রণয় দাশগুপ্তকে গুলি করে পালিয়ে গেল। উকিলবাবু তার নিরাপত্তা সঙ্কটে জেনেও কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না। বা মীনাক্ষীর হোটেল-ঘরে রুম সার্ভিসের লোক (ছদ্মবেশে মীর) যায় তার প্রয়োজনের জিনিস দিতে। সে অতটা সময় নিয়ে ওই ঘরে থেকে ফুলদানিতে ফুলের মধ্যে গোপন ক্যামেরা ফিট করে। মীনাক্ষী নিজে এত বিচক্ষণ, এত স্মার্ট হয়েও সন্দেহজনক ওই ব্যক্তির আচরণে কিছুই টের পেল না? প্রশ্ন থেকে যায়।
অ্যান্থনি ডি’কোস্টার চরিত্রে পরিচালক তথাগতর ক্যামিও-টিও বেশ। সুজয় দত্তরায়ের সম্পাদনা এবং সুপ্রিয় দত্তর ক্যামেরা ভালই কথা বলেছে। সুন্দর চেহারার মতো শতাফ তাঁর অভিনয়প্রতিভা দেখানোর সুযোগ আরও একটু বেশি পেলে ভাল হত।
মানসিক ভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকা মানুষের অপরাধের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার এই প্রবণতা কেন? সেই বিশ্লেষণে আসার একটা মৌলিক চেষ্টা রয়েছে এ ছবিতে। কিন্তু প্রত্যেক বাক্যে অত ইংরেজির ব্যবহার! শুনে মাঝে মাঝে কেমন যেন একটু ভুল হচ্ছিল। এ কী ফরেন ডায়ালেক্টে রিজিওনাল কোনও ছবি!
বড় পর্দায় প্রথম পরিচালনায় অঙ্কের ঘুঁটি সাজানোয় একটু গোলমাল হতেই পারে। যদিও আশা থেকে যায় অঙ্কের শেষ ভালই মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy